বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। ঢাকা-কলকাতা ছাপিয়ে তিনি এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালির প্রিয় বাউলে পরিণত হয়েছেন।
তবে শাহ করিম প্রদত্ত সুরের বাইরে তাঁর গান বেসুরে গাওয়া হচ্ছে--এমন অভিযোগ করেছেন শাহ আব্দুল করিম তনয় শাহ নুর জালাল ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা।
যেনো কারো দায়বোধ নেই। করিমের সুর বিকৃতি ঘটিয়ে অনেকটা অবাধেই গানের সিডি, ভিসিডি বের হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চ্যানেলে এরকম গান শুনতে পেয়ে মর্মাহত হয়েছেন করিম তনয় জালাল। আক্ষেপের সুরে বাংলানিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন তিনি।
শাহ আবদুল করিমের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনব্যাপী ‘শাহ আবদুল করিম স্মৃতিসম্ভার প্রদর্শন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন বুধবার বাংলানিউজের সাথে একান্তে কথা বলেন তিনি।
আলাপকালে তিনি সংশ্লিষ্টদের বাউলের সুর বিকৃতি বন্ধে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
প্রদর্শনীতে শাহ আবদুল করিমের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ছাড়াও বাউলসম্রাটের বেশি ব্যবহৃত পোশাক, বাদ্যযন্ত্র এবং শুরু থেকে এ পর্যন্ত গানের সব প্রকাশনা সংগ্রহ তিনটি ভাগে সাজানো হয়। আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার এবং তাকে নিয়ে বিভিন্ন লেখাসহ স্মৃতিধর্মী বিভিন্ন জিনিসের প্রদর্শন করা হয়।
এর মধ্যে দুর্লভ হচ্ছে বাউলসম্রাটের হাতের লেখা ১৮টি দলিল ও ৫০টি আলোকচিত্র।
একই অভিযোগ করেছেন শাহ আবদুল করিমের ঘনিষ্ঠজনদের অন্যতম কবি-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু ইমাম। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলানিউজকে তিনি জানান, ‘এমন তো নয় যে সুরগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে করিম ভাইয়ের গানের সুরগুলো আমাদের প্রায় সবার জানা, সেখানে তার সুর বদলে ফেলা মোটেই উচিত নয়। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বেসরকারি চ্যানেলে সম্প্রতি করিমের গান বিকৃত করে গাইতে শোনা গেছে। বিষয়টি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ’
আরো জানান, ‘এখানে বিতর্কের অবকাশ নেই যে শাহ আবদুল করিমের গান দুইভাবে গাওয়া হয়। শাহ আবদুল করিমের বই সামনে রেখেও অনেকে বিকৃতি করে গাইছেন বলেও জানান তিনি। ’
‘এভাবে গান ও সুর বিকৃত করার অধিকার কারো নেই’- বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ অবস্থায় আইন করে কিছু করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য আমাদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ’
রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা থাকার কারণে সেসব গান বিকৃত করার সুযোগ কেউ পায় না। ’
এছাড়া তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কাছে শাহ আবদুল করিমের গানের স্বরলিপি সংরক্ষণের দাবি জানান। আর বিকৃত করা গানগুলো শাহ আবদুল করিমের শিষ্যদের দিয়ে যাচাই করলেই ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান।
তাঁর গ্রামের বাড়িতে একটি স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হলে শাহ আবদুল করিমের সব গান ও সুর সংরক্ষণ করা সহজ হবে বলে জানান তাঁর ভাবশিষ্য আবদুর রহমান।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১