ঢাকা: ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দেবো না ভুলিতে। ’
১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ (২৯ আগস্ট, ১৯৭৬)।
কাজী নজরুল ইসলামের ভাবনা বিকশিত হয়েছিল সাহিত্যের সব ধারাতে। সঙ্গীত ভুবনেও তিনি উন্মুক্ত করেছেন একটি স্বতন্ত্র দুয়ার।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কবি সবর্দাই লড়েছেন অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে। পাশাপাশি সোচ্চার হয়েছে তার লেখনীও। বিভিন্ন সময় তিনি ছিলেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক। তার লেখায় ফুটে উঠেছিল বিদ্রোহী আত্মার প্রতিচ্ছবি। তাই তিনি বিশ্ব দরবারে বিদ্রোহী কবি বলে পরিচিত।
পড়াশুনায় ইস্তফা দিতে হয়েছে অনেক আগেই। জীবিকার তাগিদে খুব অল্প বয়সেই শিক্ষকতায় নামেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামের দুখু মিয়া।
নজরুলের সাহিত্যচর্চা শুরু হয় লেটো গানের দলে যোগ দেওয়ার পর। তখন তিনি সবে কৈশরে পা দিয়েছেন। দলে অভিনয় শেখার পাশাপাশি নাটকের প্রেক্ষাপটে গান ও কবিতা লিখতেন।
পড়াশোনায় ফের মনোযোগ দিলেও ১৯১৭ সালের শেষের দিকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েই যোগ দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। সেখানে তিনি ছিলেন প্রায় আড়াই বছর। সেনানিবাসে বসেই চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা।
তার প্রথম গদ্য রচনা ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী’ ও প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘মুক্তি’ সেসময়ই রচিত হয়েছিল। ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এসময় তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লেখেন। পরবর্তীতে তাকে কারাভোগ করতে হয়।
১৯৪২ সালের জুলাইতে কবি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সে বছরের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে স্বপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নজরুল পান বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা।
১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি পান। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে কবিকে এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তার পরের মাসে তিনি পান সম্মানসূচক একুশে পদক।
তখনও নজরুলের চিকিৎসা চলছিল। পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছর ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
কাজী নজরুল পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যু হয়নি। কারণ, কবির মৃত্যু নেই। কবি চিরঞ্জীব। কবি বেঁচে থাকেন ও থাকবেন তার কবিতার শব্দে-সুরে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
এসএমএন/এসএস