ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

আধুনিক মানুষের ‘মাতৃভূমি’ বতসোয়ানা!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
আধুনিক মানুষের ‘মাতৃভূমি’ বতসোয়ানা! বতসোয়ানার সেই অঞ্চল এখন শুষ্ক লবণাক্ত। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ বতসোয়ানা। গবেষকরা বলছেন, আজ যে মানব সম্প্রদায় বেঁচে আছে, তারা এসেছে ওই দেশটি থেকেই। আরও ভালোভাবে বললে, জামবেজি নদীর দক্ষিণে বতসোয়ানার উত্তরাঞ্চল থেকে। 

জায়গাটি এখন লবণাক্ত মাটিপূর্ণ হলেও দুই লাখ বছর আগে তা ছিল আমাদের পূর্বপুরুষের আবাসস্থল। নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

 

অস্ট্রেলিয়ার গার্ভান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চের জিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ভেনেসা হায়েস বলেন, প্রায় দুই লাখ বছর আগে শারীরিক দিক থেকে আধুনিক মানুষের আবাস ছিল আফ্রিকার ওই অঞ্চলে।  

আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ও পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কেন্দ্রবিন্দু নিয়ে বিতর্ক চলছে বহু বছর ধরে।  

গবেষকরা মনে করেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা এসেছেন জামবেজি নদীর অববাহিকার দক্ষিণে অবস্থিত বতসোয়ানার উত্তরাঞ্চল থেকে।  

জামবেজি নদীর অববাহিকার দক্ষিণে অবস্থিত বতসোয়ানা।  ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার এই দিঘি এলাকায় ঘর বেঁধেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা, যা ‘মাকগাদিকগাদি’ নামে পরিচিত।  

প্রফেসর হায়েস বলেন, জায়গাটা বিশাল, অনেক সবুজ ও সতেজ। আধুনিক মানুষের আবাসস্থল ও বন্যপ্রাণীদের বেঁচে থাকার একদম উপযুক্ত জায়গা।

পলিমাটি জমে তৈরি হওয়া উর্বর মাটি মানুষকে নতুন গন্তেব্যের পথ দেখায়। প্রায় ৭০ হাজার বছর সেখানে থাকার পর মানুষেরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

জায়গাটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় তিনবার মানুষ পাড়ি জমিয়েছে পৃথিবীর অন্য অংশে।  

প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ও ১ লাখ ১০ হাজার বছর আগের কথা। প্রথম অভিবাসীরা গেছে উত্তর-পূর্বে। দ্বিতীয় অভিবাসীরা দক্ষিণ-পশ্চিমে। আর তৃতীয় দল থেকে গেছে বতসোয়ানার ওই অঞ্চলেই।

আফ্রিকার জীবিত দুইশ’ বাসিন্দার ডিএনএ ব্যবহার করে এই গবেষণা করা হয়েছে। সেটি বিশ্লেষণ করে কয়েকশ’ বছরের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ম্যাপিং করে পূর্বপুরুষদের ‘ফ্যামিলি ট্রি’ সন্ধান করা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ হচ্ছে সেই ডিএনএ, যা মায়ের কাছ থেকে সন্তানেরা পায়।  

সেই জিনতত্ত্বের সঙ্গে ভূতত্ত্ব মিলিয়ে ও জলবায়ুর কম্পিউটার মডেল সিমুলেশন ব্যবহার করে গবেষকরা দুই লাখ বছর আগের আফ্রিকার একটি চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হন।  

বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল ‘ন্যাচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা প্রবন্ধটি। তবে এটাও বলা হচ্ছে, শুধু মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ’র ওপর ভিত্তি করে আদিম মানুষের সম্পূর্ণ ইতিহাস জানা সম্ভব নয়।  

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রফেসর ক্রিস স্ট্রিনজার বলেন, হোমো সেপিয়েন্সের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তন খুবই জটিল প্রক্রিয়া। শুধু আধুনিক মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ’র ওপর ভিত্তি করে আধুনিক মানুষের হিসাবে একটি মাত্র জায়গা বেছে নেওয়া সম্ভব না।  

তিনি এই গবেষণার অংশ ছিলেন না। তবে, তার মতে, অল্পকিছু মানুষের জিনের স্যাম্পল (নমুনা) নিয়ে গবেষণা করে মানবজাতির বিবর্তন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের একাধিক আবাসস্থল থাকতে পারে, যা এখনো অজানা।  

এছাড়া আরও অনেক গবেষণাই বলছে, আধুনিক মানুষ পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এসেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নয়।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।