খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টারের বিবেচনায় ভারতে ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে আলোচিত ১০ ঘটনা চিহ্নিত করেছে। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য এখানে তা তুলে ধরা হলো:
বিশ্বের বৃহৎ পরিবার
রয়টার্সের বিবেচনায় ভারতের আলোচিত শীর্ষ দশ ঘটনার প্রথমেই আছে ‘জিওনা চানা ও তার পরিবার’।
(বাংলানিউজ সম্প্রতি এ সংক্রান্ত ফিচার প্রতিবেদনটি দেখতে ক্লিক করুন http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=6792fa01c56ef0f7c5a58d508954c34d&nttl=2011070804545448251)
মহাত্মা গান্ধী ‘সমকামী’ !
ভারতের দ্বিতীয় বিস্ময়কর এবং আলোচিত খবর হলো- ভারতের জাতিরজনক মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে প্রকাশিত নতুন জীবনীগ্রন্থে তাকে ‘সমকামী’ হিসেবে উল্যেখ করার বিষয়টি। মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে পুলিৎজার পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক জোসেফ লেলিয়েল্ড ‘গ্রেট সোল: মহাত্মা গান্ধী অ্যান্ড হিজ স্ট্রাগল উইথ ইন্ডিয়া’ নামের জীবনীগ্রন্থে এই তথ্য দেন।
জীবনীগ্রন্থে হারম্যান্ নামের একজন জার্মান বডিবিল্ডারের সঙ্গে গান্ধীর সমকামিতার সম্পর্ক থাকার কথা উল্যেখ করেন জোসেফ।
খাবার পানিতে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া জীবানু
নয়া দিল্লির খাবার পানিতে মারত্মক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধি ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর সন্ধান পাওয়ার সংবাদটি স্থান পেয়েছে আলোচিত দশের ৩য় স্তানে। মানুষের শরীরে এ ব্যাকটেরিয়ায় আক্রমনের ফলে মারাত্মক কলেরা, ডায়রিয়া ও আমশয়সহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ বিস্তার লাব করে।
ব্রিটেন’স কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন এর বিশেষজ্ঞ মার্ক টোলম্যান নয়া দিল্লির পানিতে পাওয়া এই ব্যাকটেরিয়াকে ‘সুপারবাগ’ হিসেবে উল্যেখ করেন।
কেরালার মন্দিরে বিপুল ধন-রত্ম
চতুর্থ স্থানে রয়েছে- কেরালার শ্রী পদ্মনাবৈশ্বামি মন্দিরের সিন্দুকে পাওয়া বিপুল পরিমান ধন-রত্ন! এই বিপুল ধন রত্নের পরিমান ১ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপি বা ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেরালা কোর্ট হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয় ওই মন্দিরের গোপন সিন্দুক খোলার নির্দেশ দিলে এই বিপুল পরিমান গুপ্তধন পাওয়া যায়!
সবচেয়ে কম দামের ল্যাপটপ
অধিক ইন্টারনেট ব্যবহার সুবিধা নিশ্চিৎ করার লক্ষ্যে- ভারতের সাধারণ ও অসচ্ছ্বল মানুষের কথা বিবেচনা করে ২০১১তে বাজারজাত করা হয়েছে ন্যুনতম মূল্যের ল্যাপটপ। দাবি করা হয়েছে ‘আকাশ’ ব্র্যান্ড এর এই ছোট আকৃতির ট্যাবলেট পিসিটিই নাকি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে কম দামের ল্যাপটপ।
একটি ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে সাবসিডি দিয়ে আনা স্বল্প ওজন ও টাচস্ক্রিন সুবিধাসম্পন্ন ট্যাবলেটটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৩৫ ডলার।
এদিকে, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে যেখানে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ৮% চীনে তা ৪০%!
বন্দিদের তৈরি পণ্য বিক্রি ১১০ মিলিয়ন রুপি
কারাগার মানেই বন্দিশালায় সীমাবদ্ধ জীবন। কেউ কেউ একে অলস জীবন-যাপনের কারখানা বলে থাকেন। এমন ধারণার সত্যাসত্য যাই হোক, এমন কারাজীবন কারোই কাম্য নয়। কিন্তু; দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতের আলোচিত ‘তিহার জেল’ যেন এর থেকে একটু ব্যতিক্রম!
এখানে বন্দিদের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করা হয় নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী। এসবের মধ্যে রয়েছে পটেটো চিপ্স, নানা স্বাদের বিস্কিট ও টি শার্ট। টিজেএস ব্রান্ডের এসব পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে বছরে আয় হয় মোটা টাকা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গত বছর তিহার জেলের বন্দিদের তৈরি এসব পণ্য বিক্রির পরিমান ছিল ১১০ মিলিয়ন রুপি। এ বছর তাদের টার্গেট ১৫০ মিলিয়ন রুপি!
বউ ভাগাভাগি!
