ঢাকা: সন্ধ্যার বেশ খানিকটা আগ থেকেই একের পর এক আসতে থাকে বিনোদন ও আড্ডাপ্রিয় তরুণ-তরুণী। তখনও জমে ওঠেনি রাজধানী রমনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
কেউ একা একা ঘোরাঘুরি করছেন উদ্যানের মাঠে। আবার কেউ কেউ বন্ধুদের নিয়ে ঠিক করছেন কোথায় বসা যায়!
ঈদের দ্বিতীয়দিন শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এসব দেখতে দেখতে এক ঝাঁক কাক চোখে আটকে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠের পশ্চিম দিকের একটি ফাঁকা জায়গায়। এক সঙ্গে শতাধিক কাক দেখে যেন চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়!
দেখা গেল, এক ঝাঁক কাক ঘিরে মধ্যবয়সী একজন মানুষ কিছু হাড়গোড় নিয়ে কয়েকটি কুকুরকে খাওয়াচ্ছেন আদর-যত্নে। আর কাকগুলো সেই খাবার থেকে যেন ভাগ বসাতে চাইছে বার বার। কাকগুলো উড়ে উড়ে মধ্যবয়সী ওই লোকের হাতেরাখা বস্তার হাড়গোড় ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কুকুরের মুখ থেকেও খাবার সংগ্রহের চেষ্টা চলে কাকদের। তবে কুকুরের খাবার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাকে মোটেও বাধা দিচ্ছেন না ওই দরদী মানুষটি।
দেখে মনে হচ্ছে, শহরের গরিব শিশুদের মতো হৈহল্লা করে মাংস কুড়িয়ে খাওয়া যেন! ঈদের উচ্ছিষ্ট মাংস নিয়ে কাকের টানটানি দেখে মনে হবে, অন্যান্য কাকপক্ষীরাও বুঝি ঈদ করতে এসেছে এখানে।
এই দৃশ্য দেখছিলেন বেশকিছু লোকজন। কাকগুলো তখনও উড়ে যাচ্ছে না। লোকটি চলে যাওয়ার পর কাক ও কুকুর ধীরে ধীরে সবাই চলে যেতে থাকে।
খাওয়ানোর প্রায় শেষ সময়ে অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তির নাম জানতে চাইলে চলে যেতে উদ্যত হন তিনি। অনুরোধ করেও তার নাম জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি ঈদের দিন শুধু নয়, প্রায় প্রতিদিনই এ উদ্যানসহ রমনা পার্কের কুকুরগুলোকেও সংগ্রহ করা খাবার খাওয়াতে আসেন বলে জানান তিনি।
ঈদের সময় তাড়াতাড়ি উদ্যানের গেট বন্ধ হবে। ফলে, আর খাওয়ানো হবে না কুকুরদের। তাই, তাড়াতাড়ি এসেছেন খাওয়াতে।
কাকগুলো খাবারে ভাগ বসাচ্ছে আর তাতে বাধা না দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরও তো খাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর আমার খাবার তো পশুপাখি সবার জন্যই।
ঈদের সময় তাদেরও তো ভালো খাবার প্রয়োজন। আজ কুকুর আর কাকপক্ষীরও ঈদ- জানান তিনি
খাওয়ানোর পর কুকুরগুলোকে আদর করার সময় আরো একবার মধ্যবয়সী ওই লোকের সঙ্গে কথা হয়। কেন নাম বলা যাবে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা আছে! সেটা কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এলাকার লোকজন ও প্রতিবেশীরা এটাকে ভালো চোখে দেখেন না। এ জন্য তারা আমাকে ‘পাগল’ ভাবে।
এটি ভালো কাজ; তাহলে কেন ‘পাগল’ ভাবে জিজ্ঞাসা করলে দরদী ওই মানুষটি বলেন, ‘জীবের প্রতি প্রেম সবাই বোঝে না’।
নিজের নামের ব্যাপারে তিনি বলেন, মাফ করবেন। নাম জানতে চাইবেন না; অনুরোধ করছি। বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন- বিক্রমপুর।
কাকপক্ষী আর কুকুরদের খাওয়ানোর দৃশ্য দেখার সময় উপস্থিত ডেকোরেটর কর্মী পরিচয় দেওয়া নুরুল ইসলাম জানান, কমিউনিটি সেন্টারের ফেলে দেওয়া খাবার এবং হোটেলের নষ্ট বা উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করেন ওই মানুষটি। তারপর প্রতিদিনই তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কের কুকুরগুলোকে খাওয়ান। রাতে এসে চুপি চুপি খাইয়ে যান, যাতে কেউ না দেখেন। ঈদের সময় বলেই হয়ত শনিবার আগে এসেছেন!
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএমএ/এবি