ঢাকা: রেঞ্জার স্কুলের এই কঠিনের চেয়েও কঠিনতম কোর্স ছেড়ে দেওয়ার কথা কি একবারও ভেবেছিলেন?
বিখ্যাত এক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে প্রথম নারীর উত্তর, আমার মনেই হয়নি যে কোর্সটি এত কঠিন যে ছেড়ে দিতে হবে।
‘ছেড়ে যাওয়ার কথা যে একবারও ভাবিনি তা বলবো না! তবে আমার চারপাশের সবাইকে যখন একই পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে দেখলাম, তখন এটিই আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে’, দ্বিতীয় নারীর উত্তর।
প্রথমজন ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট শেইয়ি হেভার (২৫) ও দ্বিতীয়জন ক্যাপ্টেন ক্রিস্টেন গ্রিস্ট (২৬)। পদবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা সাধারণ মানে বেসামরিক নারী নন। এখানেই শেষ নয়। তারা আরও অসাধারণ কারণ, দু’জনই আর্মি রেঞ্জার স্কুলের প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েট।
এখানে রেঞ্জার স্কুল সম্পর্কে একটু ধারণা না দিলে ঠিক বোঝা যাবে না, তারা আসলে কতটা অসাধারণ!
সংক্ষেপে রেঞ্জার স্কুল হলো মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ৬১ দিনের এ কোর্স বা ক্যাম্প থেকেই সবদিক থেকে মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা সম্পন্ন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তার চূড়ান্ত পরীক্ষাটি এখানেই হয়ে থাকে। কোর্স পাস করা সেনাকে বলা হয় রেঞ্জার স্কুল গ্র্যাজুয়েট। এক কথায়, একজন রেঞ্জার গ্র্যাজুয়েট হলেন সেরাদের মধ্যে সেরা।
হেভার ও গ্রিস্টের মুকুটে এবার যোগ হলো রেঞ্জার ব্যাজ। সম্প্রতি মার্কিন সেনাবহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের রেঞ্জার গ্রাজুয়েট হিসেবে বরণ করে নিয়েছে।
ইতিহাসে স্থান করে নেওয়ার আগ থেকে হেভার একজন হেলিকপ্টার পাইলট ও গ্রিস্ট একটি মিলিটারি পুলিশ বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যাচে বাকি ৯৪ জন পুরুষ সহপাঠীর মতো এ দুই নারী সেনাও একই কোর্স সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন।
ঠিক এ বিষয়টিই জোর দিয়ে বলেন গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের অতিথি বক্তা মেজর জেনারেল স্কট মিলার।
‘সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কোর্সের মান একই। পাঁচ মাইল দৌড়ানো, শেষ পর্যন্ত পাঁচ মাইল দৌড়ানোই। কোর্স কারও জন্য পরিবর্তন হয় না। ১২ মাইল মার্চ মানে ১২ মাইল মার্চই। ’
তিন দশক আগে রেঞ্জার গ্র্যাজুয়েট হওয়া স্কট তাদের বলেন, আমি যখন তোমাদের সঙ্গে করমর্দন করি, জানি- এ করমর্দনের পিছনে আরও অনেককিছু রয়েছে। রেঞ্জাররা সবসময়ই পথ দেখায়। ’
৩শ ৬৪ জন সেনা এবারের কোর্সে ক্লাস শুরু করেন। তাদের মধ্যে ৬২ দিনে কোর্স শেষ করে সরাসরি গ্র্যাজুয়েট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন ৪০ জন। দ্বিতীয় অংশে উত্তীর্ণ হন আরও ৯৬ জন। হেভার ও গ্রিস্ট এ ৯৬ জনের মধ্যে দু’জন।
মার্কিন সেনা দফতরের তথ্য মতে, গত বছর চার হাজার ৫৭ জন সেনা রেঞ্জার স্কুলে অংশ নিয়ে এক হাজার ছয়শো নয়জন গ্র্যাজুয়েট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
পুরুষ গ্র্যাজুয়েট তো হরহামেশাই হয়ে থাকে কিন্তু নারী হিসেবে তারা প্রথম।
এজন্যই তাদের এ গৌরবে অভিনন্দন জানাতে ডেকেছিলেন স্বয়ং মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যাশ কার্টার। দফতর থেকে বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তির সারাংশ করে বলা যায়, চলতি বছর অংশ নেওয়া ১৯ জন নারীর মধ্য থেকে কেবল হেভার ও গ্রিস্ট গ্র্যাজুয়েট হয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নারীর অগ্রযাত্রাকে তারা আরও একধাপ এগিয়ে নিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
এসএস