ঢাকা, রবিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

একটি আড্ডার গল্প

ফেরদৌস আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫৯, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১১
একটি আড্ডার গল্প

এক রোববারের রাত সাড়ে আটটা। আড্ডায় মধ্যমণি বিলেতের বহুল প্রচারিত সুরমা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আহমদ ময়েজ।

সাথে আরো দুজন অতিথি সৈয়দ মবনু ও সৈয়দ মারুফ। একজন লেখক, অন্যজন চাকরিজীবী।

আড্ডায় একে একে উঠে এলো বাঙালি, ছোটকাগজ, কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী, বুদ্ধিজীবী, বাউলগান, প্রকৃতি, পর্যটন ও উপস্থিতিদের স্বভাব চরিত্র ও বিভিন্ন অনুষঙ্গ। কেউ একেবারে চুপচাপ আবার কেউ অনর্গল কথা বলতে ভালোবাসেন। আড্ডার মধ্যখানে ঢুকে গেলেন বাংলানিউজের ফিচার সম্পাদক কবি সৈকত হাবিব। তিনি আহমদ ময়েজের সাথে মুঠোফোনে বিলেত ও দেশের কবি, কবিতা, লেখালেখির খবর নিলেন।

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপু শুরু করেন কুনোব্যাঙ দিয়ে। তারপর একসময় নিজেকে নমঃশূদ্র বলা থেকে শুরু করে দেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলাপ করতে করতে একসময় গিয়ে চাড়াল পর্যন্ত পৌঁছলেন। আহমদ ময়েজের তর সইলো না। তিনিও ফাঁকে ঢুকে পড়ে নিজেকে নমঃশূদ্র বলে পরিচয় দিলেন এভাবে : তার গ্রাম সুনামগঞ্জের সৈয়দপুরে একজন নমঃশূদ্র জাতের প্রাইমারি শিক্ষক ছিলেন। উনি শিক্ষক হলেও শেষ পর্যন্ত সামাজিক অবহেলার শিকার হয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে সন্যাসব্রত গ্রহণ করেছিলেন। একদিন আহমদ ময়েজের বাবা ওই শিক্ষকের পায়ে ধরে তাঁকে প্রণাম করিয়ে নমঃশূদ্রে দীক্ষিত করে নেন।

আহমদ ময়েজ আমাদের ঝুলি সমৃদ্ধ করলেন এই বলে যে, বিলেতে বাংলা সাহিত্যের জাগরণ শুরু হয় মূলত আশির দশক থেকে। তিনি বলেন, সুরমা পত্রিকার সাময়িকী পাতায় ২০০৩ সালে ফরিদ আহমদ রেজা ‘বিলেতের পাঁচ রাজপুত্র’ নামে কবিদের ওপর সিরিজ লেখেন।

একসময় তিনি আরো অগ্রসর হয়ে বলেন, এখন সুরমা, জনমত, সাপ্তাহিক পত্রিকা, বাংলা কাগজ, বাংলা পোস্ট, নতুন দিন, ছোটকাগজ ভূমিজসহ অনেক নিয়মিত ও অনিয়মিত পত্রিকা বের হয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের খোরাক যোগাচ্ছে। তিনি বিলেতের বুদ্ধিজীবীসহ শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাট, খেলাঘরের কথাও টেনে আনলেন আড্ডায়।

কবি ও বাঙালি বিষয়ে তার অভিমত, পৃথিবীর সবখানে বাঙালিরা বাংলা ভাষায় কথা বলবে এই যুক্তিতে না গিয়ে যে যে ভাষায়ই কথা বলুক না কেন সে তার শেকড়ের কথা বলবে এবং মনেপ্রাণে শেকড়কে আঁকড়ে ধরে রাখবে, এটাই যৌক্তিক।

স্থানীয় প্রকাশিতব্য সাপ্তাহিক পূর্বদিক (পুবেদি)-এর সম্পাদক ও কবি মুজাহিদ আহমদ হাসিঠাট্টায় ভরিয়ে রাখলেন আড্ডার পুরো সময়। আর প্রকাশক ও কবি সৈয়দ মবনু একগাল দাড়ি নিয়ে তার বিলেত ফেরতের গল্প শোনালেন। আড্ডার ফাঁকে একসময় সরব হলেন ছড়াকার ও সাংবাদিক আবদুল হামিদ মাহবুব। ধবধবে সাদা চুলের মানুষটির বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। কথা বলেন কম, কাজে বেশি। আবার মাঝেমধ্যে তিনি থামতে না।

মৌলভীবাজার শহরের তার আরামবাগের বাসায় আড্ডার এক পর্যায়ে তিনি সবার কথায় সায় দিয়ে বললেন, ইদানীং তার ছেলে নাজমুস সাদায়াত ইফাদ (দশম শ্রেণীর ছাত্র) সৈয়দ শামসুল হকের লেখালেখি পড়ায় মন দিয়েছে। মাঝেমধ্যে তাঁর লেখার বিভিন্ন পটভূমিকার আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে সে।

কবি জয়নাল আবেদীন শিবু ছবি তোলার কাজ করেছেন সুচারুভাবে। কিন্তু এরই মাঝে আমাদের পাপড়ি আপার (লেখক লতিফা নিলুফার) অনুপস্থিতি খুবই মিস করেছি সবাই।

রাত সাড়ে এগারোটায় আড্ডার শেষপ্রান্তে এসে সবাই একমত হলাম, পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমরা থাকি না কেন আমাদের পরিচয় বাঙালি। তাই একসময় নাড়ির টানে শেকড়ের টানে আমরা ফিরে আসবো আমাদের মাতৃভূমিতে সশরীরে অথবা সাদা কাফনে।

মাহবুব ভাইর বাসা থেকে রাতের খাবার খেয়ে এই দিনে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছিলো মনে করে যে যার গন্তব্যের দিকে রওনা হলাম।  

বাংলাদেশ সময় ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।