ঢাকা: ‘প্রতিদিন ৪-৫ আঁটি গেন্ডারি (আঁখ) বিক্রি করি। এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর রায়ের বাজার সাদেক খান কৃষি মার্কেটে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন ভ্রাম্যমাণ গেন্ডারি বিক্রেতা মো. বাবুল মিয়া। নামে কৃষি মার্কেট হলেও মূলত বিক্রি হয় গেন্ডারি।
এটি রাজধানীর খুচরা গেন্ডারির সবচে বড় বাজার। বাবুলের মতো প্রতিদিন শত শত ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা এ বাজার থেকে গেন্ডারি নিয়ে বিক্রি করেন।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বেশি সুবিধা পাওয়ায় ভোর থেকে রাত অবধি বাজারটি সরগরম থাকে। তাই তাদের কাছে এটি ‘গরীবের গেন্ডারি বাজার’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
বাংলানিউজকে বাবুল বলেন, ৪ বছর ধরে এ বাজার থেকে গেন্ডারি কিনে বিক্রি করি। প্রতি আঁটি (আঁটিতে ২৫ পিস) ২-৪শ টাকায় কিনি। কেটে অথবা গোটা বিক্রি করি।
গেন্ডারি বেচে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা লাভ হয়। এ বাজারের গেন্ডারির মান ভালো। গরমের সময় চাহিদা খুব বেশি থাকে, লাভও হয় বেশি। তবে বৃষ্টি হলে লাভ কম হয়।
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এর গেন্ডারি মিষ্টি। সারাবছর এখানে এ গেন্ডারি পাওয়া যায়। এখানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সুবিধা বেশি। তাই সবাই ‘গরীবের গেন্ডারি বাজার’ নামে ডাকে।
ফার্মগেট এলাকার গেন্ডারি শরবত বিক্রেতা নুর ইসলাম। যশোর থেকে এসে গত ৩ বছর এ বাজার থেকে গেন্ডারি কিনে শরবত করে বিক্রি করেন।
গেন্ডারি কিনতে এসে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৪-৫ আঁটির শরবত বিক্রি হয়। তবে গরম বাড়লে চাহিদা দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ বাজারের গেন্ডারি মিষ্টি বলে শরবতও বেশি বিক্রি হয়। অনেক সময় বাকিতেও বাজার থেকে গেন্ডারি কিনি। এ বাজার আমাদের মতো গরীববান্ধব।
বিক্রি ও লাভ ভালো হয়। এদিয়ে দু’সন্তানকে রাজধানীর একটি ভালো স্কুলে লেখাপড়া করাই। স্ত্রী-মাকে নিয়ে বাসায় থাকি, যোগ করেন নুর ইসলাম।
এ বাজার থেকে ৫ বছর ধরে গেন্ডারি কিনে বিক্রি করেন রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা (ভ্যানে করে) গাইবান্ধার রাকিবুল ইসলাম।
রাকিবুল বাংলানিউজকে বলেন, নিজের কোন পুঁজি ছিল না। দেশি এ শরবত বিক্রেতার সহায়তায় এ বাজার থেকে বাকিতে গেন্ডারি নিয়ে বিক্রি শুরু করি।
সারাবছর এ বাজারে গেন্ডারি পাওয়া যায় বলে অভাবে পড়ি কম। গরীবের গেন্ডারি বাজারের গেন্ডারির মিষ্টির সুনাম রয়েছে, বিধায় যেখানে নেওয়া হয় সেখানে বিক্রি হয়ে যায়।
গরীবের গেন্ডারির বাজারের বেপারী মো. শহীদ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে গত ৫ বছর ধরে গেন্ডারি এনে ইদ্রিছ আলীর আড়ৎ এর মাধ্যমে বিক্রি করেন।
বাংলানিউজকে শহীদ বলেন, বছর ৫ আগে এ বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ৯ জন আড়ৎদারের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ থেকে গেন্ডারি এনে বেপারীরা বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ বাজার খোলা থাকে। ৫ শতাধিক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা এখান থেকে গেন্ডারি নিয়ে সারা ঢাকায় বিক্রি করেন।
প্রতিদিন রাত ১০টার মধ্যে শিঙ্গাইর থেকে প্রায় ৯ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ৩-৪ হাজার) গেন্ডারি এ বাজারে আসে। রাত আটটার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়।
সারাবছর এ বাজারের গেন্ডারির চাহিদা থাকলেও গরমের সময় চাহিদা সবচে’ বেশি থাকে। গরমের সময় কিছুটা লাভ হলেও বৃষ্টির কারণে কিছুটা লোকশান গুণতে হয়।
রাজধানীর ফরাশগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মিরপুর-১, গাবতলী, শ্যামলী, কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় গেন্ডারি বাজার থাকলেও এটিই সবচে’ বড় বাজার বলে দাবি করেন তিনি।
** প্রতিদিন ১২ লাখ টাকার আখ বিক্রি বাদুড়িয়ায়
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
আরইউ