ঢাকা: জাপানের ঘড়িতে যখন রাত সাড়ে তিনটা তখন আলাপ শুরু ওয়ালিদের সঙ্গে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ফেসবুকের পকেট বক্সের (ইনবক্স) আলাপে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পেশাগত জীবনের অনেকটাই জানা গেলো।
তার আগে বলি, ওয়ালিদের আলোকিত ও রোমাঞ্চিত নতুন পরিচয়। সম্প্রতি প্রকাশিত ৩৪তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) মেধা তালিকায় সেরা স্থান দখল করেছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ছেলে এম ওয়ালিদ বিন কাশেম। অথচ প্রথম বার ৩৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি তিনি।
বাবা মো. আবুল কাশেম। তিনি ছিলেন প্রশাসনে বিসিএস ক্যাডার, এখন অবসরপ্রাপ্ত। ওয়ালিদের বড় আপা বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক, ছোট আপা ব্যাংকার। মা জোসনেয়ারা কাশেম গৃহিণী।
তবে কী বাবার কাছ থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। কী জানি ভাই? হতে পারে-বললেন ওয়ালিদ।
মতিঝিল সরকারি বয়েজ হাইস্কুল থেকে ২০০৩ এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন ওয়ালিদ। ২০০৫ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এ প্লাসের স্বপ্ন থাকলেও পেয়ে যান জিপিএ-৪.৭০।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে থকলেও সুযোগ হয়নি। পরে তাই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনিই প্রথম বিসিএসয়ে প্রথম স্থান অর্জনকারী বলেও তাৎক্ষণাৎ স্মরণ করিয়ে দেন ওয়ালিদ।
আহসানউল্লাহতে অনার্স শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিনুয়েবল এনার্জি বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। সেখান থেকেই বৃত্তি পেয়ে উড়াল দেন জাপানে। ৩৪তম বিসিএসের মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা তিনি জাপান থেকেই এসে দিয়ে গেছেন।
আপনি তো অনেক মেধাবী। সাফল্যের পেছনে সংগ্রামটা কেমন ছিলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়ালিদ বলেন, আমি মোটেও মেধাবী নই, একটিভ। আমি সব সময় সব বিষয়ে একটিভ ছিলাম। ধৈর্য্য এবং প্রাকটিসই আমার সাফল্যের চাবিকাঠি। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু প্রথম হয়ে যাবো, এমনটা ভাবিনি, এটা অবিশ্বাস্য। বলতে পারেন আমি ভাগ্যবান।
বিসিএসের জন্য কতো বছর প্রিপারেশন নিয়েছেন? তিনি বলেন, আসলে সারাটা জীবনই প্রিপারেশন নেওয়ার। আমি সব সময়ই প্রিপারেশন নিই। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ের কথা উল্লেখ করতে বলেন, তবে বলবো, দরখাস্ত করার পর থেকেই প্রিপারেশন শুরু করি।
দিনে কতোঘণ্টা লেখাপড়া করতেন- এম প্রশ্বের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মোটেই ঘড়ির ঘণ্টা ধরে পড়ালেখা করতাম না, সে রকম সময়ও হতো না। বিচ্ছিন্নভাবে পড়াশোনা করেছি। যখন সময় পেয়েছি তখনই লেখাপড়া করেছি। আমার পড়ালেখার কোনো রুটিন ছিলো না।
সার্ক এর নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন ওয়ালিদ। তিনি বিয়ে করেছেন ২০১২ সালে। ২ মাস কম দুই বছর বয়সী সাবিরা বিনদে ওয়ালিদ নামে ফুটফুটে মেয়েও আছে তার।
দৃঢ় লক্ষ্য স্থির করে সে অনুযায়ী কাজ করলে সবই সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন ওয়ালিদ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বেশ সক্রিয় তিনি। ২০০৬ সাল থেকেই তিনি ফেসবুকিং করেন। ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন, জ্বালানি নিয়ে কাজ করতে চাই। জ্বালানি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই এখন আমার লক্ষ্য।
ফরেন ক্যাডার তার স্বপ্নের ক্যাডার ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ করে এবার তিনি বাকি জীবনে আরও বেশি একটিভ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫
টিআই/জেডএম