চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে রোজা একই সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজা পালনের ফলে দেহে রোগজীবাণুবর্ধক অনেক জীবাণু ধ্বংস হয়।
পূর্ণ এক মাস রোজার ফলে জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি বিশ্রাম পায়। ফলে এগুলো সতেজ হয়। যারা ধূমপান করেন তাদের জিহ্বায় ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এক মাস রোজার সময় ধূমপায়ীরা ধূমপান কম করেন বলে উল্লিখিত রোগগুলো হওয়ার আশঙ্কা কম। এ ছাড়া এক মাস রোজার ফলে জিহ্বায় খাদ্যদ্রব্যের স্বাদও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তাদের বেলায়, যারা অত্যধিক ধূমপান আর পান খেয়ে জিহ্বায় খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ হারিয়েছেন।
আহারের সময় খাদ্যদ্রব্য যখন চিবানো হয় তখন লালাগ্রন্থি থেকে এক প্রকার রস নির্গত হয়, যা খাদ্যদ্রব্য চিবাতে, গলাধঃকরণ ও হজম করতে সাহায্য করে। দীর্ঘ এক মাস রোজার ফলে গ্রন্থিগুলো বিশ্রাম পায় বলে সতেজ হয়। লালগ্রন্থি থেকে অনবরত লালা নির্গত হওয়ায় মুখগহব্বর ভেজা ও পিচ্ছিল থাকে। গ্রন্থিগুলো থেকে কোনো কারণে যদি লালা নির্গত না হয়, তবে তাকে শুকনা মুখ বা xerostomia বলে। তাই পূর্ণ এক মাস রোজার ফলে লালাগ্রন্থিগুলো বিশ্রাম পায় বলে শুকনা মুখ বা xerostomia হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
সারা বছরে পুরো এক মাস রোজা রাখার ফলে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। দৈনিক গড়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা উপবাসের সময় লিভার, কিডনি ও মূত্রথলি প্রভৃতি অঙ্গ বেশ উপকারিতা লাভ করে। যাদের লিভার ও প্লিহা বড় হয়ে গেছে, রোজার ফলে তাদের ওই বর্ধিত অংশ আপনাআপনি কমে আসতে সাহায্য করে। কিডনি ও মূত্রথলির নানা প্রকার উপসর্গ রোজার ফলে নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রোজার ফলে অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে হজমের রস দিনের বেলায় নির্গত বন্ধ থাকে বিধায় তা-ও একমাস বিশ্রাম পায়। ফলে অগ্ন্যাশয়ের কারণে বহুমূত্র রোগ উপশম পাবে।
অতিভোজনের ফলে অনেকেরই পাকস্থলি বড় (Hupertrophy of the Stomach) হয়ে যায়। রোজার ফলে বড় পাকস্থলি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং তার প্রকৃত অবস্থা ধারণ করে। পাকস্থলি একটি বৃহদাকার পেশিবিশেষ। শরীরের অপরাপর পেশির মতো এরও বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। একে বিশ্রাম দেওয়ার একমাত্র পথ এর মধ্যে খাদ্য প্রবেশ না করানো অর্থাৎ রোজা রাখা। মোট কথা রোজার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাদেরকে মাগফিরাত দান করেন।
আল্লাহপাক অঙ্গীকার করেছেন যে, তোমরা যদি রোজা রাখো, তাহলে তোমাদের পেছনের সব গোনাহ মাফ করে দেব। তোমরা যদি নিয়মিত যতœসহ তারাবির নামাজ আদায় করো, তবে ক্ষমা করে দেব। যদি কোনো মুমিন বান্দাকে তোমরা ইফতার করাও তাহলে তোমাদের ক্ষমা করে দেব। তোমরা যতক্ষণ রোজা রাখবে তার প্রতিটি মুহূর্তের বিনিময়ে তোমাদের আমলনামায় ইবাদত লেখা হতে থাকবে। অবিরাম ঝরে পড়তে থাকবে তোমাদের পাপ। এক কথায় রমজান মাস হলো মুমিন বান্দাদের মাগফিরাত লাভের এক মহা মৌসুম। এমন সুন্দর মৌসুম ও সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি পাপমুক্ত হতে পারল না তাকে হজরত জিবরাঈল (আ.) অভিসম্পাত দিয়েছেন।
লেখক : কলামিস্ট
ই-মেইল : [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১১