ঢাকা: পরনে জলপাইসবুজ রঙের সামরিক পোশাক। মাথায় তারকাখচিত কালো টুপি।
আর্জেন্টাইন মার্কসবাদী বিপ্লবী চে ছিলেন কিউবা বিপ্লবের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। কূটনীতিবিদ ও সামরিক তত্ত্ববিদ এ নেতা ছিলেন একাধারে চিকিত্সক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা সংগঠক ও লেখক।
আজ ৯ অক্টোবর ( শুক্রবার)। ১৯৬৭ সালের এ দিনে চে গুয়েভারা মারা যান।
সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক পরিবারে জন্ম নেওয়ায় খুব কম বয়স থেকেই রাজনীতি বুঝতেন চে। দুরন্ত আর চঞ্চল ছেলেটি ওইটুকু বয়স থেকেই ভাবতো সমাজের নিপীড়িত, বঞ্চিত ও অসহায় মানুষদের নিয়ে।
মানুষের জন্য কাজ করার অভিপ্রায় থেকে ১৯৪৮ সালে তরুণ চে ডাক্তারি পড়া শুরু করেন। পড়াশোনার সুবাদে ল্যাটিন আমেরিকা চষে বেড়ান তিনি। ঠিক তখনই তার চোখে পড়ে তৎকালীন পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের আসল ফলাফল। সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষের ওপর বুর্জোয়া শ্রেণীর শোষণ-নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত মানুষের হাহাকার তাকে গভীর বিষাদে ফেলে।
তিনি এ অবস্থা থেকে সমাজকে মুক্ত করার লক্ষ্যে গুয়েতেমালায়ের সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। এ আন্দোলনের নেতা ছিলেন দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জ্যাকোবা আরবেনজ গুজমান।
ক্রমেই চে গুয়েভারার হৃদয়ে বিপ্লব দানা বেঁধে ওঠে। তবে তার জীবনের মোড় ঘুড়ে যায় ১৯৫৪ সালে। তখন তিনি মেক্সিকো শহর সদর হাসপাতালে এলার্জি বিভাগে চাকরি করতেন। একইসঙ্গে ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভির্সিটি অব মেক্সিকোর চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যাপনা ও ল্যাটিন সংবাদ সংস্থার চিত্রগ্রাহক হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন।
এভাবে কেটে যায় এক বছর। ১৯৫৫ সালে তার সঙ্গে দুই কাস্ত্রো ভাইয়ের পরিচয় হয়। রাউল কাস্ত্রো ও ফিদেল কাস্ত্রো।
বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ চে’র সঙ্গে কিউবান রাজনৈতিক নেতা ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর মতের মিল হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের অবসান করতে ও কিউবার একচেটিয়া শাসনের প্রতিবাদে চে ফিদেল কাস্ত্রোর আন্দোলনে ২৬ জুলাই যোগ দেন।
কিউবা বিপ্লবের শুরুতে চে-সহ ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবী সংঘের আন্দোলনকারীরা ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্বর মেক্সিকো থেকে কিউবার দিকে অগ্রসর হন। সেসময় কিউবার একনায়ক ছিলেন ফুলজেনসিও বাতিস্তা। কিউবা পৌঁছানো মাত্রই বাতিস্তার সেনাবাহিনী তাদের আক্রমণ করে। ঠিক এ সময়েই গুয়েভারা চিকিৎসক থেকে পুরোপুরি বিপ্লবীতে পরিণত হন।
কিউবার যুদ্ধে চে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর ডান হাত। এসময় চে সৈনিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে গ্রেনেড তৈরির কারখানা, রুটি স্যাঁকার চুলা তৈরি, সংঘের সদস্যদের সাক্ষরজ্ঞান দান, স্বাস্থ্যসেবা দান ও সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা তৈরির দায়িত্ব পালন করেন।
এক পর্যায়ে চে বিদ্রোহী-বাহিনীর কমান্ডার পদে অভিষিক্ত হন। গেরিলা অভিযানে তার ছিলো আসামান্য কৃতিত্ব।
বিপ্লবী ভূমিকা ছাড়াও চে গুয়েভারা তার বৃহত্তর কৃতিত্বপূর্ণ জীবনে বিভিন্ন ধাপে অগ্রসর হয়েছেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি কিউবার শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় তিনি কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ছিলেন।
সে বছরই বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নিতে তিনি কিউবা ত্যাগ করেন। পরপর কঙ্গো ও বলিভিয়ার বিপ্লবে অংশ নেন চে। বলিভিয়ার গেরিলা যুদ্ধে চে’র ছিলো সক্রিয় অংশগ্রহণ।
কিন্তু, চে’র এ যুদ্ধের কথা গোপন থাকে না। তা মার্কিন সিআইএ এর কাছে প্রকাশ হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর সিআইএ এর এক সহচরী বলিভিয়ান সেনার হাতে বন্দি হন বিপ্লবী নেতা চে। ধারণা অনুযায়ী, বন্দি হওয়ার দু’দিন পর, ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার ভ্যালেগ্রান্দে প্রদেশের লা হিগুয়েরা গ্রামে চে গুয়েভারাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১৯৯৭ সালে ভ্যালেগ্রান্দের এক গণকবরে বিপ্লবের প্রতীক চে গুয়েভারার দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়।
চে’র মৃত্যুর পর নিউ ইয়র্ক টামস পত্রিকার বিখ্যাত উক্তিটি ছিলো- ‘একজন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে একটি রূপকথাও চিরতরে বিশ্রামে চলে গেল। ’
চে গুয়েভারার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
এসএমএন/এএ