একজনের বিয়ে করা বউ অন্য কারো সঙ্গে ঘুমাবে অতীত-বর্তমান কোনও কালেই বিষয়টি সমহজ স্বাভাবিক চিন্তায় পড়ে না। এমনটি কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু ভারতে সে ধরনের ঘটনার নজির বেশ ভালোমতই বিদ্যমান! সামাজিক নিয়মের নিগড়ে বন্দি করে অসহায় নারীকে নিগ্রহ-নির্যাতনের এমন উদ্ভট ঘটনার খবর পাওয়া যায় ভারতের উত্তর প্রদেশের ভাগপাত জেলা থেকে।
২০১১ সালে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়- ওই জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে আখ চাষী পরিবারে একজন পুরুষের বিয়ে করা স্ত্রীকে অন্য তার অন্য অবিবাহিত ভাইদের সয্যাশঙ্গী হতে বাধ্য করা হয়। তাকে এ কাজে বাধ্য করতে পরিবারের অন্য সদ্যস্যরা জোড় জুলুম করতেও কোনওরুপ পিছপা হন না। এমনকি অন্যপুরুষের সন্তান ধারন পর্যন্ত করতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন আরো ভয়াবহ ও বিস্ময়কর তথ্য। তাদের মতে, পরিবারের ছেলেরা বিবাহ যথেষ্ট উপযুক্ত হবার পরও মেয়ে খুঁজে না পাওয়ায় তারা এ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন।
২০১১ এর সরকারি তথ্যমতে- ওই জেলায় পুরুষ অনুপাতে নারীর স্যংখা কম। ভগবত জেলায় প্রতি ১০০০ জন পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা মাত্র ৮৫৮ জন।
এ কারণে; আখ চাষ, পাটজাত পণ্য তৈরি, হুকা, বাঁশের বেড়া ও লেপ-তোষক প্রস্তুকারী এসব দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের এক ছেলেকে বিয়ে দিয়ে তার স্ত্রীকে অন্য অবিবাহিত ছেলেদের সয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করে! এমনও দেখা গেছে, একজন নারীকে তার বৈধ স্বামীর সহোদর ৮ ভাইয়ের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে, সন্তান ধারণ করতে হচ্ছে। সন্তানরা কার ঔরসে জন্ম নিচ্ছে সেটাও কোনও বিবেচনায় স্থান পাচ্ছে না। এক নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান বা সন্তানরা ওই নারীর শয্যাসঙ্গী সবগুলো পুরুষের সন্তান হিসেবেই বিবেচিত হয়।
নারীদের ওপর চলমান ওই অমানবিক মানো-দৈহিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইদানীং ভারতের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সম্প্রতি বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
(বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে বাংলানিউজে প্রকাশিত ফিচারের লিঙ্কটি পড়ার জন্য ক্লিক করুন: http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=45cef8e5b9570959bd9feaacae2bf38d&nttl=201007263650)
পুনর্ব্যবহৃত সমগ্রী দিয়ে স্কুল নির্মাণ!
ঘর তৈরিতে সাধারণত বাঁশ, কাঠ, লোহা, টিন ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও তিনি ঘর নির্মাণ করেছেন ফেলে দেয়া নানা ধরনের কাপড়, ইউনিফর্ম, হোর্ডিং, প্লাস্টিক বোতল, সিমেন্ট ব্যাগ , গোবর ও কাঁদামাটি দিয়ে। আর এটি যেনতেন বসবাসের ঘড় নয়। এসব আবর্জনা দিয়েই রীতিমত একটি স্কুলঘর তৈরি করেছেন মাধবী কাপুর। এক আর্কিটেক্ট বন্ধু মাধবীর এ কাজে তাকে সহায়তা করেন।
২০০৮ সনে তার চালু করা স্কুলে শিক্ষার্থী ছিলো মাত্র ৪ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে- ১৪০ এ।
পরিবেশ-বান্দব বস্তু ব্যবহার করে স্কুল নির্মাণই মাধবীর শেষ কাজ নয়।
পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানোও হচ্ছে তার সেই স্কুলে।
উইকিলিকস্ এ মায়াবতী র তথ্য ফাঁস!
এ বছরই উইকিলিকস্ ফাঁস করে দেয় ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর কিছূ গোপন তথ্য। এ সংবাদ প্রকাশের পরই ভারতসহ বিশ্ব জানতে পারে মায়াবতীর বিস্ময়কর সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর।
তার পছন্দের ব্রান্ডের একজোড়া নতুন জুতো বা স্যান্ডেল কেনার জন্য একাই নাকি জেট বিমানে যেতেন মুম্বাই। সরকারি টাকায় তার
অফিস থেকে বাড়ি পর্যন্ত যাবার জন্য নির্মাণ করেছিলেন একটি আনকোরা রাস্ত!
এমনকি তার গাড়ি বহর সে রাস্তায় বের হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে রাস্তা পরিচ্ছন্নও করা হতো!
ভারতীয় নারীরা নিষ্পেষিত!
গ্লোবাল ইনফরমেশেন অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল প্রতিষ্ঠান ‘নিলসেন’ পরিচালিত এক সমীক্ষায় উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ভারতে নারীরা বেশি নিষ্পেষিত বলে উল্যেখ করা হয়। ২০১১ সালের এ খবরটি ভারতের জন্য মোটেই ভালো খবর ছিল না!
নিলসনের প্রতিবেদনে- নারীদের চাপের মুখে কাজ করা, বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগের অভাব এবং মেয়ে শিশূদের অবহেলা প্রভৃতি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ০৩ জানুয়ারি, ২০১২