প্রতিদিন আমাকে মগবাজার ওয়্যারলেস থেকে বাংলামটর যেতে হয়। আমার অফিস বাংলামটরে।
মগবাজার থেকে বাংলামটর যাবার রাস্তাটি সরকারি। সঙ্গত কারণে এ রাস্তায় চলাচলের নাগরিক অধিকার আমার আছে। আমার জানা মতে, রাস্তা দুই ভাগে তৈরি হয়। একটা যানবাহন চলাচলের জন্য। আর অন্য অংশ সাধারণ মানুষের পায়ে হাঁটার জন্য। এটাকে ফুটপাথ বলা হয়।
রাস্তার ফুটপাথ দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। আর রাস্তাজুড়ে গাড়ি ডিসপ্লে। এমন অদ্ভুত দৃশ্য যদি দেখতে হয়, তবে মগবাজার থেকে বাংলামটরের রাস্তায় একবার আসতে হবে। এ রাস্তায় হাঁটার সময় দু পাশে একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। চোখে পড়বে সারি সারি প্রাইভেট কার, মটর সাইকেল। কোথাও কোথাও মটর সাইকেলের শো-রুম ও রয়েছে। এসব শো-রুমের মটর সাইকেলগুলো রুমের চেয়ে বাইরে ডিসপ্লে করা হয়েছে বেশি। দেখে মনে হতে পারে এটা নিশ্চয়ই মটর সাইকেল পার্কিং স্পেস। সরকারি রাস্তার অধিকাংশ অংশজুড়ে এসব মারটসাইকেল ডিসপ্লে করা আছে। সরকারি রাস্তা বন্ধ করে কে বা কারা এসব ব্যবসা করছে এবং কেন করছে তা প্রশাসন জানেন। অথচ প্রতিদিন দুই থেকে তিন গাড়ি পুলিশ এখানে ডিউটি করে। র্যাব আসে, প্রশাসনিক অফিসাররাও আসা-যাওয়া করেন। তবে কি বলবো সরকারি রাস্তা লিজ দেওয়া হয়েছে!
উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত আরজি, সাধারণ জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা করে অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
যানজট নিরসনে রিকশা চলচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন রাস্তায়। আমরা সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি। অসুস্থ রোগীকে ধরে ধরে রাস্তা পার করতে দেখেছি ট্রাফিক পুলিশকে। তখন মনে মনে ভেবেছি, আহা কুসুমকুমারী দাশের সেই ছেলের বুঝি জন্ম হয়েছে। এরা কথায় নয় কাজে বড়ো। আইনের প্রতি কতো শ্রদ্ধাশীল, অসুস্থ রোগী পর্যন্ত রিকশায় করে যেতে দেয় না। তার পরের চেহারা ভিন্ন। হাত পেতে পাঁচ টাকা নিয়ে রিকশা ছেড়ে দিতে দেখেছি সুস্থ মানুষদেরও। এসব দেখে কি মনে হয়, আসলে এরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল? রিকশা বন্ধ করেও কি যানজট কমেছে! বরং রাস্তাটি এখন মটর মেকানিকদের দখলে। সমস্ত রাস্তাজুড়েই নৈরাজ্য চলছে। প্রশাসনের কারো দৃষ্টিতে কি একবারও পড়ে না?
দেশের বাইরের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি ঢাকায় কেন যানজন লেগে আছে। সরকার যত কিছুই করুক, দরকার হলে বাস চলাচল বন্ধ করলেও যানজট নিরসন সম্ভব নয়। বর্তমানে ঢাকা একটি বস্তিবহুল শহরে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো দেশের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে বস্তি আছে কি না আমার জানা নাই। অথচ, ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে বিরাট এক বস্তি রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দলগতভাবে বস্তি রয়েছে। এ দেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের প্রত্যেকের দখলে রয়েছে একাধিক বস্তি। এটা কি কোন সভ্য দেশের নমুনা হতে পারে? শুধু তাই নয়, ঢাকার গুরুত্বপূর্র্ণ স্থানগুলোতে গড়ে উঠেছে বড় বড় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি। এই গার্মেন্টসের বহু শ্রমিক বস্তিতে বসবাস করে। সঙ্গত কারণে বস্তি এবং গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রাজধানী ঢাকার আয়তন খুব বেশি নয়। এর বড় এলাকাজুড়ে রয়েছে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি। এখানকার শ্রমিকদের জন্য নেতাদের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে বস্তি।
সরকারি অফিস-আদালতের কাছাকাছি সরকারি কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টার বরাদ্দ করা হয়েছে। আর বাকি থাকে সামান্য অংশ। এর অধিকাংশ এখন ডেভেলপারদের দখলে। বাকি অংশ স্থানীয়দের নিজস্ব বাড়ি। যাদের সামর্থ আছে, তারা ফ্ল্যাটের গর্বিত মালিক হয়েছে। বাকি আমাদের মতো মধ্যম শ্রেণীর মানুষেরা তথাকথিত বাড়িওয়ালাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। যারা না পারছে বস্তিতে বাস করতে, না পারছে সরকারি বরাদ্দকৃত প্লট বা কোয়ার্টারে থাকার সুবিধা। না পারছে ফ্ল্যাট কিনতে।
অধিকাংশ সময়েই টক শোগুলোকে শোনা যায় পরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ে চায়ের কাপে ঝড়। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা এই প্রকল্প নিয়ে রাত দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন। অথচ ফল বৃথা। এরা কি বিদেশে গিয়ে সেখানকার রাজধানী দেখে নিজের রাজধানীর কথা ভাবেন না! তখন কি মনে হয় না, আহা আমার রাজধানী যদি এমন হতো! যদি তাদের সেসব রাজধানী দেখার সুযোগ না হয়ে থাকে, তবে সরকারি খরচে না হলেও নিজের খরচে একবার বাইরের দেশের রাজধানী দর্শনের জন্য তাদের যাওয়া উচিত। তাদের দেখা উচিত রাজধানীকে কীভাবে যানজটমুক্ত ও দূষণমুক্ত রাখতে হয়। শুধু শুধু গলাবাজি না করে আর কোটি কোটি টাকা অপচয় না করে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে। না হলে আমাদের সামনে সমূহ বিপদ।