ঢাকা, রবিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

মিস্টার২৪

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:২৯, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১১
মিস্টার২৪

নাম ইওয়ান্দরি হারনান্দেজ গারিদো। সবাই ডাকতো হারনান্দেজ।

কিউবার নাগরিক হারনান্দেজ এর বর্তমান বয়স ৩৭। স্ত্রী এবং ১০ বছর বয়েসি এক ছেলের বাবা হারনান্দেজ কিউবার ইস্টার্ন সিটিতে পর্যটনকারী ট্যুরিস্টদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। পর্যটকদের অনুরোধে মুহূর্তে তরতর করে উঁচু উঁচু পাম গাছে চড়া, পটাপট ডাব কেটে দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে ছবি তোলায় পোজ দেওয়া হারনান্দেজের এখন নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্যুরিস্টদের মন যুগিয়ে তার আয়ও হচ্ছে বেশ ভালো। শুধুমাত্র একজন ট্যুরিস্টের সঙ্গে ছবি তোলায় পোজ দেওয়ার জন্যই তিনি পান ১০ ডলার। অন্যদিকে কিউবায় একজন সাধারণ চাকুরে মাস শেষে পান মাত্র ২০ ডলার।

সব মিলিয়ে হাভানায় পরিবার আর নতুন বান্ধবী নিয়ে সুখেই দিন কাটছে হারনান্দেজের।

ট্যুরিস্ট কিংবা শহরের কেউই এখন আর তাকে ইওয়ান্দরি হারনান্দেজ গারিদো বা হারনান্দেজ বলে ডাকে না। সবার কাছে তিনি এখ ‘টুয়েন্টি ফোর’ বা ‘জনাব চব্বিশ’। ছেলে বুড়ো সবাই তাকে এখন ডাকে ‘মিস্টার টুয়েন্টি ফোর’ নামে! আর ২৪ সংখ্যাটিই মূলতঃ তার ভাগ্য পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

কেন তাকে মিস্টার ২৪ ডাকা হচ্ছে! শরীরে ৪টি আঙ্গুল বেশি থাকার কারণে হারনান্দেজকে এ নামে ডাকা হচ্ছে।

তার দুই হাত ও দুই পায়ের প্রত্যেকটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১টি করে আঙ্গুল বেশি রয়েছ। অর্থাৎ ৫টির জায়গায় তার প্রতি হাত-পায়ে আঙ্গুলের সংখ্যা ৬টি করে। আর এ কারণেই তাকে ‘মিস্টার ২৪’ নামে ডাকা হচ্ছে। তার ২৪ আঙ্গুল থাকাটাই ট্যুরিস্টদের কাছে অন্যতম এক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের বিরাট অংশ স্যুভেনির বা স্মৃতিস্মারক হসেবে তার সঙ্গে অন্তত এক পোজ ছবি তোলার সুযোগ ছাড়তে চান না।    

বাড়তি ৪টি আঙুল থাকার বিষয়ে হারনান্দেজ বলেন- ‘প্রথম দিকে আমি আমার হাতে আর পায়ে যে অতিরিক্ত ৪টি আঙুল রয়েছে তা জানতামই না। এটি প্রথমে জানতে পারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় একদিন। একদিন ক্লাস টিচার আমাকে জিজ্ঞেস করেন- ৫ এর সঙ্গে ৫ যোগ করলে কত হয়?

খুবই ছোট আর ভীতু থাকায় আমি প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলাম। তিনি আমাকে আমার দু’হাতের আঙুল গুণে বলতে বললেন। আমি আঙুল গুণে বলেছিলাম- ১২। শুনে টিচার খুব রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটিই ছিল সত্যি। পরে আমার দু’পায়েও গুণে পেয়েছিলাম ১২টি আঙুল। অর্থাৎ সর্বমোট ২৪টি। এখন আমি জানি ২৪টি আঙুল একজন মানুষের জন্য অস্বাভাবিক কিন্তু তারপরও আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। কারণ ২৪ সংখ্যা অর্তাৎ ২০টির স্লে ২৪টি আঙ্গুল থাকার বিষয়টিই আমার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি কিউবায় অনেক পেশাজীবীর তুলনায় ভাল আছি। ’

হারনান্দেজের এ ধরনের বৈশিষ্টের কথা জেনে কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর ব্যক্তিগত অর্থোপেডিক ফিজিসিয়ান পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেছেন- “মানুষের হাতে পায়ে স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে অধিক আঙুল থাকলে এটাকে ‘পলিডাক্টাইল’ বলে। পলিডাক্টাইল এর ক্ষেত্রে সবগুলো আঙুল সাধারণত স্বাভাবিক হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়তি আঙুলগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা অস্বাভাবিক আকৃতির হয়। তবে হারনান্দেজের সবগুলো আঙুলই সুস্থ-সবল এবং স্বাভাবিক। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি সত্যি বিস্ময়কর! এমনটি আমার জীবনে আর দ্বিতীয়বার দেখিনি। ’

আসাদুল হক খোকন, বাংলানিউজ পাঠক

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।