ঢাকা: নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের প্রায় শেষের দিকে পর পর দুই গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো ফ্রান্স। এই জয়ের ফলে চলতি ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরীরা।
প্রথমে উইঙ্গার পল পগবার গোলে এগিয়ে থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার জোসেফ যোবোর আত্মঘাতী গোলে নাইজেরিয়ানদের বিপক্ষে ২-০ তে জয় পায় ফরাসিরা। আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করেও কোনো ফল না পেয়ে হতাশ হয়ে শেষবারের মতো এবারের বিশ্বকাপের মাঠ ছাড়তে হয় আফ্রিকান সুপার ঈগলদের।
খেলার ২ মিনিটের মাথায় প্রথম ফাউলে অভিযুক্ত হন নাইজেরিয়ার জন অভি মিকেল। এই ফাউলে ফ্রান্সের পক্ষে প্রথম ফ্রি-কিক করেন পল পোগবা।
৩ মিনিটের মাথায় ম্যাচের প্রথম কর্নার পায় নাইজেরিয়া, শট নেন লরেন্ট কোসিয়েনলি। এক মিনিট পর কর্নার পায় ফরাসিরাও। তাদের পক্ষে শট নেন অধিনায়ক জোসেফ যোবো।
এই শটে ডি-বক্সের মাঝ থেকে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বল জড়াতে চেষ্টা করেন অলিভার গিরোদ। তবে তার এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
১০ মিনিটের মাথায় অজেনি ওনাজির পাসে ডি-বক্সের বাইরে থেকে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন নাইজেরিয়ান ইমেনিকে। তবে তার এ শট ক্লিয়ার করে দেন ফরাসি ডিফেন্ডাররা।
১৫ মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় ফ্রান্স। এবারও শট নেন গিরোদ, তবে ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার ডান পায়ের এ চেষ্টাও ব্যর্থ।
১৯ মিনিটে দুর্দান্ত শটে ফরাসিদের জালে বল জড়িয়ে গোল উদযাপনে মেতে ওঠেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের অন্যতম নায়ক আহমদ মুসা। তবে অন্যদিকে তার সতীর্থ ইমেনিকে অফসাইডের ফাঁদে ধরা পড়েন।
২২ মিনিটের মাথায় পাল্টা আক্রমণে গিয়ে ম্যাথু ভ্যালবুয়েনার পাসে ডি-বক্সের মাঝ থেকে ডান পায়ে দুর্দান্ত শট নেন পল পোগবা। তবে দুরন্তভাবে বলটি আকড়ে পোগবাকে হতাশ করেন নাইজেরিয়ান গোলরক্ষক ভিনসেন্তে ইনেয়িমা।
২৪ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফরাসি জাল লক্ষ্য করে শট নেন ওনাজি। তবে তার শট রুখে দেয় প্রতিপক্ষের ডিফেন্স।
ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া বল নিয়ে ৩০ মিনিটের মাথায় আক্রমণে যায় নাইজেরিয়া। তবে পিটার ওদেমউইঙ্গির ডি-বক্সের মাঝখান থেকে নেওয়া জোরালো শট ফিরিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ।
৩৩ মিনিটের মাথায় প্যাট্রিক ইভ্রার পাসে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ডান পাশ থেকে শট নেন ম্যাথু দেবুচে। তবে তার এ শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩৪ মিনিটে নাইজেরিয়ানদের জালে বল পাঠিয়ে গোল উদযাপনের চেষ্টা করেন পল পোগবা। তবে তার আগেই তার সতীর্থ জোহান কাবাই অফসাইডে ধরা পড়েন।
৪০ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের মাঝ থেকে ডান পায়ের শট নিলেও ফরাসি দেবুচের শট প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।
৪৪ মিনিটের মাথায় নাইজেরিয়ান ইমেনিকের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। একইসময়ে হ্যান্ডবলে অভিযুক্ত হন নাইজেরিয়ান ভিক্টর মোসেস।
প্রথমার্ধের প্রায় শেষ মুহূর্তে একটি ফ্রি-কি পেলেও তা থেকেও গোল আদায়ে ব্যর্থ হয় ফ্রান্স।
কোনো পক্ষই গোল না পেলেও ফরাসিদের আক্রমণের জবাবে নাইজেরিয়ানরাও পাল্টা আক্রমণ চালায়, তবে প্রথমার্ধ গোলশূন্য রেখেই মাঠ ছাড়ে দু’দল।
প্রথমার্ধে বল দখলে সমানে লড়েছে দুই দল। ফ্রান্সের ৫১ শতাংশের বিপরীতে নাইজেরিয়ানদের পায়ে বল ছিল ৪৯ শতাংশ সময়। নাইজেরিয়ান গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছে ৫টি। একটি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছালেও ধরা পড়ে অফসাইডে, বাকিগুলো ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। অপরদিকে ফ্রান্স প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠানোর লক্ষ্যে শট নেয় ৬ বার। এর মধ্যে একবার ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক, বাকি ৬ বারই হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৪৭ মিনিটের মাথায় কর্নার কিক পায় নাইজেরিয়া, শট নেন কোসিয়েনলি। তিন মিনিট পর কর্নার কিক পেয়ে আক্রমণে গেলেও ব্যর্থ হয় ফ্রান্স।
