ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

গাবখান ব্রিজে খোশগল্প

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
গাবখান ব্রিজে খোশগল্প ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঝালকাঠি থেকে ফিরে: ‘আবার আসিবো ফিরে/ধানসিঁড়িটির তীরে/এই বাংলায়’- কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিবো ফিরে কবিতাটি’ যতোটুকু খ্যাত, তার ঠিক সমান খ্যাত ধানসিঁড়িটির তীর ও ধানসিঁড়ি নদী। এমনটা সম্ভব হয়েছে কবিতায় পংক্তি হিসেবে উঠে আসার জন্যই।



বিখ্যাত সেই ধানসিঁড়ি নদীর অদূরে গাবখান নদীর একরাশ ঠাণ্ডা মেঘমালা ছোঁয়া বাতাসের দোলে খোশগল্প জমেছিল বেশ। সেখানেই একজন আবৃত্তি করে শোনালেন কবিতাটি। কবির স্মৃতির মধ্যে কাতর হয়ে মনে হলো, আসলেই এই বাংলা কতো না সুন্দর! সুন্দর বলেই তো জীবনানন্দ দাশ ফিরে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

তখন গাবখান ব্রিজে। ঢাকা-মংলা ও চট্টগ্রাম-মংলার সংযোগ রক্ষাকারী অন্যতম নৌ-রুট এবং ‘বাংলার সুয়েজ খাল’ হিসেবে খ্যাত এই গাবখান চ্যানেল।

ব্রিটিশদের সময়কালের কথা। সালটা ১৯১৮। ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদী থেকে পশ্চিম প্রান্তে পিরোজপুরের কচা-সন্ধ্যা নদী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গাবখান চ্যানেল খনন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে মংলা-খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নৌ-পথের দূরত্ব হ্রাস করা। চ্যানেলটি খননের ফলে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে আসে। তবে বর্তমানে এ চ্যানেল তার নাব্যতা হারিয়েছে খানিকটা।

গাবখান চ্যানেলের ওপর দিয়েই ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু (গাবখান ব্রিজ)। এ সেতুর নির্মাণশৈলী একে দেশের অন্যান্য সেতু থেকে আলাদা করেছে। ব্রিজের নিচে রয়েছে ইকোপার্ক। সেখানে পিকনিকসহ ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে মানুষ ঘুরতে আসেন।

এসব বিষয় নিয়ে ব্রিজের গোড়ায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বর্ণনা দিলেন, গাবখান ব্রিজটি কতো সুন্দর! তাই তো এখানে মানুষ ঘুরতে আসেন।

সাইদুল বলেন, যেকোনো ছুটির দিনেই এখানে বেড়াতে আসেন মানুষজন। বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ঝালকাঠির স্থানীয়দের পদচারণা বেশি। নদীর মুক্ত বাতাসের সঙ্গে যতোদূর চোখ যায় সৌন্দর্য- সব মিলিয়ে গাবখান ব্রিজ এ অঞ্চলের ভালোই বেড়ানোর জায়গা হয়ে উঠেছে।

পাশের ছোট্ট টঙ দোকানদার রবিউল ব্যাপারি বলেন, গ্রামের স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে যাত্রাপথের মানুষেরা ভিড় করেন এখানে। এর ফলে প্রচুর ক্রেতা সমাগম হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে মানুষে মানুষে ভরে যায় পুরো ব্রিজ। পূর্ণিমার দিন ভরা চাঁদে এ মনোরম পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।

তখন মধ্য ব্রিজে। গায়ে-গতরে ঠেলে ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলেন মোশাররফ সিকদার (৫১)। কথা হয় তার সঙ্গে। মাথার ঘাম বগলের গামছা দিয়ে মুছে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজটা হওয়াতে বেশ ভালো হয়েছে। এখানকার মানুষ খুব সহজে খুলনা যেতে পারছেন।

তিনি জানালেন, ২০০০ সালে ব্রিজটি নির্মাণের সময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আজ এর ওপর দিয়ে কতো মানুষ যায়, কত মানুষের আয়-উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে ব্রিজটির ফলে। এটাই তো তার জন্য অনেক বড় কথা।

এক সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঘুরতে আসেন কবির (২৫) ও মো. খোকন (৩০)। দুই বন্ধু। তারা ব্রিজের ধারে বসে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছিলেন। কান পেতে শুনতেই আওয়াজ এলো, সৃজনশীল শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্ত হাতে লেখার একটা সুযোগ পেলেও পরীক্ষার প্রশ্ন তো ওই গাইড নির্ভরই হয়ে যাচ্ছে! যা কঠোরভাবে রোধ করা দরকার। আড্ডা চলাকালে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রশ্ন, এর সমাধান কী? কবির ও খোকন দু’জনই বললেন, বাজারে গাইড বই পাওয়া যায়, এটিকে আগে বন্ধ করতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীরা নিজেরা নোট করবে, এতে কমে আসবে সমস্যা। সৃজনশীল শিক্ষায় সত্যিই সৃজনশীলতার সৃষ্টি হবে- এমন ভাবনাও বাদ যায় না তৃণমূলের এই দুই যুবকের কাছ থেকে।

তাদের কথা শুনতে শুনতেই সাইকেল নিয়ে একদল কিশোরের প্রবেশ। ধীরগতিতে সাইকেল চালাতে চালাতে প্রবেশ করেন নাদিম হোসেন। তার সঙ্গে রুবেল ও পলাশ। পাশে হেঁটে হেঁটে আসা সাব্বির, হাসান, শিপন, আরমান, সানি ও সুজন। সবাই পাড়ার বন্ধু।

মধ্য ব্রিজে বসে আড্ডা তাদেরও জমে খুব। কথা হয় তাদের সঙ্গেও। প্রশ্ন ছিল অনেকগুলোই। তাদের খোশগল্পের মধ্য থেকে ওই যে একজন আবৃত্তি করেছিলেন। তিনি ধানসিঁড়িটির তীরে তাকিয়ে বলেন,

‘আবার আসিবো ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় হয়ত মানুষ নয়- হয়ত বা শংখচিল শালিখের বেশে, হয়ত ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়’।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
আইএ/এএসআর

** দিঘিতে পা ভেজানোর আনন্দ...
** ২ লাখের শ্রম-ঘামে অন্যতম মসজিদ উজিরপুরে
** বেদে পল্লী: ১৫ পরিবারে ২ বেড়ার টয়লেট
** এই শিশুদের ভবিষ্যৎ সাপ!
** প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ
** যেখানে হারায় না শৈশব
** তিন মাস চা বিক্রেতা, নয় মাস মজুর
** ‘আমড়া বন্ধনে’ সম্ভাবনা বিশ্ব ছোঁয়ার
** জ্যাম-জেলি, পেয়ারা ও ভাসমান হাটে আগ্রহ
** রাস্তায় ইট বিছিয়ে ব্যবসা
** ঢাকায় কেজি ৪০, এখানে মণ ৪০!
** এই পেয়ারার স্বাদই আলাদা!
** নৌকায় ভাসা বিশাল বাজার...
** থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম নয় ‘ভীমরুলী’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।