ঢাকা, বুধবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জুন ২০২৫, ০৭ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

গাদ্দাফির ৩০ কুমারী দেহরক্ষী

সুকুমার সরকার, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৫, অক্টোবর ২১, ২০১১
গাদ্দাফির ৩০ কুমারী দেহরক্ষী

ঢাকা: গাদ্দাফি নামটা শুনলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক স্বৈর শাসকের প্রতিচ্ছবি। কেননা তিনি যে স্টিমরোলার চালিয়ে দেশটা শাসন করে গিয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।



মনটা শক্ত হলেও তার ভেতরটা যে বেশ দুর্বল ছিল তা অনেকেই ভেবে থাকতে পারেন। সেটা স্বাভাবিক। কেননা নারীর প্রতি তার দুর্বল চিত্তটা বেশ ভালভাবেই প্রকাশ পেয়েছে সবার কাছে।

আর তাই স্পষ্টভাবে বলা চলে- তিনি সবার চোখে ধূলা দিতে  নিয়োগ দিয়েছিলেন কুমারী দেহরক্ষী। তাও আবার একজন বা দু’জন নয়- একেবারে তিরিশ সশস্ত্র নারী দেহরক্ষী। আর তারা ছিলেন স্রেফ কুমারী।

আর এই নারী দেহরক্ষী হিসেবে বেছে নেওয়া হতো আকর্ষণীয় সুঠাম দেহের কুমারীদের। অর্থাৎ এক কথায় যাকে চোখে দেখামাত্র সহজে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যেত না এমনটাই বেছে নেওয়া হতো।

তবে অনেকে বলে থাকেন তিনি- আবার কোন পুরুষের ওপর বিশ্বাস বা আস্থা রাখতে পারতেন না। তাই তিনি নারী দেহরক্ষী বেছে নিয়েছিলেন। নিজেই তো জবরদস্তিভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

তবে  আকর্ষণীয় ও সুঠাম দেহের কুমারী দেহরক্ষী নিয়োগ নিয়ে কেউ কোনদিন তার কাছে কোন প্রশ্ন করেননি বা তিনিও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেছেন বলে  এমনটাও শোনা যায়নি।

যাইহোক, এটা গাদ্দাফিই ভাল জানতেন যে,  কি কারণে তিনি কুমারী দেহরক্ষী বেছে নিয়েছিলেন। তবে ১৯৯৮ সালে গাদ্দাফি যখন আক্রান্ত হন তখন তাকে রক্ষা করতে এক কুমারী দেহরক্ষী কোন দ্বিধা না করেই জীবনটা  বিলিয়ে দিয়েছিলেন।

আক্রমনকারীদের বুলেটে দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল ওই কুমারী দেহরক্ষীর আর আহত হয়েছিলেন অপর দুই দেহরক্ষী। ১৯৭০ সাল থেকেই গাদ্দাফি ভরসা রাখতেন ৩০ কুমারী সশস্ত্র দেহরক্ষীর ওপর।

নিয়োগের সময় প্রত্যেক কুমারীকে দিতে হতো সতীত্ব রক্ষার শপথ। শুধু তাই নয়- তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ কেমন হবে তাও বাছাই করে দিতেন গাদ্দাফিই।

দেহরক্ষীদের প্রত্যেককে পরতে হতো সেনা পোশাক। চুল রাখতে হত কফি রংয়ের। প্রত্যেককে হাতে নেল পলিশ করা ছিল বাধ্যতামূলক।

এক কথায় বলা যায়- দেহরক্ষীদের শুধু সশস্ত্রই নয়- অঙ্গসজ্জা করে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা ছিল নিয়োগ শর্তের অন্যতম শর্ত।

সে কারণে স্বৈর শাসক হয়েও গাদ্দাফি তার সুন্দরী কুমারী দেহরক্ষী বাহিনীর পোশাকি নাম দিয়েছিলেন ‘আমাজনিয়ান গার্ড। ’

একবার ফ্রান্স সরকারের আতিথ্য গ্রহণ করে সেদেশে বেড়াতে যান মুয়াম্মার গাদ্দাফি। সময়টা ছিল ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। সারকোজি সরকারের আমন্ত্রণে সরকারী সফরে যান তিনি।

সঙ্গে নিয়েছিলেন সুদৃশ্য ৫টি বিমান,  একটি উট,  একটি তাবু এবং যথারীতি ৩০ কুমারী সশস্ত্র দেহরক্ষী। মুয়াম্মার গাদ্দাফি প্রটোকল ভেঙ্গে প্যারিসে বসে মরুভুমির স্বাদ পেতে এমন ব্যবস্থাটাই করেছিলেন।

তবে এতো কিছুর পরে এসেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। যারা এক সময় গাদ্দাফির অঙ্গুলিহেলনে শত্রুর বুলেটের ভয় উপেক্ষা করে বুক পেতে দিতে দ্বিধা করেননি।  

সেই খোদ কুমারী সশস্ত্র দেহরক্ষীর ৫ জন গাদ্দাফির বিরুদ্ধে দৈহিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। সানডে মালটা টাইমস এক প্রতিবেদনে ওই ৫ কুমারী দেহরক্ষীর করুণ কাহিনি প্রকাশ করেছে।

অভিযোগকারী দেহরক্ষীরা জানিয়েছেন শুধু গাদ্দাফিই ক্ষান্ত থাকেননি- তার ছেলেও তাদের ওপর শারিরিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে।

ওই সংবাদপত্রে এক অভিযোগকারী শুনিয়েছেন তার নিয়োগকাহিনির জঘন্য দিকটাও। গাদ্দাফির কথা আমলে না নিয়ে তিনি দেহরক্ষীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এজন্য গাদ্দাফি ‘ব্লাকমেলে’র আশ্রয় নেন। তাকে বলা হয়েছিলো দেহরক্ষী বাহিনীতে যোগ না দিলে শুধু তাকে নয়- এজন্য তার পরিবারকেও অনেক মূল্য দিতে হবে।

গাদ্দাফি ওই নারীকে শাসিয়ে বলেছিল এই বলে যে, তার ভাই লিবিয়াতে ‘ড্রাগ’ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ভাইয়ের সঙ্গে তাকেও জেল খাটতে হবে।

বেনগাজির মনোরোগ বিশেষঞ্জ সেহম শেরগাওয়া ইতোমধ্যেই গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।