বিশ্বব্যাপী খবর বাড়ছে প্রতিদিন। বাড়ছে খবরের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান এবং তা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমের সুবাদে।
একসময় সংবাদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল কাগজ বা মুদ্রিত সংবাদপত্র। এখন সময় দ্রুত বদলে যাচ্ছে, বদলাচ্ছে মানুষের চাহিদা আর জীবনযাপনের ধরন। এর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছে ছাপা কাগজের সংবাদপত্র।
আমেরিকান জার্নালিজম বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য পয়েন্টার ইন্সটিটিউট’-এর এক জরিপে দেখা গেছে, সংবাদের উৎস হিসেবে জনপ্রিয়তায় কাগজের দৈনিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে অনলাইন দৈনিকগুলো। এগিয়ে যাবেই বা না কেন! কাগজের দৈনিকে যেখানে আজকের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে আগামীকাল, সেখানে অনলাইন ডেইলিগুলো পাঠককে মুহূর্তের সংবাদ মুহূর্তেই পৌঁছে দিচ্ছে।
মুহূর্তের খবর মুহূর্তে পৌঁছে দিতে অনলাইন পত্রিকাগুলো কাগজের পত্রিকার চাইতে পাঠকের কাছে আগে সংবাদ নিয়ে (ব্রেকিং নিউজ) নিয়ে হাজির হচ্ছে। তাই দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হয়ে পড়ছে অনলাইন দৈনিক বা নিউজ এজেন্সিগুলো। এখনকার পাঠকও সবার আগে সর্বশেষ পেতে চান। অনেক দেশেই ক্রমাগত কমছে মুদ্রণশিল্পের প্রকাশনা। প্রযুক্তির বিকাশে অনলাইন ডেইলিগুলোর কারণে মানুষ এখন খবরের জন্য ছাপা পত্রিকার বদলে এখন চোখ রাখছে কম্পিউটারে।
খোদ নিউইয়র্ক টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক বিল কেলার সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, অনলাইন ডেইলির কারণে তাদের প্রচারসংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমেছে। তিনি দুই বছরের মধ্যে উন্নত বিশ্বসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও অনলাইন ডেইলির কারণে কাগজের পত্রিকা বড় ধাক্কা খাবে বলে মন্তব্য করেন। উদাহরণস্বরূপ ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন কোনো সংবাদপত্রের স্টল পাওয়া যায় না। কোনো হকারকে দরজার ফাঁকে বাসার ভেতরে সংবাদপত্র ঢুকিয়ে দিতেও আর দেখা যায় না।
গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় কাগজের দৈনিক প্রায় উধাও বললেই চলে। ইউরোপের অনেক জায়গায় সংবাদপত্র স্টলও (`কিওস্ক`) এখন আগের মতো দেখা যায় না। পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন কাগজের পত্রিকার প্রচারসংখ্যা কমছে।
জার্নালিজমবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য পয়েন্টার ইন্সটিটিউটের জরিপে দেখা যায়, অনলাইন সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট এখন অনেকের কাছেই তাদের সংবাদের প্রধান উৎস। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪১ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, তারা তাদের সংবাদের প্রধান উৎস হিসেবে অনলাইনকেই বিবেচনা করে থাকেন। ৩১ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, তাদের সংবাদের প্রধান মাধ্যম ছাপা সংবাদপত্র। জরিপের আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হচ্ছে, অনলাইন ডেইলিগুলোর প্রধান পাঠক টিনএজ থেকে মধ্যবয়স্করা। তবে তরুণরাই অনলাইন দৈনিকের ওয়েবসাইটে বেশি ক্লিক করে থাকেন। আমেরিকায় পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল শুধু আমেরিকার জন্যই প্রযোজ্য নয়, বিশ্বব্যাপীই বাড়ছে অনলাইন সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তা। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার। আর এর সঙ্গে তাল মেলাতেইিএরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় সব প্রধান সংবাদপত্রই তাদের অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করেছে।
আমাদের দেশে এখনও কাগজের দৈনিকের প্রভাব থাকলেও প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে মানুষ এখন অনলাইন দৈনিকগুলোতেও ভিজিট করছে। বাড়ছে অনলাইন দৈনিকের পাঠকসংখ্যা। অনেকেই বাসায় বা অফিসে ছাপা পত্রিকা রাখলেও তাৎক্ষণিকভাবে খবর জানার জন্য প্রথম চোখ রাখছেন ইন্টারনেটে।
সময়ের হাত ধরে আমাদের দেশেও অনলাইন দৈনিকগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাঠকরা খবরের কাগজ কিনলেও সংবাদের আপডেট জানতে আগে ভিজিট করছেন অনলাইন দৈনিকগুলো। বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে ক্রমাগত। দেশের মানুষও এখন অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। সংবাদ হয়ে পড়ছে মানুষের কাছে এখন এক বিনোদন।
বছর দুয়েক আগেও বাংলাদেশের সংবাদপত্র বিদেশে যেত। প্রবাসীরা আজকের দৈনিক পেতেন ৩-৪ দিন পর। অনলাইনের যুগে এখন আর দেশের বাইরে কোনো সংবাদপত্র যায় না বললেই চলে। কারণ কম্পিউটারের এক ক্লিকেই তারা জানতে পারছেন পৃথিবীর খবর। মাউসের ক্লিকেই প্রবাসীদের চোখে ভেসে আসছে সচিত্র বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে সংবাদের বিশ্বে ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুতহারে। আর তার সাথে প্রতিযোগিতায় মুদ্রিত সংবাদপত্র কতদিন টিকে থাকে, সেটাই দেখার বিষয়।
[email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৭১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১