ঢাকা, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জুন ২০২৫, ০৫ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

বিশ্ব বদলে স্টিভের পাশে ওজনিয়াক!

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২৪, অক্টোবর ১২, ২০১১
বিশ্ব বদলে স্টিভের পাশে ওজনিয়াক!

বিশ্ব বদলে দেওয়া স্টিভ জবস পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি চলে গেলেও বিশ্ব তার কাছে কৃতজ্ঞ।

কারণ প্রযুক্তিকে তিনি দিয়েছেন ভিন্ন মাত্রা। তাকে প্রযুক্তি বিশ্বের বিজ্ঞানী বলা হয়। তবে তিনি বিজ্ঞানী নন। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী এবং আইডিয়া মেকার। স্টিভ জবস চলে যাওয়ার পর অ্যাপল নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু একজন মানুষ বরাবরের মতই রয়েই যাচ্ছেন অন্তরালে। তিনি হচ্ছেন অ্যাপেলের সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক। পুরো নাম স্টিফেন ওজনিয়াক।

স্টিভ ওজনিয়াক হচ্ছেন জবসের বন্ধু। দুজনই ৭০ দশকের দিকে একসঙ্গে মেইনফ্রেম কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতেন। তখন থেকেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জবস হুট করে একদিন ওজনিয়াককে বললেন, তিনি প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডে অ্যাসেম্বল করা কম্পিউটার তৈরি করে বিক্রি করতে চান। এটা শুনে ওজনিয়াকের মাথায় হাত! এও কি সম্ভব? সফটওয়্যারের সমস্ত বিষয় জবস দেখবেন বলেও ওজনিয়াককে জানিয়ে দিলেন। সেই সাথে ওজনিয়াককে বলা হলো, কম্পিউটারটির হার্ডওয়্যার ডিজাইন করতে। কাজ শুরু করলেন দুজনেই।

ওজনিয়াক মনে মনে এমনই কিছু একটা করতে চাচ্ছিলেন। তিনি ভিন্ন ধরনের কম্পিউটার তৈরি করার স্বপ্ন লালন করছিলেন। অন্যদিকে জবসের মনে ছিল ব্যবসা করার স্বপ্ন। দুজনের স্বপ্ন একজায়গায় দাঁড় করানো হলো। জসব এবং ওজনিয়াক রাতভর কাজ করে চলেন। জবসের শোবার ঘর ভরে গেলো কম্পিউটারে। অন্যদিকে ওজনিয়াকেরও একই অবস্থা।

ডিজাইন শেষ হওয়ার পর দুজনের কাছেই বিষয়টি ছেলেখেলা মনে হলো। আশানুরূপ সাফল্য আসলো না। দুজনের মন খারাপ। কিন্তু মনের ভেতর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠলো। ভাবলেন, একসঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। জবস তখন শোবার ঘর থেকে কাজকে বের করতে চাইলেন। তাই দুজনের ঘর থেকে সমস্ত যন্ত্রপাতি এসে ভিড় করালেন  জবসের গ্যারেজে। শুরু করে দিলেন স্বপ্নকে সত্য করার প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন ‘অ্যাপেল’। আর সেই অ্যাপেল বদলে দিলো পৃথিবী।

স্টিফেন ওজনিয়াক জন্মগ্রহণ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৫০ সালে। ছোটবেলা থেকেই ওজনিয়াক ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নিয়ে খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন। তারা যে এলাকায় থাকতেন সেখানে একবার সব ছেলেমেয়েরা মিলে এক বাসা থেকে আরেক বাসায় লম্বা তারের মাধ্যমে ইন্টারকম সার্ভিস চালু করতে সক্ষম হয়। যা দেখে এলাকার মুরুব্বিরা বিস্মিত হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবি ছিলেন ওজনিয়াক। তবে মজার বিষয় ছিল যে, স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক হয়ত এক সুতোয় গাঁথা ছিলেন। তা না হলে কি, এতো মেধাবী হওয়ার পরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে চলে আসেন?

১৯৭৫ সালে অ্যাপেল চালু করার পর থেকে ওজনিয়াক নজর দেন হার্ডওয়্যারের দিকে। তিনি নিজে সার্কিট বোর্ড ডিজাইনের কাজ করতেন; এবং তিনিই প্রথম অ্যাপল-১ এর জন্য অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেন। অ্যাপল -১ ডিজাইন করার পর মানুষের ঘরে কীভাবে কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়া যায় সে ভাবনায় লিপ্ত হন। মানুষের হাতের নাগালে এবং আরও সহজবোধ্য কি করে করা যায় সেখানটাতেও নজর দেন। স্টিভ জবস এ বিষয়গুলো নিয়ে দিন-রাত কাজ করতেন।

১৯৭৬ সালের ১ মার্চ তারা অ্যাপেলের নাম বদলে দেন ‘অ্যাপেল কম্পিউটার’। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল। দুজন তখন প্রযুক্তি জগতে অন্যরকম মানুষ। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটলো দূর্ঘটনা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের প্রাইভেট বিমানে ভ্রমণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ওজনিয়াক। বহুদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাটান। একসময় স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন। মনেই করতে পারছিলেন না তার কি হয়েছে? কিভাবে তিনি হাসপাতালের বিছানায় আসলেন? এসব কিছু স্টিভ জবসকে বিমর্ষ করে তুলতো। কারণ তখনই অ্যাপেলের পরিচালনা পর্ষদের সাথে দ্বন্দ তৈরি হয় স্টিভের। এমন সময়ে কাছের বন্ধু বিছানায় পড়ে আছে। বিপদে বন্ধুর সহযোগিতাও পাননি স্টিভ জবস।

একসময় ওজনিয়াক সুস্থ হন। কিন্তু আর কাজে ফেরেননি। কাজ না করে তিনি পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আবার প্রবেশ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ওজনিয়াক অ্যাপলে ইস্তফা দেন। বন্ধুকে নিয়ে নিজ হাতে গড়ে তোলা অ্যাপল থেকে বিদায়ের সময় বিমর্ষ হয়ে উঠেন ওজনিয়াক। সে সময় স্টিভ জবসও কোম্পানিতে নেই। কিন্তু বন্ধুর সাথে সবসময় যোগাযোগ তার ছিল। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি বন্ধুর পাশে ছিলেন।

ওজনিয়াকের কৃতিত্ব জবসের থেকেও কোন অংশে কম বললে ভুল হবে। ওজনিয়াক প্রথম ইউনিভার্সেল রিমোট কন্ট্রোল ডিজাইন করেন। এমনকি জিপিএস টেকনোলজির উদ্ভাবকও তাকেই বলা হয়। জিপিএস তারই প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হুইলস অব জিয়ুস থেকে নির্মিত। তবে ২০০৬ সালে তার এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। একই বছর তিনি তার অটোবায়োগ্রাফি বই প্রকাশ করেন। এ বইতে জবসের সঙ্গে কী করে প্রযুক্তি বিশ্বকে বদলে দিয়েছেন; সে গল্পই আছে।

মাত্র দুজন মানুষের প্রচেষ্টায় গ্যারেজ থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চায় পৌঁছে যেতে পারে একটি প্রতিষ্ঠান। সে প্রমাণই রাখলেন স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক। দুই বন্ধু ভাবনা-চিন্তা একসঙ্গে মিশে একাকার হয়ে আজ বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান অ্যাপেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।