দীর্ঘদিনের শিরোপাখরা কাটিয়ে ২০২১ কোপা আমেরিকা জয় করে আর্জেন্টিনা। সেই দলটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন লিওনেল মেসি।
'খুদে জাদুকরের' পারফরম্যান্সে সমর্থকদের মতোই মুগ্ধ আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ফ্রান্সের বিপক্ষে রোববারের ফাইনালকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই জানালেন, তার চোখে কোপাজয়ী মেসির চেয়ে এ বিশ্বকাপের মেসি অনেকটাই এগিয়ে।
মেসিকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মার্তিনেস বলেন, 'অন্য আর্জেন্টাইনদের মতো আমিও তাকে খুশি দেখতে পাচ্ছি। আমি কোপা আমেরিকায় দুর্দান্ত মেসিকে দেখেছি, যা আমার চোখে বিশ্বের অন্যতম সেরা। এবারের বিশ্বকাপে তাকে আরও সেরা মনে হচ্ছে- শারীরিকভাবে এবং ফুটবলীয় দিক থেকেও এবং এটা আমাদের জন্য খুব সহায়ক। '
ফাইনালের ফেভারিট কে, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্তিনেস বলেন, 'ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফেভারিট ছিল ব্রাজিলই। এখন অনেকে ফ্রান্সকে ফেভারিট ভাবছে। অন্যদের ফেভারিট ভাবলে আমাদের ভালোই লাগে। আমরা সৌদি আরবের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলাম। এটা আমাদের বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আমরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তবে পথটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু সৌদি আরবের কাছে হারের পর আমরা বলেছিলাম, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার জন্য সব ছাড়তে প্রস্তুত আছি। '
ইউরোপীয় ও লাতিন ফুটবলের পার্থক্য নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। ফুটবলীয় দিক থেকে ইউরোপিয়ানদের সাম্প্রতিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও বিতর্ক হয় প্রায়ই। কিন্তু মার্তিনেসের কাছে এসব তুলনার কোনো মানে নেই। তিনি বলেন, 'যারা এসব মন্তব্য করে তারা দক্ষিণ আমেরিকা সম্পর্কে জানে না। (দক্ষিণ আমেরিকায়) না খেলে মন্তব্য করা ঠিক না। তারা জানে আমরা বিশ্বমানের দল এবং তারা আমাদের শ্রদ্ধা করে। '
কাতার বিশ্বকাপে তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ ফ্রান্সের। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের দুর্দান্ত আক্রমণভাগ ঠেকাতে কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আর্জেন্টিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মার্তিনেসের উত্তর, 'তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আক্রমণভাগে তারা কতটা ভালো তা আমরা জানি। এজন্য আমরা পাল্টা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চাই। '
'ফাইনালে ভুল করার সুযোগ খুব কম। সামান্য ভুলেও বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমাদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে লড়তে হবে। আমরা যেভাবে খেলে এসেছি সেভাবেই খেলবো- খেলার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা। এটাকে শুধু আর একটা ম্যাচ ভেবে খেলা কঠিন; কারণ এটা বিশ্বকাপের ফাইনাল। '
২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেবার আর্জেন্টিনায় নিজের বন্ধুদের সঙ্গে বারবিকিউ-এর মজা নিচ্ছিলেন মার্তিনেস। কিন্তু মেসিদের হারে তারও হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। অন্য আর্জেন্টাইনদের মতো তিনিও কেঁদেছেন। কিন্তু এবার তিনি নিজেই মঞ্চে হাজির।
এ পর্যায় পর্যন্ত উঠে আসতে যে কষ্ট মার্তিনেসকে করতে হয়েছে তা অনেকে জানেই না। এ নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ নেই তার, 'এ পর্যন্ত আসতে যে কষ্ট করতে হয়েছে তা ভোলা অসম্ভব। আমি একজন যোদ্ধা, ১২ বছর বয়সে ইন্দেপেন্দিয়েন্তের হয়ে খেলেছি, এরপর ১৭ বছর বয়সে আর্সেনালে। আর্জেন্টিনায় অনেকে আমাকে সেভাবে চিনতোই না। কিন্তু আমাকে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হতো এজন্য আমি দেশ ছেড়েছিলাম। আর এখন পুরো আর্জেন্টিনা আমার পাশে, এটা দারুণ ব্যাপার। কিন্তু এসব নিয়ে এখন ভাবছি না। '
আগামীকাল রোববার লুসাইল স্টেডিয়ামে ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার সামনে তৃতীয় ও ফ্রান্সের সামনে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বজয়ের সুযোগ অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এমএইচএম