ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ইন্দোনেশিয়ার মুরগির গির্জা!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
ইন্দোনেশিয়ার মুরগির গির্জা!

ঢাকা: ইন্দোনেশিয়ার গভীর জঙ্গলে শান্ত হয়ে বসে রয়েছে মুকুট পরা এক বিশাল মুরগি। কারও কারও মতে এটি ঘুঘু বা পায়রা।

তবে দৈত্যাকার মুরগি হোক বা পাখি, এটি মোটেও জ্যান্ত নয়। এটি একটি প্রার্থনার ঘর।

দীর্ঘ সময় ধরে পরিত্যক্ত এ প্রার্থনার ঘরটি স্থানীয়দের কাছে জেরিজা আয়াম নামে পরিচিত। এর অর্থ মুরগির গির্জা। প্রতি বছর এ সতন্ত্র গঠনের এই দালানটি দেখতে উৎসুক ভ্রমণকারী ও আলোচিত্রী ভিড় জমান মধ্য জাভার  ম্যাগেলাং পাহাড়ে।

মূলত এ দালানটি  মুরগি বা গির্জা কোনোটাই নয়। তবে এটি কী?
রহস্যময় এই অবকাঠামোর নির্মাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে এর নির্মাতা ডানিয়েল আলামসজা জানান, সবার ধারণা, আমি গির্জা নির্মাণ করেছি। কিন্তু এটি কোনো গির্জা নয়।
আমি একটি প্রার্থনার ঘর নির্মাণ করেছি। ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এমন মানুষদের জন্যই এই ঘর।

কিন্তু এমন আকৃতির প্রার্থনার ঘর তৈরির উদ্দেশ্য কী? ডানিয়েল জানান, অনেক বছর আগে জাকার্তার তিনশো ৪২ মাইল দূরে তিনি কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎই তিনি দৈববাণী শুনতে পান। দৈববাণীতে ঈশ্বর তাকে ঘুঘু পাখির আদলে একটি প্রার্থনার ঘর তৈরি করতে বলেন। জানান ৬৭ বছর বয়সী ডানিয়েল।

সময়টা ১৯৮৯ সাল। তিনি ম্যাগেলাং এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে তার স্ত্রীর পরিবার থাকতো। হঠাৎই তার চোখে পড়ে এই স্থানটি। স্থানটি ছিল তার স্বপ্নে দেখা স্থানটির মতোই। এরপর প্রতি রাতেই সেখানে তিনি প্রার্থনা করতেন।

এর এক বছর পর স্থানীয় জমির মালিক তাকে রেমা পর্বতে তিন হাজার বর্গমিটারে একশো দশ পাউন্ড অর্থাৎ, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩ হাজার তিনশো ৫০ টাকায় জমি কেনার প্রস্তাব দেন। ডানিয়েল জমি কেনার পরবর্তী চার বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে দেন।

বর্তমানে খ্রিস্টান ছাড়াও বৌদ্ধ, মুসলমান ও অন্য ধর্মের মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ প্রার্থনার ঘরটি দেখতে আসেন। শুধু তাই নয়, এরা প্রত্যেকেই নিজেদের ধর্মের নিয়মানুসারে প্রার্থনাও করেন। রহস্যময় এ দালান নিয়ে বেশ কয়েকটি গুজবের মধ্যে একটি হলো, অনেকেরই ধারণা এটি পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ডানিয়েল নিজেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, এখানে বিকলাঙ্গ শিশু, মাদকাসক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হতো।

তবে বিশেষ এ  প্রার্থনার ঘরটি ২০০০ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, এর নির্মাণ ব্যয় ছিল অনেক বেশি। তবুও এখনও অনেকেই ইন্দোনেশিয়ার চমৎকার এ স্থানটি ভ্রমণে আসেন।

স্থানীয় ৩০টি গ্রামের মধ্যে পার্শ্ববর্তী ডেজি গোমবোং গ্রামের প্রধান একজন যিনি ডানিয়েলকে এ দালানটি তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন।  

বর্তমানে ওয়াজনো হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি এ প্রার্থনার ঘর দেখতে আসা পর্যটকদের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন।

তিনি দর্শনার্থীদের পর্বতের নিচের অংশে তার বাড়ির বাইরে দিনে নয় পাউন্ডে পার্কিং করার সুবিধা দিচ্ছেন। যা কিনা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক হাজার ৯০ টাকা।

সামাজিক মাধ্যমগুলোর বরাতে এই জেরিজা আয়াম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ও ভ্রমণকারীদের প্রিয় স্থানগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে। জেরিজা আয়ামের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে-  চার্চ চিকেন, বার্ড চার্চ, চার্চ ডাভ, পিজন হিলসহ আরও অনেক নাম। দালানটির আটটি স্তম্ভের মধ্যে পাঁচটি এরই মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে। এর উপরতলার ঘর গির্জা হল ও নিচের তলা ছিল শোবার ঘর ও বাথরুমের জন্য বরাদ্দ।



তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।