১৬ ডিসেম্বর, মহান বজিয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ৩০ লাখ প্রাণ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এ দেশেরে শোষিত মানুষের কাঙ্খতি ‘বিজয়’ নামের লাল সূর্যটি।
মুলতঃ আমাদের মাঝে এ বিজয় এসেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ধর্ম নিরপেক্ষেতা বজায়, শাসক নামের শোষকদের নির্মূল করা, র্অথনতৈকি মুক্তি ও বেকারত্ব রোধ, কল-কারখানা স্থাপন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতি, গুণগত পরিবর্তন সর্বোপরি দেশের র্সাবভৌমত্বকে নিজস্ব জাতীয় ঐতিহ্যের মহিমায় ধরে রেখে সারাবিশ্বে আত্মনর্ভিরশীল এক জাতির গৌরবে পরচিতি লাভ করার এক দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এই যে, জন্মলগ্ন থেকেই অর্জিত বিজয় বিকশিত হওয়ার কোনও সুযোগ পায়ন। গোড়া থেকেই চক্রান্তের নীলনক্সা প্রণয়নকারী এক শ্রেণির পদলেহি মানবসন্তান জাতির কণ্ঠ চেপে ধরে। যার ফলশ্রুততিতে বিজয়ের স্বাদ জাতির ভাগ্যে জুটনে আজো। কারণ বিজয়ের শরীর এখনো রুগ্ন ও রক্ত শূন্যতায় ভুগছ।
বিগত চল্লশি বছররে বাস্তব অভজ্ঞিতায় বলা যায়, আমরা স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে অন্ধ গৌরবের দাবিদার হলেও নির্লজ্জ বেহায়ার মতোই এ গৌরবের ভাগাভাগতি ব্যস্ত হয়ে পড়ি মাঝে মধ্য। আমরা সবাই জানি, পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে এক দেশেরে বাসিন্দা হয়েও র্সব বিষয়ে নাগরকি অধিকার থেকে ছিলাম বঞ্চতি। আস্তে আস্তে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ ও সচতেনতার ফল হিসেবে ’৭১ এর রক্তাক্ত জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদশে প্রাপ্ত।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কি স্বাধীনতার র্মযাদা রক্ষা করতে সক্ষম হয়ছে? পেরেছি কি সত্যিকারের বিজয়ের গান গাইতে? না- পারনি। কেন পারিনি এর কারণ তলিয়ে দেখার প্রয়োজন। শুধু সভা-সেমিনার করে কিংবা বিশেষ ক্রোরপত্র করে স্বাধীনতার যথার্থ মর্যাদা রক্ষা পায়না বা বিজয়েরে স্বাদ পাওয়া সম্ভব নয়। যার জলন্ত প্রমান আমাদের আর্থ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা।
স্বাধীনতায় প্রৌঢ় এ দেশটার দিকে তাকালে বড্ড মায়া হয়। এখনো এখানে চলছে হানাহান, সন্ত্রাস, রাহাজান, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, আত্মকন্দ্রেকি মনোভাব, পরস্পর খবরদারি করার হীন মানসকিতা, শিক্ষিত-অশক্ষিত নির্বিশেষে দায়ত্বিহীনতা, সীমাহীন অপরাধ প্রবণতা, দুর্নীতি ও জাতীয় সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে মৈত্রী ভাবের অভাব প্রভৃত। যা কেবল বিজয়ের গৌরবকেই মলিন করে না বরং স্বাধীনতা লালন করে রাখার ক্ষেত্র্রেও এক বিরাট হুমকি স্বরূপ।
জাতীয় জীবনে আজ যে অস্থিরতা, যে সঙ্কট প্রবাহমান তা খুবই আশঙ্কাজনক। এ নিয়ে আমোদের ভাবার সময় এখন। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে আমাদের আরও উদ্যোগী হতে হবে। এবং তা হতে হবে অত্যন্ত সুপরকিল্পতিভাবে অর্থনৈতিক ও নৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে। তেমনি ব্রতী হতে হবে সত্য, ন্যায়, সুন্দর, কল্যাণ ও মূল্যবোধের অনুশীলনের।
উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে সহজেই বুঝা যায় তারা স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের যে শর্তগুলো বেছে নিয়েছে তা হল- জাতীয় ঐক্য, আত্মবিশ্বাস, কঠোর শ্রম, বিচার ব্যবস্থার প্রকৃত স্বাধীনতা, গঠনমূলক সমালোচনাসহ গণতন্ত্রের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ। অথচ আমাদরে মাঝে এসব মৌলিক গুণের বড়ই অভাব।
আমরা এবার এমনি এক সময়ে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করতে যাচ্ছি যখন দেশে স্বাধীনতার পক্ষের একটি দল ও পূর্ন গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় অধষ্ঠিতি। এ সরকাররে কাছে জনগণের প্রত্যাশা বহুল। তাই আমরা আশা করবো জাতির কল্যাণে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার উন্নয়নমূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে আঙ্গুল দিয়েও দেখিয়ে দেবেন অতীতের স্বৈরাচার বা অন্য যে কোনও সরকাররে তুলনায় তাদের পার্থক্য আকাশ-পাতাল।
অবশেষে বলবো- দেশের সকল মানুষ বৈষয়িক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ অনুশীলনে ব্রতী হয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ও জাতীয় সমস্যা মোকাকেলোয় সরকার ও সকল রাজনৈতিক দলগুলো হিংসাদ্বেষ ভুলে গিয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদরদের যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা অবশ্যই স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করে জাতিকে গ্লানিমুক্ত করে এবং দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যথাযথভাবে মুল্যায়ন করতে সর্বোপরি এই মহা সত্যটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে, স্বাধীনতা বা বিজয় লাভ করার চেয়ে তার সযত্ন লালন যতোই কঠিন হোক, আমরা তা চিরদিনিই ধরে রাখব স্মৃতির জাগ্রত মণিকোঠায়।
লেখক: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২৩২১ ঘণ্টা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১১