ময়মনসিংহ: ‘এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান/ হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান/ এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা/ এ শুধু জাতীয় পূণ্যমিলনের এক মহামেলা...’ কবির কবিতার মতোই মহানন্দে উদযাপিত হচ্ছে ঈদ।
আর ঈদের ছুটিতে বাঁধনহারা আনন্দে মেতেছেন উৎসবপ্রেমী মানুষ।
উৎসবপ্রিয় মানুষের পদচারণায় এখন মুখর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা এ পার্ক। নির্মল ও শান্ত পরিবেশ জয়নুল উদ্যানের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। সবুজ শ্যামল ছায়াপথে প্রকৃতির কাছাকাছি আসা মানুষের ভালোলাগার নানা নান্দনিক দিক ও সুযোগ রয়েছে পার্কটিতে। আছে চিড়িয়াখানা, নান্দনিক কৃত্রিম ফোয়ারা, ব্যায়ামাগার ও বিনোদন মঞ্চ। বিশেষ করে চিড়িয়াখানায় শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়স্ক, বয়স্কসহ সর্বস্তরের মানুষের ভিড়।
ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকরামুল হক টিটু জীর্ণ সাহেব কোয়ার্টার পার্ককে কয়েক বছর আগে দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের মাধ্যমে নতুন আদলে সাজিয়েছেন। কর্মব্যস্ত ও যান্ত্রিক জীবনের ছকে বাঁধা মানুষজনকে একটু স্বস্তি দিতে নতুন চেহারা দিয়ে পার্কটির নাম দিয়েছেন জয়নুল উদ্যান।
জয়নুল উদ্যানের বাইরের পরিবেশও মনোরম। নৈসর্গিক ছন্দে রোমাঞ্চিত। এখানে ছায়াঘেরা পরিবেশে গড়ে উঠেছে চড়কি, দোলনা, নাগরদোলাসহ কতকিছু! মা-বাবা তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন রাইডে ভিড় করছেন।
এখানে চার মাচার নাগরদোলা রয়েছে। সংখ্যায় পাঁচ থেকে ছয়টি। ১৬ চক্কর জনপ্রতি ১০ টাকা বলে হাঁক দিচ্ছিলেন অজয় চন্দ্র দে। শহরের মুকুল নিকেতন স্কুলের শিক্ষার্থী অজয় দু’জনকে নিয়ে একটি নাগরদোলা ঘোরাচ্ছিলেন। তার ভাষ্যে, ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন ব্যবসা হয়নি। তৃতীয় দিনে দুপুরে পার্কে লোকারণ্য কম থাকায় বিকেল গড়াতেই হবে জম্পেশ ব্যবসা।
শিশু-কিশোরদের জন্য এ উদ্যানে রয়েছে স্পেশাল রাইড। এর মধ্যে চড়কিতে চড়ার মজাই আলাদা। চড়কিতে চড়ে মহানন্দে মেতেছে শিশুরা। আর আদরের শিশু সন্তানদের চড়কিতে চড়িয়ে তাদের বায়না মেটাচ্ছেন মা-বাবা।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় লোক সমাগম বেশি হওয়ায় চড়কিওয়ালাদের ব্যবসাও দারুন, এমনটাই জানালেন শিহাব নামে এক চড়কিওয়ালা।
পরিবার-পরিজন নিয়ে জয়নুল উদ্যানে এসেছেন অথচ সুস্বাদু ও লোভনীয় চটপটি আর ফুচকা মুখে তুলেননি, এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম। সকাল-সন্ধ্যা চুটিয়ে চটপটি আর ফুচকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। গোটা বছরেই এ ব্যবসা লাভজনক। আর ঈদের সময় তো কথাই নেই। ঝাল ফুচকা ও চটপটি জনপ্রিয় হওয়ায় এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকেই। এ উদ্যানের বাইরে রয়েছে কমপক্ষে ২০টি চটপটির দোকান। সামনে সাজানো সারি সারি চেয়ার। ক্রেতার ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতি বিক্রেতা, এমনটি জানালেন চটপটি ব্যবসায়ী রুবেল।
নিত্য ১ হাজার ৫শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা ব্যবসা হলেও এখন দু’দিন যাবত চার থেকে পাঁচগুণ ব্যবসা করছেন।
এ বিনোদন কেন্দ্রের ফুটপাতে শিশুদের পছন্দের বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে। পার্কের এক কোণে বেলুন, ফুটবল, বাঁশি, মুখোশ, পাজেলসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র। তাদের একজন যুবক বয়সী আলাউদ্দিন।
গালভরা হাসি নিয়ে বললেন, ঈদের দিন হা করে বসেছিলাম। এখন দর্শনার্থীর সমাগম বেশি হচ্ছে। বেচাবিক্রিও ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
এবি