ঢাকা: টানটান উত্তেজনা ও রুদ্ধশ্বাসপূর্ণ কোয়ার্টার ফাইনালের পর জমজমাট সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল বিশ্বকাপ। রেফারিং বিতর্ক, নাটকীয়তায় ভরপুর একেকটি ম্যাচ আর অপেক্ষাকৃত ছোট দলের ইতিহাস গড়ার বিশ্বকাপ হিসেবে ইতোমধ্যেই আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে ফুটবলের এই সর্বোচ্চ আসর।
আর মাত্র ৪টি ম্যাচ পরেই ব্রাজিল বিশ্বকাপের বিদায় বাঁশি বাজবে মারাকানায়। ইতোমধ্যেই ২৮ দলের বিদায়ী কান্নায় ভিজেছে ব্রাজিলের মাঠ।
এসব পেরিয়ে মঙ্গলবার শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপে শেষ ৪ দলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। কোয়ার্টার ফাইনালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে স্বাগতিক ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দুটি করে দেশের উপস্থিতি যেন দুই মহাদেশের লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সেমিফাইনালে ল্যাতিন নান্দনিক ফুটবলের বিপক্ষে লড়বে ইউরোপীয় গতিময় শরীরি ফুটবল। কখনওই ল্যাতিন আমেরিকার মাটিতে বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করতে না পারা ইউরোপ এবার কি নতুন ইতিহাস নির্মাণ করবে? ইউরোপ ও ল্যাতিনের মুখোমুখি লড়াই শেষে প্রতিষ্ঠিত হবে কোন অঞ্চলের আধিপত্য? আবারও কি ‘অল ইউরোপীয় ফাইনাল’ নাকি ল্যাতিন নান্দনিকতার ফাইনাল হবে মারাকানায়? নাকি দুই মহাদেশের প্রতিনিধি হয়ে দুই দল ফাইনালে লড়বে সিংহাসনের দাবিদার হয়ে? এসব উত্তরের জন্য অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।
প্রথম সেমিফাইনাল: ব্রাজিল বনাম জার্মানি
ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানির ম্যাচ; ফুটবলের দুই পরাশক্তির এই লড়াই ‘মহারণ’ ছাড়া কি হতে পারে? ফুটবলের সফলতম দুটি দেশের লড়াই যেন দর্শকদের জন্য যেন এক আরাধ্য। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ শিরোপাধারী ব্রাজিলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সেমিফাইনাল ও ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির লড়াই হতে যাচ্ছে চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ। এ ম্যাচটি যেন ফাইনালের আগে আরেক ফাইনাল।
দুটি হলুদ কার্ডের খাড়ায় জার্মানির বিপক্ষে এ লড়াইয়ে ব্রাজিল কোচ একাদশে পাবেন তার বিশ্বস্ত সেনানী থিয়াগো সিলভাকে। একই সঙ্গে কলম্বিয়ার বিপক্ষে নির্মম ফাউলের শিকার দলের সেরা খেলোয়াড় ‘পোস্টার বয়’ নেইমারের বিশ্বকাপ মিশন শেষ। তাই দলের দুই বাজির ঘোড়াকে হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া ব্রাজিল কি পারবে জার্মান মেশিন থামাতে?
জার্মানির বিপক্ষে ৯ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৫টি জয় প্রেরণা হতে পারে স্বাগতিকদের। অন্যদিকে জার্মানির জয় ২টি, বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ব্রাজিলের সর্বশেষ বিশ্বকাপ শিরোপা জার্মানির বিপক্ষে হওয়ায় সেলেকাওদের আত্মবিশ্বাসও থাকবে তাই তুঙ্গে।
দ্বিতীয় সেমিফাইনাল: আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস
টোটাল ফুটবলের দেশ বলে খ্যাতি কুড়ানো নেদারল্যান্ডস বর্তমানে ইউরোপীয় ফুটবলের গতিদানব। ফ্লাইং ডাচম্যান পার্সি-রোবেনের গতিতে বিদ্ধ হয়ে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। কোয়ার্টার ফাইনালে কোস্টারিকার বিপক্ষে ঘাম ঝরিয়ে পেনাল্টি শুট আউট অতিক্রম করে আসার হল্যান্ডের সামর্থ রয়েছে যেকোনো প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলার। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আবারও গতির ঝড় তুলে না পাওয়া বিশ্বকাপটাকে হাতের মুঠোয় আনতে মরিয়া হয়ে লড়বে ডাচরা।
অন্যদিকে ম্যারাডোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব আসরে ধুঁকতে থাকা আর্জেন্টিনা পেয়ে গেছে মেসি নামের আড়ালে আরেক ম্যারাডোনা! ক্লাব ফুটবলের সব শিরোপা অর্জন তার জন্য মামুলি ব্যাপার হলেও, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শিরোপা সাফল্য রয়ে গেছে অধরা। দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলেই ম্যারাডোনার ছায়া হয়ে নয়, গ্রেটদের কাতারে স্বনামেই বিবেচিত হবেন মেসি। শিরোপা প্রত্যাশী মেসি তাই ডাচ ঝড় থামিয়ে যেতে চাইবেন ফাইনালের দুয়ারে।
ডাচদের সঙ্গে মুখোমুখি ৮ বারের লড়াইয়ে মাত্র ১টি ম্যাচে জয় আর্জেন্টিনার। অন্যদিকে ডাচরা জিতেছে ৪টি ম্যাচ, বাকি ৩টি ড্র। ডাচদের জালে ৮ ম্যাচে ৬টি গোল দিতে পারলেও আর্জেন্টিনাকে হজম করতে হয়েছে ১৩টি গোল। পরিসংখ্যানে সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা মেসি ম্যাজিকে ডাচদের পরাস্ত করবে এবার- এই আশা আর্জেন্টাইন শিবিরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৪