ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

ফুটবল

কোচ বাটলারকে চান না সাবিনারা, কান্নাজড়িত কণ্ঠে দিলেন অবসরের হুমকি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
কোচ বাটলারকে চান না সাবিনারা, কান্নাজড়িত কণ্ঠে দিলেন অবসরের হুমকি

বিদ্রোহের গুঞ্জন ছিল গতকাল থেকেই। এবার সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরলেন নারী ফুটবলাররা।

জানিয়েছেন পিটার বাটলারকে কোচ হিসেবে না চাওয়ার কথা।

গত বছরের শেষদিকে বাটলারের সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তাতে নাখোশ হন সিনিয়র ফুটবলাররা। কেননা সাফ চলাকালীন তাদের সঙ্গে ইংলিশ এই কোচের দ্বন্দ্বের কথা উঠে আসে। তবে বাটলারকেই যদি কোচ হিসেবে রাখা হয় তাহলে অবসরের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।  

বাফুফে ভবনে কান্না জর্জরিত কণ্ঠে আজ নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘সমস্যা তো দেখুন, এখানে একটা জিনিসই বলার, নিজেদের আর কিছু প্রমাণের নেই। ব্যাপারটা আত্মসম্মানের; (এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবিনা) দিনশেষে মেয়েরা দেশের জন্য খেলে। কিন্তু দেশের মানুষ মেয়েদের যেভাবে কটুক্তি করছে এটা মেয়েদের জন্য নেওয়াটা অসম্ভব। ’

মাসুরা পারভীন বলেন, ‘আমরা তো একবারও বলিনি যে আমরা অনুশীলন করব না। আমরা কোনো কর্মকতা বা কিরণ আপাকেও একবারও বলিনি যে অনুশীলন করব না। আমরা বলেছি বাটলারের অধীনে অনুশীলন করব না। আমাদের যে কোচ ছিলেন (লিটু স্যার) ওনার কথাতে আমরা অনুশীলন করছিলাম। আমরা কিরণ আপাকে বলেছিলাম যে উনি যেহেতু বিদেশ থেকে এসেছেন তো আপাতত একটু বিশ্রামে থাক, আমরা লিটু স্যারের অধীনে অনুশীলন করতে চাই। ’ 

‘অন্য যে কোচ দিক আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপনারা জানেন এখানে আমরা এতবছর আছি, কখনও কোনো কোচ নিয়ে আপত্তি তুলছি শুনছেন? কিংবা ডিসিপ্লিনের কোনো ইস্যু আছে সেটা শুনছেন? আমরা ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করি নাই। তো এখন কেন বলতেছি (কোচ নিয়ে) এটা আসলে… আমরা যদি ইনডিসিপ্লিন থাকতাম তবে সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম না। আমরা এত কষ্ট করেও যে এত রেজাল্টট নিয়ে আসতেছি তার বিনিময়ে আমরা কি বলব…’

কোচ নিয়ে অভিযোগের কথা জানাতে গিয়ে কৃষ্ণা বলেন, ‘মাঠে আমরা মানসিকভাবে চাপে থাকি। আসলে আমরা অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠি, যত সকালে আপনারাও উঠেন না। তো অনেক সময় ক্যাজুয়ালি থাকি এটা নিয়ে উনি যা বলে তাতে আপসেট হয়ে যাই। অনুশীলনে তখন আর মন বসাতে পারি না। এমনকি গেম চলাকালীনও আমাদের সঙ্গে এটা হয়েছে। আপনারা ভালো জানেন যে নেপালে আমাদের সঙ্গে কি হয়েছে। এটা টিমের ওপর প্রভাব পড়ে।

‘কোচের সঙ্গে আমাদের সমস্যা প্রায় ৫-৬ মাস ধরে চলতেছে। এটা আমাদের কিরণ আপা, সাবেক সভাপতি স্যার (কাজী মো. সালাহউদ্দিন) এবং ইমরান ভাইও (ইমরান হোসেন তুষার) জানতেন। আমাদের পক্ষ থেকে ওনাদের জানানো হয়েছে অনেকবার। স্যার বলেছিলেন যাওয়ার আগে কোচ চেঞ্জ করবেন। এখানে যারা স্টাফ আছেন… সহকারী কোচ, তারা সবকিছু জানেন; কিন্তু এখন তারা কেন মুখ খুলতেছেন না তা জানি না, এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে আমাদের খেলাটা ধরে রাখতে হয় এটা জানানো দরকার। আমরা সাফে কিভাবে জিতেছি, কিভাবে খেলেছি তা জানেন না আপনারা। ’ 

পোশাক  থেকে শুরু করে ছোট ছোট বিষয়ে নিয়েও কথা বলেন কোচ পিটার বাটলার। এমন অভিযোগ করেছেন মাসুরা। তিনি বলেন, ‘ডাইনিং রুমে আমি টুপি পরে গিয়েছি বলে উনি সেটাকে ভালোভাবে নেননি। আমাকের টুপি খুলতে বলায় আমি অবাক হই। এটা ঠন্ডার জন্য পড়েছিলাম। কিন্তু আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কেন খুলব, তখন উনি আমাকে বলেন যে আমি কোচ বলেছি তাই তুমি খুলবা। পরে রুমে এসে আমি আমার রুমমেট নীলাকে বলি যে দেখিস পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে কোচ আমাকে রাখবে না। পরে তো তাই হলো। ওই টুপি কান্ডের জন্য আমাকে মাঠেও নিতে চাননি। যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন ম্যাচ প্রায় হেরে যাচ্ছিলাম তখন ডাগআউটে বসে উনি বলতেছিলেন যে হারতেছে তাতে সমস্যা নেই, মেয়েরা তো ভালো খেলছে। কিন্তু আমরা হার দিয়ে কি করব। ’ 

