ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

তাঁতীবাজারে নিরামিষের হরেক ব্যঞ্জন

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
তাঁতীবাজারে নিরামিষের হরেক ব্যঞ্জন ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পুষ্পান্ন, সাদা অন্ন, রুটি, পরোটা, ডাল, সবজিসহ নানা ব্যঞ্জনে ভোজনরসিকর‍া রসনা তৃপ্ত করছেন তাঁতীবাজারের নিরামিষ হোটেলগুলোতে। প্রায় সবসময়ই ভিড় লেগে রয়েছে এগুলোয়।

পূজাকে ঘিরে ভিড় যেন বেড়েছে আরও।
 
বাজার ও এর সংলগ্ন এলাকায় ৬/৭টি নিরামিষ খাবারের দোকান ও হোটেল রয়েছে। এর সবকটি পরিচালনা করেন ইসকন ভক্তরা। কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই, নেই কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যার যার ব্যবসা নিজেরা করে নিচ্ছেন, অর্জন করেছেন গ্রাহকপ্রিয়তা।  

তাঁতীবাজারের ‘জগন্নাথ ভোজনালয়’ বেশ ঘরোয়া পরিবেশ রেখেছে। এর পরিচালক নিতাই পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে হিন্দু, মুসলমান থেকে শুরু করে সব ধরনের কাস্টমারই আসে। স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সকাল-দুপুরের খাবার খেতে আসেন। কেউ কেউ রাতের খাবারও খান। পূজার কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনও নিরামিষ খেতে ভালোবাসেন। সেজন্য এখন ভিড়টাও একটু বেশি।

প্রায় ৬ বছর ধরে এ হোটেলটি চলছে। সপরিবারে খাওয়ার উপযোগী। টেবিলে ছোট ছোট বাটিতে সব ব্যঞ্জন সাজানো। ছানা, ডাল, শাক, আমড়ার টক, টক দইসহ নানা মুখরোচক খাবার থেকে পছন্দমতো বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে।

নিতাই বলেন, এখানে খাবার সাশ্রয়ী। নিরামিষ খাবার স্বাস্থ্যকরও। যে কেউ নিশ্চিন্তে আসতে পারেন, খেতে পারেন। আমাদের খরচ বেশি পড়ে না। তাই খাবারের বাড়তি দামও রাখার প্রয়োজন হয় না।

‘অনেকেই খেয়ে আবার পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য পার্সেল নিয়ে যান’- বলেন নিতাই পাল।

পানিটোলার রাখাল চন্দ্র বসাক লেনে ‘হরেকৃষ্ণ মুখরোচক খাবার হোটেল’। এখানে একাদশীর প্রসাদ, সয়াবিন বড়ি, পাপড়, শ্যামা দানা, চষি, সাবু, দুধ, কোমল পানীয়সহ পূজার সামগ্রী পাওয়া যায়।

এর পরিচালক নিমাই অবতার দাসাধিকারী (নিমাই) বাংলানিউজকে বলেন, ১০ বছর ধরে আমাদের এ ব্যবসা। গ্রাহকের সন্তুষ্টিই আমাদের প্রেরণা। কিছু বান্ধা ক্রেতা আছেন, তারা এখানে কেনাকাটা করেন, খেতে আসেন।

নিমাই বলেন, আমাদের পুরি, সিঙগাড়া, সমুচা, চপ, সবজি বন, পাকোড়া, ভেজিটেবল রোল, পরটা, ভাজি, ডাল, হালুয়া, রুটি, কেক, বিস্কুট, চানাচুর, নিমকি, গজা, নিমকপড়া ও বুরিন্দার সুনাম আছে।

তাঁতীবাজারের শিবমন্দিরের কাছেই ‘আদি গোবিন্দ রেস্টুরেন্ট’। এখানে প্রতি প্লেট সবজি-পোলাও ৫০ টাকায় পাওয়া যায়। এ খাবার অনেকের পছন্দ বলে জানান পরিচালক সুধামা সুমঙ্গল দাসাধিকারী ও জগৎপতি নিত্যানন্দ দাস।

বাংলানিউজকে তারা জানান, খুব কম দামে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন তারা। বিভিন্ন রকমের ভর্তা পাওয়া যায় এখানে। শুধু ভাত ও ডাল খেলে ২৫ টাকা রাখা হয়। চাইলে এখানেও পার্সেল সুবিধা নিতে পারেন ক্রেতারা।

পানিরটোলার ‘বিষ্ণুপ্রিয়া রেস্টুরেন্ট ও প্রসাদালয়’র পরিচালক নিখিল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সবজি বন, সিঙ্গারা, পুরি, আলুচপ, ভাত, নিরামিষ, সবজি, সয়াবিন, ছানা, ডাল, কচুর সবজি, আলু পটল, ফুলকপি, বাধাকপি ও কচুর শাক রান্নায় ভিন্নতা রাখা হয়। একদিন পর পর মেন্যু বদলে দেওয়া হয়, যাতে কাস্টমারদের একঘেঁয়ে না লাগে।

পানিরটোলায় মাত্র একবছর হল এসেছে দোকানটি, এর আগে ছিল তাঁতীবাজারের ১১০ নম্বর মার্কেটে। সেখানে ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে তারা এ ব্যবসা করেছেন। বিষ্ণুপ্রিয়া থেকেও পার্সেল সুবিধা নিতে পারবেন ক্রেতারা।

ভাত বা রান্না তরকারি বিক্রি করেন না ‘রাধামাধব কনফেকশনারী’র মালিক শীতেষু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সিঙ্গাড়া, পুরি, চপ, সমুচা, বেগুনি, নিমকি, বুন্দিয়া বানাই আমরা। হিন্দু-মুসলিম ভেদ নাই। সবাই আমার কাস্টমার।

শীতেষুকে কাজে সাহায্য করছেন তার মেয়ে তুলি। এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তুলি জানান, তার বন্ধুরাও নিয়মিত এ দোকানে খেতে আসে।

শীতেষুর স্ত্রী মমতাষুও মাঝে মাঝে কাজের তদারকিতে দোকানে আসেন। মাত্র ৬ মাস ধরে তাদের এ ব্যবসা, কিন্তু এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আলাপকালেই দেখা গেল, সিঙ্গাড়া ভাজার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন ক্রেতা।

আলাপে এসব ব্যবসায়ী ও পরিচালক নিজেদের আশার কথা জানান। তারা বলছেন, নিরামিষভোজীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু ধর্মীয় দিকে নয়, এখন অনেকেই শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবে নিরামিষ খাবার পছন্দ করছেন।

তারা বলেন, ডাক্তাররা তেল-ঝোল, চর্বি জাতীয় খাবার সীমিত খেতে বলেন। নিরামিষের পরামর্শ দেন। এতে রোগ বালাই কম হয়, স্নায়‍ু সতেজ থাকে, অতিরিক্ত মেদ জমে না শরীরে, ত্বক ও চুলের ক্ষতি কমে। স্বাস্থ্য সচেতন তরুণরাও এখানে নিয়মিত খেতে আসেন বলেও জানান তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
এসকেএস/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।