ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

জুমজুড়ে সোনালি ধান

এস বাসু দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১০
জুমজুড়ে সোনালি ধান

বান্দরবানের সবুজ পাহাড় জুমের সোনালি ধানে ভরপুর। জেলার সাতটি উপজেলার পাহাড়ের জুমেক্ষেত এখন পাকা ধান।

সবুজের বুকে হলুদের চাদরের ঢাকা যেন এক-একটি পাহাড়। দূর পাহাড়ের হলুদ বর্ণ জানিয়ে দেয় এটি জুম পাহাড়। পাহাড়ে বাম্পার ফলনে আদিবাসী জুমচাষীদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।

জুমচাষি মেনলে ম্রোর বলেন, আমাদের জুমের ফসল বেশ ভালো হয়েছে, এবার আমাদের কষ্ট ঘুচে যাবে ভালো ফলনে। এ মাসের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জুমের নতুন ধান সংগ্রহ করার কাজে মেতেছে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, তংচঙ্গ্যা, চাকমা, চাক্, খেয়াং, খুমী, লুসাই, কুকি, পাংখোসহ মোট ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্থানীয় আদিবাসীরা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানে এবার ৮ হাজার ৫০১ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুমচাষ করা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।

জুমচাষিরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ইঁদুর, বন্যা, পাহাড়ে ভারী বর্ষণ, বন্যহাতি ও শূকরের আক্রমণ সত্ত্বেও এবারে জেলার সর্বত্র জুমচাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। আদিবাসী জুমচাষীরা লাইমী পাড়া, শ্যরনপাড়া, সাত মাইল, ঘালাঙ্গাসহ বেশ কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাহাড়ে জুমের পাকাধান কাটার পাশাপাশি একই জুম থেকে কাকন ধান, যব, তিল, হলুদ, ভুট্টা, কুমড়া, তুলা, মারফা, পেঁপে, বরবটি, শিম ও মিষ্টি কুমড়াসহ হরেক রকমের জুমের ফসল কাটা ও তোলার কাজও শুরু হয়েছে। বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, থানচি উপজেলা যাবার পথের চিম্বুক, কাপ্রুপাড়া, নীলগিরির পাশের প্রধান সড়কের অদূর থেকে ব্যাপক অঞ্চলের শত শত উঁচু-নিচু পাহাড়ে বিপ্তিভাবে জুমচাষ হয়েছে।

ঘালাঙ্গা এলাকার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান ম্যনরত ম্রো বলেন, আমাদের আশেপাশের কিছু এলাকা বাদে গত বছরের তুলনায় জুম পাহাড়ে জুমে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তবে বন্য শূকরের কারণে অনেকের ধান নষ্টও হয়েছে বলে শুনেছি। আদিবাসীরা জুমে উৎপাদিত ধানসহ রকমারি কৃষিপণ্য মজুদ করে বছরের প্রায় ৯ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত খাদ্যের সংস্থান করে থাকে।

জেলার আদিবাসীদের প্রধান পেশা জুম চাষ। তারা পাহাড়ের ঢালুতে বিশেষ কায়দায় চাষ করে বছরের জীবন নির্বাহর জন্য খাদ্য মজুদসহ অর্থ আয় করে থাকে। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানান প্রতিকূলতার শত বাধা পেরিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী চাষীরা জীবন-জীবিকার তাগিদে হাড়ভাঙ্গা কষ্ট সহ্য করে এই জুমচাষ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, যুগ যুগ ধরে জুম চাষ করে আসছে পাহাড়ের আদিবাসীরা, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুমে বাম্পার ফলন হয়েছে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৩০, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।