অঞ্জন ঘুমোচ্ছে, আমার হাত অঞ্জনের চুলে। সত্যিই অঞ্জনের চুলগুলো কী সুন্দর রয়েছে এখনও! কে বলবে অঞ্জন আর আমার একমাত্র মেয়ে তপার আজ বিয়ে হলো? আমারটা জানি না কিন্তু অঞ্জনকে দেখে বোঝা যায় না।
তপা কী করছে এখন? ভোর হতে চললো। তপা সুখী হবে? মেয়েটা নিজের পছন্দেই তো বিয়ে করলো রাশেদকে। রাশেদ ওকে সুখী করবে মনে হয়। আজ মেয়েটার বিয়ে হলো, আমার খুব কষ্ট পাওয়ার কথা, দুশ্চিন্তা হওয়ার কথা কিন্তু আমি এখন ওসব নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি অঞ্জনকে নিয়ে। প্রায় ১৯ বছর পরে অঞ্জনকে এতো কাছে পেলাম আমি। অঞ্জনের চুলে আমার হাত খেলছে। এই ঘরটায়ও আমার ১৯ বছর পর আমার প্রবেশ।
ইশ, কখন এতো সকাল হয়ে গেলো? টের পেলাম না আমি। ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁই ছুঁই করছে। বাড়ির সবার মুখে আজ অঞ্জনের কথা।
ঠিক ১৯ বছর আগে আমাকে নিয়ে ওরা তো এভাবেই কথা বলছিলো। একই গল্প, একই বিলাপ, আমরা নাকি বড় ভালোমানুষ ছিলাম।
ওরা অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে, অঞ্জনের হার্টের অসুখ ছিলো অথচ কেউ টের পায়নি কী করে! ঘুমের ভেতরেই এভাবে অঞ্জন চলে গেলো? কিন্তু ওরা এতো অবাক হচ্ছে কী করে? এতো তো অবাক হওয়ার কথা নয়। হঠাৎ হার্ট ফেল করলে এতো অবাক হবার তো কিছু নেই।
ঘরে কেউ ছিলো না। অঞ্জন একা ঘুমচ্ছিল। কাউকে ডাকতেও পারেনি তাই বোধহয় এরকমটা হয়ে গেলো!
আজ থেকে ১৯ বছর আগে ওরা এতো অবাক হয়নি? সে রাতে অঞ্জন এই ঘরেই ছিলো আর অঞ্জন ছিলো আমার পাশেই। তখন আমার মা ছাড়া কেউ অবাক হয়নি।
আমার অবাক লাগছে না, কষ্ট লাগছে না। আজ এতো বছর পর আমি অঞ্জনকে নিয়ে যাচ্ছি। শুধু একটুখানি ব্যথা হচ্ছে বুকের বামে, চিনচিনে ব্যথা- তপার জন্য। তপাটা একা হয়ে গেলো।
তপা, আমাকে ক্ষমা করিস মা। এতোদিন তোর বাবাকে সময় দিয়েছি শুধু তোর কথা ভেবে। আজ থেকে রাশেদের হাতে তোর হাত। তুই একা না আজ থেকে, তাই তোর বাবাকে নিয়ে নিলাম। রাশেদ ছেলেটা তোকে ভালো রাখবে। রাশেদ ছেলেটা তোর বাবার মত রাগী হবে না দেখিস।
ইশ, তোর বাবা যদি এতো রাগী না হতো! সে রাতে তোর বাবা যদি এতোটুকু কথা কাটাকাটিতে আমার মুখের ওপরে বালিশটা...। তবে বোধহয় আজ তোকে একা হতে হতো না!
ভয় পাস না। তোর বাবাকে আমিও আজ ঠিক ওইভাবে নিয়েছি যেভাবে ১৯ বছর আমাকে যেতে হয়েছে।
তোর বাবাকে অনেক যত্নে রাখবো, আমি…
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এসএনএস