ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

কাশফুলে মিশে আছে শরতের সৌন্দর্য

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২২
কাশফুলে মিশে আছে শরতের সৌন্দর্য আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে ফুটেছে কাশফুল। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে ‘ঋতুর বৈচিত্র্য’ অনুভব করতে গ্রামবাংলার প্রকৃতির কোনো বিকল্প নেই। যদিও দিন দিন সেই বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে।

 

শীত এবং বর্ষাকাল স্পষ্টভাবে বোঝা গেলেও অন্যান্য ঋতুর বৈচিত্র্য খুব একটা দেখা যায় না। তবে নদ-নদীর চর এলাকা, বিরানভূমিতে কাশফুল ফুটলেই বোঝা যায় শরৎ এসেছে!

পদ্মা, আড়িয়াল বিধৌত মাদারীপুর জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে চরাঞ্চল। এ সব চরাঞ্চলে বছরের এই সময়টায় কাশফুলের শুভ্রতায় ছেয়ে যায়। কাশফুল ফুটলেই বোঝা যায় ঋতুর পরিবর্তন। শরতের সৌন্দর্য।

এ সময় আকাশে ভাসতে থাকে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ। কখনো দেখা যায় ঝকঝকে নীলাকাশে ছোপ ছোপ সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো। শরতে কাশফুলের পাশাপাশি ফোটে ছাতিম ফুল। বনবাদার বা সড়কের পাশে থাকা ছাতিম গাছ ভরে উঠে সাদা সাদা ফুলে। সন্ধ্যা নামলেই ফুল থেকে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র সুগন্ধ! কাশফুল এবং ছাতিম এখনো মনে করিয়ে দেয় ঋতুর বৈচিত্র্য।  

সরেজমিনে জেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, নদ-নদীর পাড়জুড়ে সাদা মেঘ যেন মাটি স্পর্শ করছে। বাতাসে ঢেউ তুলছে কাশফুল। নদ-নদীর দুই পাড়ের দীর্ঘ এলাকা শুধু কাশফুলের শুভ্রতা।  

এদিকে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই সময়ে অনেকেই ঘুরতে আসে নদীর পাড়ে। কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় অনেককেই।  

জেলার শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা অন্তর বলেন, প্রতিবছর শরতে আমাদের এই নদীর পাড়ে প্রচুর কাশফুল ফোটে। কাশফুলের সাদা রঙে চারপাশ ছেয়ে যায়। চমৎকার লাগে দেখতে। নদীর পাড়ে অনেক লোকজন আসে ঘুরতে।

তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। এই কাশফুল প্রকৃতির বুকে ভিন্ন রকম সৌন্দর্য এনে দেয়। কাশফুল দেখলেই বোঝা যায় শরত এসেছে।

মো. হান্নান নামের এক ব্যক্তি বলেন, কাশফুল যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি ফুল ঝড়ে যাওয়ার পর কাশফুলের ডগা সংগ্রহ করে ঝাড়ু তৈরি করা হয়। অনেকেই এগুলো কেটে নিয়ে যায়। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এগুলো বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থী শান্তা মারিয়া বলেন, কাশফুল বালু মিশ্রিত মাটিতে প্রচুর জন্মে। পদ্মার পাড়ে, আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে, শিবচর উপশহরসহ চরাঞ্চল এলাকায় প্রচুর জন্মে কাশফুল। প্রকৃতিতে যে শরত এসেছে, তা কাশফুল না ফুটলে টের পাওয়া যেতো না। শরতের সৌন্দর্যই যেন এই কাশফুল!

আলাপকালে কয়েকজন জানান, গ্রামবাংলার প্রকৃতি পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন। উজার হচ্ছে গাছপালা। ভরাট হচ্ছে জলাশয়। নদ নদীর পাড়ের মাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে ‌‘বালুখেকোদের’ কবলে পড়ে। প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে নদ-নদীর পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে অনেকেই। এতে করে নদীপাড়ের ভারসাম্য হারাচ্ছে। উজার হচ্ছে সমতল চরাঞ্চল। এদের কবলে পড়ে কাশফুলও হারিয়ে যেতে বসেছে। অতীতের মতো কাশফুল চোখে পড়ে না বর্তমানে।

প্রকৃতিতে শরৎ আসে নতুন রূপ নিয়ে। আর কাশফুল শরতের রূপের মধ্যে অন্যতম। এ সময় ছাতিমসহ নানা ধরনের সুগন্ধযুক্ত বুনো ফুল ফুটতে থাকে। আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা খণ্ড খণ্ড মেঘ। মেঘের ফাঁক গলে দেখা যায় স্বচ্ছ নীলাকাশ। আর ভোরে হালকা শিশির এবং মাঝেমধ্যে হালকা কুয়াশাভাব জানান দেয় দুয়ারে আসছে শীত!

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।