ঢাকা: যে কেউ দেখে প্রথমে থমকে দাঁড়াতে পারেন। খড়ের গাদা আবার গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন পোলে হয় নাকি! চেতনা ফিরবে একটু বাদে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে গেলে দেখা মিলবে এ দৃশ্যের। খড়ের গাদা নয়, এগুলো পাখির বাসা! চড়ুই সদৃশ নীলচে ঠোঁটের ছোট্ট পাখিটির নাম সোশ্যাল ওয়েভার।
সোশ্যাল ওয়েভার সাধারণত উত্তর কেপ প্রদেশ ও নামিবিয়াতে দেখা যায়। তবে এদের বেশিরভাগই কালাহারি মরু অঞ্চলে থাকে।
কিন্তু এত ছোট পাখির বাড়ি এত বড়! বড় তো হবেই, কারণ এরা নিজের জন্য তো ভাবেই, সঙ্গে মাথায় রাখে ভবিষ্যত প্রজন্মের আশ্রয়ের কথাও। এমনভাবে তারা বাসা তৈরি করে যেনো গোটা গাছটিই সোশ্যাল ওয়েভারের কলোনি।
সাধারণ পাখির বাসা ও সোশ্যাল ওয়েভার পাখির বাসার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য তো রয়েছেই। যে গাছে তারা বাসা বাঁধে সে গাছে অন্য পাখির বাসা তো দূরের কথা অন্যদের বসবারও ঠাঁই হয় না। বেচারা গাছটাও পড়িমরি করে বাসার ভারে।
গাছের সঙ্গে দৈত্যাকার অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের মতো বাড়িতে শতাধিক সোশ্যাল ওয়েভার সারাবছর বসবাস করে। কোনো কোনো সোশ্যাল ওয়েভারের বাড়ি একশো বছরেরও বেশি সময় টিকে থাকে!
মুলত শিকারি প্রাণী ও গেছো সাপ থেকে গা বাঁচাতেই গাছে ও পোলের ওপর বাসা বাঁধে এরা। তারপরও বাসায় কখনও হানা দেয় কেপ কোবরা।
এক একটি বাসার উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৩ ফুট ও ব্যাপ্তি প্রায় ২৩ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বাসা তৈরি করে সোশ্যাল ওয়েভার।
ওয়েভার বুদ্ধিমান পাখি এতে কোনো সন্দেহ নেই। আয়েশিও বলা চলে। এদের বাসার ছাদ তৈরি হয় কাঠি ও গাছের শেকড় দিয়ে। ভেতরের কামরাগুলোতে আরামের জন্য রাখা হয় পশম বা তুলাজাতীয় নরম উপকরণ।
তাদের শক্তপোক্ত এই বাড়িতে শীতের রাতের ঠাণ্ডা ও গ্রীষ্মের তাপ প্রবেশ করতে পারে না। তাই কালাহারি মরুভূমির কঠোর আবহাওয়ার মধ্যেও তারা আরামদায়ক জীবন-যাপন করতে পারে। একইসঙ্গে এই পাখিদের আবহাওয়াভেদে বাসা বদলেরও ঝামেলা পোহাতে হয় না।
মৌচাকের মতো বাসাগুলোর নিচের দিকে এর প্রবেশপথ। প্রতিটি বড় বাসায় মোট তিনশোটির মতো কামরা থাকে। কামরাগুলো চার থেকে ছয় ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। প্রতিটির প্রবেশপথ ভিন্ন। সরু প্রবেশপথ গুলো ১০ ইঞ্চি লম্বা ও তিন ইঞ্চি প্রশস্ত।
এক একটি বাসায় পাঁচ থেকে একশো পাখি থাকে। তবে প্রতিটি বাসায় অনায়াসে চারশো পাখি থাকতে পারবে।
নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে সোশ্যাল ওয়েভারের শঙ্কা একটাই। যখন এই পাখি ছোট থাকে তখন ৭০ শতাংশ ছানাই সাপের আহারে চলে যায়।
সাধারণত সোশ্যাল ওয়েভারের জীবনসীমা প্রায় ১০ বছর।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়:০৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
এসএমএন/এএ