ভারতের গুজরাট রাজ্যের ছোট্ট মফস্বল শহর সিয়ানি। এখানে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা এতই বেশি যে, একে প্রশ্নাতীতভাবেই চিরকুমারদের গ্রাম বলা যায়।
সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরের মধ্যে এবার ছেলেশিশুর তুলনায় কন্যাশিশুর অনুপাত সর্বনিম্ন। ২০০১ সালে প্রতি হাজার পুরুষের বিপরীতে নারী ছিল ৯৩৩ জন। সেই সংখ্যা ২০১১ সালে এসে নেমে গেছে ৯১৪-তে।
এই অসম অনুপাতের কারণ হিসেবে দেখা গেছে, জন্মনিরোধক প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ও সহজলভ্যতা, সংসারের উপার্জনকারী হিসেবে ছেলেশিশু কামনা করার দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য এই দুইয়ে মিলে কন্যাশিশুর গর্ভপাত ঘটানো এবং কন্যাশিশু হত্যার প্রবণতা ভয়াবহ রকম বেড়েছে। ভারতের মতো বিশাল ভূখণ্ডের দেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব নিয়ন্ত্রণ খুবই দুরুহ।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার সাংবাদিক সিয়ানি এলাকা সফর করেছেন। এই মফস্বল শহরের লোকসংখ্যা মাত্র ৮ হাজার। সেখানে নারী-পুরুষের অনুপাত এতটাই অসম যে, বিয়ের কনে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
শহরটি ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ বয়োপ্রাপ্ত পুরুষই অবিবাহিত। এর পেছনের কারণ অবশ্য একাধিক। শিল্পায়নের অভাব, নিজেদের বর্ণের বাইরে বিয়ে করতে আপত্তি এবং সর্বশেষ কনের ভয়াবহ অপ্রতুলতা।
এখানে ৩৫ বছরের বেশি বয়স এমন ৩৫০ জন পুরুষ অবিবাহিত। ভারতের একটি গ্রামের জন্য এই হিসাব নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। কারণ এ অঞ্চলের পুরুষরা কমবেশি ১৫ বছর বয়সের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলে। ৩৫ বছরের নিচে বয়স এরকম কয়েক শত অবিবাহিত পুরুষ আছেন। তবে সঠিক সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ স্থানীয় আবার কেউ বাইরে থেকে এসে বসতি গড়েছেন কয়েক দশক আগে। কিন্তু সবার সমস্যা একই। তাদের এক কথা, ‘আমি আসলে বিয়ে করতে পারছি না। ’ এমনকি এমন ধরনের লোকও আছেন যিনি ১৫ বছর বয়স থেকে কনে খুঁজতে শুরু করেছেন, সেই থেকে ২০ বছর ধরে তিনি খুঁজেই চলেছেন।
এই শহরে পুরুষেরা কয়েকজন মিলে একসঙ্গে থাকেন, একই জায়গায় কাজ করেন এবং ধোয়া-মোছা এবং রান্নার কাজও নিজেরা করেন।
তারা জানান, বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলেও কনের অভাবে তা পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এভাবে একসঙ্গে থাকা। তাতে কিছুটা সুবিধা হয়। তবে মজার বিষয়, একই ধরনের সমস্যাগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ অত্যন্ত দৃঢ়। এরা সবাই সবার খোঁজখবর রাখেন। পরস্পরকে দেখাশোনা করেন।
তবে ১২০ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বের সবেচ বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জন্য এটা অশনি সংকেত। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন যে হারে কন্যাশিশু হত্যা করা হয় তা রীতিমতো ভয়াবহ। আর সিয়ানিতে এ সমস্যা কঠিনভাবে দেখা দিয়েছে। এখানে প্রতি হাজার ছেলেশিশুর বিপারীতে এখন মাত্র ৭৭৫ জন মেয়েশিশু। এটা খুবই ভাবনার বিষয়, যেখানে বেশির ভাগ পুরুষের কোনো পরিবার নেই, আর অনাগত মায়েদের জন্ম রহিত।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৭০০ কোটিতে। পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে হু হু করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু সবচে বড় গণতন্ত্রের দেশ, উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভারতের ভবিষ্যৎ কী? কী অপেক্ষা করছে ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য?
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১১