ঢাকা, রবিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ মে ২০২৫, ২৭ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নেসার আহমেদের ডিজিটাল বার্নার

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:১৮, জুলাই ৩০, ২০১১
নেসার আহমেদের ডিজিটাল বার্নার

লোকটিকে ফোন দিলেই লম্বা সালাম দেয়। ফোনেই বলি, ‘নেসার ভাই, আপনার আবিষ্কৃত ভিন্নধরনের চুলা নিয়ে কথা বলতে চাই।

’ তার অমায়িক উত্তর, ‘আসলে আপনাকে বললে বুঝবেন না। এসে চুলাটা দেখে যান। ’

কি এমন আছে তার আবিষ্কৃত সেই চুলায়? আগ্রহটা শুধু বেড়েই চলছে। রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় নেসার ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দেখি, ফোনে যাকে ভাই বলেছি তিনি আসলে আমার পিতৃসম। কিন্তু এখনও চোখে-মুখে উচ্ছলতায় ভরা। এখনও তিনি দৌঁড়াতে চান। কথায় কথায় বলেন, ‘আমার আবিষ্কার আমি আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই। বাকিটা তাদের ব্যাপার। ’  

কিছু সময় পর আমাকে তিনি নিয়ে গেলেন রান্নাঘরে। দেখতে সাধারণ চুলার মতই। বার্নারের মাঝখানে ছিদ্রগুলো সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া। আগুন যাতে চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে সে জন্যই এ ব্যবস্থা, জানালেন নেসার আহমেদ। বললেন, ‘এখানে একটু চালাকি করেছি। আগুন ছড়িয়ে দিলে রান্নাটা ভালো হয়। ’

চুলাটির কারিগরি দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাকে আপনি ডিজিটাল গ্যাস বার্নারও বলতে পারেন। যা দিয়ে ৯৯% গ্যাস অপচয় রোধ করা সম্ভব। বার্নারে নতুন দুইটি প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। যা আমার জানা মতে এখনও বাংলাদেশে কেউ চিন্তা করেনি। ’

ডিজিটাল গ্যাস বার্নার:

আমরা সাধারণত বাসায় রান্নার জন্য চুলা সারাক্ষণ জ্বালিয়ে রাখি। এতে তো গ্যাসের অপচয় হচ্ছেই সেই সাথে দেশের সম্পদও নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ অলসতার জন্য চুলা বন্ধ করে না। আবার অনেকে একটা দেয়াশলাই কাঠির জন্য চুলা জ্বালিয়ে রাখে। আরও দুঃখের বিষয় হলো, অনেকে চুলার উপর কাপড় শুকায়।

নেসার আহমেদের চুলায় যে বার্নারটি ব্যবহার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। চুলায় বার্নারের পাশে একটি ‘ফ্লেম বা অগ্নিশিখা’ লাগানো হয়েছে। সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে রান্নার হাড়ি-পাতিল বসানোর সাথে সাথে বার্নারটি জ্বলে উঠবে। আবার রান্নার সামগ্রী সরানোর সাথে সাথে বার্নার বন্ধ হয়ে যাবে।     

বর্তমানে বাজারের সাধারণ বার্নার এক মিনিট জ্বালিয়ে রাখলে যে পরিমাণ গ্যাস অপচয় হয়; বার্নারের প্রজ্জলন শিখা দিয়ে অপচয়ের পরিমাণ হবে ১৪/১৫ দিনের সমান। তবে কাজ শেষে সুইচ বন্ধ করে দেওয়াটাই শ্রেয়, বললেন নেসার আহমেদ।  

এ গ্যাস বার্নারে দুই ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি তিনি মিডিয়াতে এখনই প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেছেন, আমি চাই সবাই এসে দেখে যাক। যদি সবার উপকারে আসে তবে আমি মেকানিক্যাল অংশটি প্রকাশ করে দিবো।  

কী উপকারে আসবে এই ডিজিটাল বার্নার?

এ বিশেষ ধরনের বার্নার বিভিন্ন কল-কারখানায় ব্যবহার করে দেশ ও সরকারের বহু অর্থ বাঁচিয়ে দেয়া সম্ভব। গ্যাসের পাইপ লাইনে চাপ কমে যাবে। অগ্নিকাণ্ডের দূর্ঘটনা রোধ করা যাবে। এছাড়াও গ্যাস তো সাশ্রয় হচ্ছেই।  

কে এই নেসার আহমেদ:

নেসার আহমেদের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ জানুয়ারি। ঢাকা পলিটেকনিক থেকে ১৯৭০/৭১ সালে তিনি পাওয়ার টেকনোলজির উপর ডিপ্লোমা করেছেন। বিভিন্ন সময় তিনি গবেষণা করেছেন। এখনও করছেন। তিন ছেলে এবং এক মেয়ের বাবা নেসার আহমেদের কাছে তার বয়সও হার মানে।

ভবিষ্যতে পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান তিনি। বললেন, দেশের সব কল-কারখানার ধোঁয়াকে রিফাইন করা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করছি।

নেসার আহমেদ তার আবিষ্কার নিয়ে ব্যবসায়িক চিন্তা করেননি। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তরুণদের সাথে কাজ করার। তিনি তরুণদের তার চিন্তার কথা জানাতে চান। তিনি মনে করেন, এ দেশ পরিবর্তন করতে পারে শুধু নতুন প্রজন্ম। তাই তিনি তাদের হাতেই তার সব কিছু তুলে দিতে চান। সরকার যদি চায় তিনি সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, ৩০ জুলাই, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।