ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

পর্ব ১৯

রোশনিবাগে শুয়ে আছেন নবাব সুজাউদ্দিন

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
রোশনিবাগে শুয়ে আছেন নবাব সুজাউদ্দিন পর্ব ১৯: রোশনিবাগে শুয়ে আছেন নবাব সুজাউদ্দিন

মুর্শিদাবাদ ঘুরে: ভাগীরথী নদীর পশ্চিমে হাজারদুয়ারী প্যালেসের বিপরীত দিকে রোশনাইবাগ বা রোশনিবাগ। ভাগীরথী নদী পার হলেই দৃষ্টিগোচর হয় ভিন্ন এক মুর্শিদাবাদ।

মুর্শিদাবাদ এখানে সবুজ-শান্ত একটি গ্রাম। এই সুবিশাল বিস্তৃতি গ্রামেরই একটি রোশনিবাগ।

ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে শুয়ে আছেন বাংলার তিন নবাব-সুজা উদ্দিন বা সুজা-উদ-দৌলা, আলীবর্দি খাঁ ও শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।

সুজাউদ্দিনের সমাধি/ছবি: লেখক/বাংলানিউজরোশনিবাগেই সমাহিত আছেন নবাব সুজাউদ্দিন। সুজাউদ্দিনের সমাধি ছাড়াও এখানে আরো চারটি সমাধি আছে। তার দুইটির একটি হচ্ছে বাগদাদ থেকে আগত দরবেশ সফি রহমতুল্লাহ এবং অপরটি হচ্ছে দাতাসাহেব নামে অপর একজন ফকিরের। এই দুই দরবেশের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ৩ থেকে ৭ তারিখ জাকজমকপূর্ণ আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করা হয়।

সুজাউদ্দিন এই বাগানে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ রোপন করেছিলেন বলে জানা যায়। অনেক সুন্দর করেই সাজিয়েছিলেন তার প্রিয় বাগান রোশনিবাগকে।

সুজাউদ্দিনের সমাধি/ছবি: লেখক/বাংলানিউজনবাব সুজাউদ্দিনের পুরো নাম মুতামুল মূলক মির্জা সুজাউদ্দিন মুহম্মদ খা আসাদ জং। সম্পর্কে সুজাউদ্দিন ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁর জামাতা। মুর্শিদকুলি খাঁর কন্যা আজিমুন্নেসা তার স্ত্রী। ১৭২৭ সালের ৩০ জুন মুর্শিকুলি খাঁর মৃত্যুর পর তিনি নবাব সিংহাসনে বসেন।

মুর্শিদকুলি খাঁ ১৭১৯ সালে তাকে ওড়িশার সুবেদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৭৩১ সালে তিনি বিহারের সুবেদারও নিয়োগ পেয়েছিলেন।

সুজাউদ্দিনের সমাধি/ছবি: লেখক/বাংলানিউজ

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কোনো উত্তরাধিকারী না থাকায় তিনি সুজাউদ্দিনের পুত্র তার নাতি সরফরাজ খাকেঁ সিংহাসনের জন্য মনোনীত করেন। কিন্তু জামাতা সুজাউদ্দিন তা মানতে নারাজ। সিংহাসন নিয়ে পিতা-পুত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়। এসময় মুর্শিদকুলি খাঁর পরিবার ও দিল্লির সম্রাটের হস্তক্ষেপে দ্বন্দ নিরসন হয় ও সরফরাজ খাঁ পিতা সুজাউদ্দিনকেই নবাব হিসেবে মেনে নেন।

সুজাউদ্দিনের সমাধি/ছবি: লেখক/বাংলানিউজভাগীরথী নদী পার হয়ে খোসবাগ থেকে রোশনিবাগ প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্ব। কিন্তু রাস্তার অবস্থা তথৈবচ, তাই যেথে প্রায় ঘণ্টা লেগে যায়। রোশনিবাগ বা খোসবাগ, যেকোনোটিই আগে যাওয়া যায়। তবে দুইট দুই প্রান্তে।

খোসবাগ থেকে কিরিটিশ্বরী মন্দির, জগৎব্ন্ধু আশ্রম দেখে তারপরই রোশনিবাগের পথ ধরতে হয়। গ্রামের আকাবাকাঁ মেঠোপথ পার হয়ে রাস্তার প্রায় শেষ প্রান্তে রোশনিবাগ। ১৭৩৯ সালের ২৬ আগস্ট মৃত্যু বরণ করলে তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়।

সুজাউদ্দিনের সমাধি/ছবি: লেখক/বাংলানিউজঅপেক্ষাকৃত ছোট মুঘল স্থাপত্য শৈলিতে গড়া এই সমাধিক্ষেত্রে একটি ছোট মসজিদ আছে। এটি মুঘল স্থাপত্য নকশার একটি বৈশিষ্ট্য। তাজমহল থেকে শুরু করে সুবেহ বাংলার অপরাপর স্থাপনাতেও তার পরিচয় মেলে। ছোট এই মসজিদটি আর প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। প্রাঙ্গনের মাঝখানেই রয়েছে সুজাউদ্দিনের সমাধি। আয়তাকার একটি ভবনের মাঝে তার সমাধি। ভবনের দুই পাশেই প্রবেশ-প্রস্থানের জন্য দরজা আছে, বাকি দুই পাশে আছে জানালা।
ভিডিও: সুজাউদ্দিনের সমাধি

অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই, নেই সেই বাগান, ফোয়ার অথবা পরিবেশে নেই নবাবি মেজাজ। সময়ের সাথে সাথে সবই ফিকে হয়ে আসে। তবুই ইতিহাসের পাতা থেকে নামটি মুছে যায়নি সুজাউদ্দিনের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।