‘যেহেতু পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা ড্র করি, পরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হারলে গ্রুপ থেকে বাদ পড়ে যাবো। ওখানে আমাকে খেলাবে না বলে… কোহাতিও ভালো খেলোয়াড়, তবে অভিজ্ঞতার একটা ব্যাপার আছে। ওখানে তাকে সহকারী কোচেরা বলেছিলেন যে মারিয়া মাসুরাকে খেলান। এটা বলার জন্য উনি টিম মিটিং বন্ধ করে দেন। ওখানে নওমি ভাই ছিলেন (মিডিয়া এক্সিকিউটিভ)। কিন্তু সে যে মিটিং করাল না এমন একটা ভাইটাল ম্যাচের আগে, সেখানে সে কোনো মিটিং করল না, টিম ঘোষণা নেই, ম্যাচের দিন প্রাকটিস নাই। তখন সে আমাদের হুমকি দিল, সিনিয়র খেলোয়াড় নামিয়ে বলল তোমরা পারলে জিতে দেখাও। তখন অন্যান্য স্টাফরা আমাদের শান্ত থাকার কথা বলেন। আমরা চুপ ছিলাম। কাউকে আমরা কিছু জানতে দেইনি। আমরা খেলার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু... । ’ যোগ করেন তিনি।

কোচের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের দ্বন্দ্ব আগে থেকেই। সেই দ্বন্দ্বের কথা মাথায় না রেখে কেন বাফুফে একাই সিদ্ধান্ত নিল? কেন নারী দলের সঙ্গে আগে আলাপ করা হলো না? এমন প্রশ্ন সানজিদার। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন সমাধান চাই। ফেডারেশন যা বলবে আমরা তা মেনে নেবো। তবে এই কোচের অধীনে নয়। এটা ছাড়া ওনার যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই মেনে নেবো। এটা ওনারা আগে থেকেই জানতো। তারা সেই সময় কোনো স্টেপ নেয়নি। তারা যখন নতুন চুক্তি করে তখন একবারও ভাবে নাই, এই মেয়েগুলা কেন কথাগুলো বলতেছে, তাদের কথা শোনা দরকার। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনে নাই। আসলে এখানে আমরা একটা পরিবারের মতো থাকি। কিন্তু পরিবারে যদি মানসিক শান্তি না থাকে তবে মাঠে সেরাটা কীভাবে দেবো, আপনারাই বলেন। ’

ফুটবলারদের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কোচ বাটলার কটুক্তি এবং টিপ্পনী কাটতেন বলে দাবি করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাডাল্ট, আমাদের একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। আমরা হচ্ছে বিরতির দিনে কফি খেতে যেতে পারি, বন্ধুদের সঙ্গে যেতে পারি, তো বাফুফেতে কিছু কর্মকর্তা আছে যারা কোচকে কানপড়া দেয়, কে কোথায় এসব নিয়ে। তো কোচ আবার মাঠে গিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এমনকি সে আমাকে বলে আমার নাকি মনোযোগ নাই, অন্য বিষয়ে আমার মনোযোগ। তো আমরা যখন নেপালে যাবো, তখন আমরােএখানে নিজেদের মধ্যে খেলতাম। উনি ওখানে দুই ম্যাচে আমাকে নামায়নি। একদিন আমি একটা ভুল পাস করছি, এটা খেলারই অংশ তো উনি এটা নিয়ে আমাকে বলে মনোযোগ নাই, সঙ্গে সঙ্গে আমাকে উঠিয়ে নিল।   মানসিকভাবে সাফে যাওয়ার আগে চাপে ছিলাম। ’

লম্বা আলোচনা শেষে যবনিকায় সাবিনা বলেন, ‘উনি অনেক হাইপ্রোফাইল কোচ, সন্দেহ নেই। আমি বিগত কোচদের নিয়ে কিছু বলব না, তাদের নিয়ে অনেক নিউজ হয়েছে। তবে আমি মনে করি আমাদের সফলতার সবচেয়ে বড় ভূমিকা ফেডারেশনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নিয়ে যা লেখা হচ্ছে সেটা কাম্য নয়। আমরা ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে বসতে চাই। একটা বিষয় নিয়ে চাই না অনেকবার কথা হোক। আপনারা অনেক সময় খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান কিন্তু পান না। তো এই জিনিসগুলো না হোক। আমরা চাই সুষ্ঠু সমাধান। দুইবার সাফ এসেছে এটা তো খুব ফানি কিছু না। দেশবাসীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তারা আমাদের যেভাবে সাপোর্ট দেয় তার জন্য ধন্যবাদ। আমরা কোচকে সম্মান জানিয়ে নিজেদের সম্মান নিয়ে আমরা বিদায় নেব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।