ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জুন ২০২৫, ১৫ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

রাস্তা মেপে চলবে গাড়ি

বাবু আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০২, মার্চ ২২, ২০১২
রাস্তা মেপে চলবে গাড়ি

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কিছু কোর্স করেই জীবনে সফলতা আসবে না। সে জন্যই ভিন্ন কিছু করার ভাবনা আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

প্রশ্ন হচ্ছে সেই ভিন্ন বিষয়টা কী হতে পারে? পড়াশোনার বিষয়গুলো যদি গবেষণায় কাজে না লাগাই তবে পড়াশোনাও ব্যর্থ হয়ে পড়বে।  

বাংলানিউজ- ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ‍বাংলাদেশ (আইইউবি) আয়োজিত জাতীয় উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পাওয়া ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মো: নাদিম চৌধুরী এভাবেই বলছিলেন তাদের কথা। তিনি জানান, স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোবটিকস এবং ফ্যাক্টরি অটোমেশনের বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করতেই তাদের এই প্রচেষ্টা। প্রকল্পটি তৈরি করেছেন তিন বন্ধু মিলে। তারা হচ্ছেন, নাদিম চৌধুরী, ওয়াহিদুল ইসলাম রহিম এবং আব্দুল মুকিত।

তাদের প্রজেক্টটি ছিলো ‘প্রোগ্রাম্যাবল লার্নিং কিট’। তাদের ধারণাটি প্রয়োগ করা হয়েছে গাড়ির উপরে। গাড়িটি যেকোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সনাক্ত করতে পারবে। গাড়িটি নিজেই আলট্রাসনিক সাউন্ড ব্যবহার করে তার চারদিকে স্ক্যান করে দেখে নেবে কোন দিকে বাধা নেই। স্ক্যান এর পরে যেদিকে ফাঁকা জায়গা থাকবে গাড়িটি সেদিকেই চলতে শুরু করবে।

অনেক সময় রাস্তা সরু থাকে। তখন যেকোন গাড়িকে একটি দেয়াল বা ডিভাইডারের সঙ্গে নিজেই নিজেকে প্রোগ্রাম করে নেবে এবং সেই দেয়াল বা ডিভাইডারকে অনুসরণ করে চলতে পারবে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করেছে কন্ট্রোল সিস্টেম, অ্যালগোরিদম স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে। এজন্য তারা বা‍দুড়ের পথ চলার পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ শুরু করেন। বাঁদুড় চোখে দেখে না। এরা পথ চলার জন্য আল্ট্রাসনিক সাউন্ড ব্যবহার করে। পথ চলার জন্য বাদুড় এই তরঙ্গটি ব্যবহার করে দেখে নেয় কোন দিকে গেলে সে বাধা পাবে। যেইদিকে বাধা পাবে না তারা সেই দিকেই উড়ে চলে।

প্রকল্পটি তৈরি করতে কোনো বাধা এসেছে? এমনই প্রশ্ন করা হয়েছিল নাদিমকে। উত্তরে সে বলে, কাজটি শুরু করতে নানা রকম বাধা পাই। প্রথমেই যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে। নাদিম আরো জানায়, কাজ করার জন্য যে ধরনের প্রযুক্তি দরকার তা এখনো আমাদের দেশে ব্যবহার হয় না।

এজন্য ইন্টারনেটই একমাত্র ভরসা। আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান আরদুনিয়ো যারা এই রোবটিকস এবং ফ্যাক্টরি অটোমেশনে বেশ এগিয়ে আছেন তাদের ওয়েবসাইটে নানা বিষয়ে জ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা করে নাদিমরা। সেখানে তারা যেরকম চান ঠিক তেমনই একটি ব্রেকআউট বোর্ড পাওয়া যাবে। তবে তা ব্যয়বহুল। তখন তাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইটটি থেকে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কম্পাইলরটি সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।

প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার সংগ্রহ করেন দেশেই পাওয়া চাইনিজ হার্ডওয়্যার থেকে। কিন্তু তারা যখন এই দুটিকে নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন তখন তারা দেখতে পান আমেরিকার ওই সফটওয়্যারটি শুধুমাত্র ওই কোম্পানীর হার্ডওইয়্যারেই সাপোর্ট করবে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আরো পড়াশোনা প্রয়োজন। তখনই তারা দেখতে পান ওই ওয়েবসাইটেই একটি বুটলোডার দেওয়া আছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য। এমনকি সেখানে এই পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য কিছু উদাহরণও দেওয়া ছিল। সফটওয়্যারটি ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে অল্প কিছু পরিবর্তন করে নিজেরাই কাজ শুরু করে দেয়। এরপরেই সাফল্য ধরা দেয় তাদের হাতে।

নাদিম জানান, এই উদ্ভাবনী প্রতিযোগীতার সময়ে তার পরীক্ষা চলছিল। প্রথমে তিনি আসতে চাননি। কিন্তু পরে এসেছেন। তিনি আশা করেন বাংলানিউজ ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) ভবিষ্যতেও এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ায় অগ্রণী ভুমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে ভালো লেগেছে উদ্যোক্তারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার তিনট স্তর স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১২

সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, ইয়ুথ এংগেজমেন্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।