৫৪ মিনিটের মাথায় ওনাজিকে ফাউলে অভিযুক্ত হয়ে হলুদ কার্ড হজম করেন ফরাসি ব্লেজ ম্যাতুইদি। আর আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন ওনাজি। তার বদলি হয়ে খেলতে নামেন গ্যাব্রিয়েল।
কিছুক্ষণ পরই ৬২ মিনিটের মাথায় গিরোদের বদলি অ্যান্তনি গ্রিয়েজম্যানকে খেলতে নামায় ফ্রান্স। তার দুই মিনিট আগে ফরাসি গোলপোস্ট লক্ষ্য করে দূরপাল্লার একটি ভ্রষ্ট শট নেন।
৬৪ মিনিটের মাথায় নাইজেরিয়ান ওদেমউইঙ্গির ডি-বক্সের মাঝ থেকে নেওয়া শট দুর্দান্তভাবে আকড়ে নেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস।
৭০ মিনিটের মাথায় নাইজেরিয়ানদের জন্য দেবদূত হয়ে আসেন ১১ নম্বর জার্সিধারী মিডফিল্ডার ভিক্টর মোসেস। ডি-বক্সের বাইরে থেকে করিম বেনজেমার শট যখন গোলরক্ষককেও পরাস্ত করে জালে জড়িয়ে যাচ্ছিল ঠিক গোলবারের এক-দেড় ইঞ্চি আগে থেকে উল্টো শটে তা ক্লিয়ার করেন মোসেস।
৭৩ মিনিটে আবারও ডি-বক্সের বাইরে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন বেনজেমা।
খেলার শেষ ১৫ মিনিটে মুহুর্মূহু আক্রমণ করতে থাকে ফরাসিরা।
৭৬ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের মাঝ থেকে কোসিয়েনলির নেওয়া হেড ফিরিয়ে দেন সুপার ঈগল ডিফেন্ডাররা। ৭৭ মিনিটে কর্নার কিক থেকে পাওয়া বল দূরপাল্লার শটে নাইজেরিয়ার গোলবারে আঘাত করেন কাবাই। ৭৯ মিনিটের মাথায় করিম বেনজেমার ডি-বক্সের মাঝ থেকে নেওয়া দুর্দান্ত হেড হাতে ঠেলে মাঠের বাইরে পাঠান নাইজেরিয়ান গোলরক্ষক।
তবে এইবার পাওয়া কর্নার কিক থেকে গোল আদায় করতে ভুল করেনি ফরাসিরা। কর্নার শট থেকে পাওয়া বল জোরালো হেডে প্রতিপক্ষের জালে জড়ান পল পগবা।
৮৪ মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় ফ্রান্স। এবার ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে অ্যান্তইনে গ্রিয়েজম্যানের নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক।
৮৫ মিনিটে নাইজেরিয়া আক্রমণে গেলেও বলকে দূরপাল্লার শটে ক্লিয়ার করেন ফরাসি ডিফেন্ডাররা।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে আক্রমণে যাওয়ার কথা থাকলেও ফরাসিদের আক্রমণ ঠেকাতেই এসময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে নাইজেরিয়ানদের। এই বেসামাল অবস্থার পরিণতি ভোগ করতে হয় খেলার অতিরিক্ত সময়ে। ওদেমউইঙ্গের কর্নার কিক থেকে পাওয়া বল অ্যান্তনিও গ্রিয়েজম্যান প্রতিপক্ষের জালে জড়াতে ডি-বক্সের দিকে এগিয়ে গেলে বল ক্লিয়ার করতে মারাত্মক ভুল করে ফেলেন জোসেফ যোবো, গোলরক্ষক বল আকড়াতে এগিয়ে এলেও তাকে দেখতে না পেয়ে ভুল শটে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে ফেলেন তিনি।
ব্যস, এই অবস্থা থেকে আর ফেরা হয়নি নাইজেরিয়ার।
ম্যাচে বল দখলে সমানে লড়েছে দুই দল। ফ্রান্সের ৪৯ শতাংশের বিপরীতে নাইজেরিয়ানদের পায়ে বল ছিল ৫১ শতাংশ সময়। নাইজেরিয়ানরা গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছে ৮টি। একটি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছালেও ধরা পড়ে অফসাইডে, ২টি ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক, বাকিগুলো ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। অপরদিকে ফ্রান্স প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠানোর লক্ষ্যে শট নেয় ১৫ বার। এর মধ্যে ৪ বারই ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক, ১ বার পৌঁছে চূড়ান্ত লক্ষ্যে, বাকি সবগুলো শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ব্রাসিলিয়ার এস্তাদিও ন্যাসিওনাল স্টেডিয়ামে সেরা আটে ওঠার এ লড়াইয়ে জয়ী ফ্রান্স আগামী ৪ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে লড়বে আলজেরিয়া কিংবা জার্মানির বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪/আপডেট ০০২০ ঘণ্টা