ঢাকা: বলা হয়ে থাকে, প্রজাপতি কোনো স্থানের পরিবেশের প্রকৃতি নির্ণায়ক। অর্থাৎ যে স্থানে প্রজাপতির সংখ্যা বেশি সেখানকার আবহাওয়া ভালো বলেই ধরে নেওয়া হয়।
কিন্তু বিগত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা যতখানি বেড়েছে এবং যে পরিমাণে খরা ও দাবদাহ দেখা দিয়েছে, তাতে এই রঙিন ডানার ছোট প্রাণীটি খুব বেশি ভালো নেই।
মাত্রাতিরিক্ত খরা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রভাব ফেলেছে ব্রিটেনের প্রজাপতির জীবন ও বংশবৃদ্ধির উপর। কারণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, যে কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাই দেশটির ছোট-বড়, সাদা ও স্কিপার প্রজাতির প্রজাপতির সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে।
গবেষকরা দেখেছেন, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতেই দেশটির কয়েকটি স্থান থেকে ছয় প্রজাতির ব্রিটিশ প্রজাপতি আজ প্রায় বিলুপ্ত।
সম্প্রতি ‘জার্নাল নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ার সঙ্গে প্রজাপতিরা খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও, প্রচণ্ড খরায় তাদের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে। ১৭৭৬ ও ১৯৯৫ সালের খরার নথিপত্র বিবেচনা করে দেখা গেছে, ছয় ধরনের প্রজাপতি খরার প্রতি সংবেদনশীল।
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফের এমন খরা দেখা দিলে কী পরিমাণ প্রজাপতি টিকে থাকতে পারবে বা তাদের জীবন কতটা বিপন্ন হতে পারে।
নতুন এ রিসার্চ পেপারের মূল লেখক ‘ইউকে সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রলজির’ ইকোলজিক্যাল মডেলার টম অলিভার জানান, গত দুইশো বছরে ১৯৯৫ সালের মতো খরা হয়েছে মাত্র একবার। যদি কার্বন নির্গমন কম হয় তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে আরও সাতটি এবং নির্গমন বেশি হলে প্রতি বছর একটি করে খরা হতে পারে।
সেক্ষেত্রে প্রজাপতিরা উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের শীতল বা আর্দ্র অঞ্চলে আশ্রয় নিতে পারে বলে জানান অলিভার।
খরায় বিপদগ্রস্ত ছয় প্রজাতির প্রজাপতিগুলো হলো- বড় সাদা (পেইরিস ব্রাসিসি), ছোট সাদা (পেইরিস রাপি), রিংলেট (এফানটোপাস হাইপারেন্টাস), গ্রিন-ভেইন্ট হোয়াইট (পেইরিস নাপি), স্পেকেল্ড উড (প্যারাজে এজেরিয়া) ও বড় স্কিপার (ওকলোডস সিলভানেস)।
ব্রিটেনের ৫০ প্রজাতির প্রজাপতির আবাসভূমি, খাদ্যাভাস বংশবৃদ্ধি এখানকার বনভূমি ও তৃণভূমির উপর নির্ভরশীল। তবে উষ্ণায়নের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে তেমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বনায়ন বাড়ানোর পরও শতাব্দীর শেষভাগে স্থানীয় প্রজাপতির বিলুপ্তি কমানো সম্ভব হয়নি।
অলিভার আরও জানান, ২১০০ সালের মধ্যে প্রজাপতি বাঁচাতে ব্যাপক হারে বায়ুমণ্ডলের কার্বন কমাতে হবে বলে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বাসস্থান ভেঙে দেওয়া কমাতে হবে।
গবেষণাটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন অলিভার। চলতি বছরের শেষদিকে প্যারিসে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
এসএমএন/এসএস