ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

মেসি ভিন্ন গত্যন্তর নেই আর্জেন্টিনার!

সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৪
মেসি ভিন্ন গত্যন্তর নেই আর্জেন্টিনার!

ঢাকা: ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরুর আগে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ঘোষিত নামের তালিকা দেখে সব ফুটবল বোদ্ধাই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবারের সেরা আক্রমণভাগ আর্জেন্টিনার।

বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার মেসি ছাড়াও আলবিসেলেস্তেদের কাফেল‍ায় ছিলেন হিগুয়েন, আগুয়েরো, মারিয়ার মতো মহাতারকারা।

মাঠে তাদের ভয়ে তটস্থ থাকবে প্রতিপক্ষের রক্ষণ। ২৮ বছর পর তাদের পায়ে ভর করেই সোনালি ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরবে ম্যারাডোন‍ার অনুজরা। এমন মত ছিল সব ভক্ত-সমর্থকদের।

ব্রাজিল মিশনের শুরু থেকেই মাঠে মেসি তার ম্যাজিক দেখালেও নিজের ছায়া হয়ে থাকেন বাকিরা। তার ওপর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে পড়েন আগুয়েরো। ফোর মাস্কেটিয়ার্সের এমন সমন্বয়হীনতা ও হতাশ‍াজনক পারফর্ম কপালে ভাঁজ ফেলছিল আকাশি-সাদাদের।

মেসি যেদিন তার জাদুর ঝাঁপি খুলবেন না, সেদিন কি হবে আলবিসেলেস্তেদের? এমন সমালোচন‍ায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ব গণমাধ্যম।

নকআউট পর্বেই মেসির কাঁধের বোঝা ভাগ করে নিতে আসেন মারিয়া। দুর্দান্ত খেলে পুরোনো নিজেকে জানান দেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পেশিতে চোটের কারণে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ চলাকালে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। এর আগে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের মাঝামাঝি চোট পেয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েন আরেক ভরসা আগুয়েরো।

তবে কোয়ার্টার ফাইনালে বেলিজদের বিপক্ষে নিজেকে ফিরে পান হিগুয়েন। তার একমাত্র গোলেই বেলজিয়ামকে হারিয়ে দীর্ঘ ২৪ বছর পর সেমিফাইনালে উঠে আসে আর্জেন্টিনা। কিন্তু এদিন নিজের সেরাটা দেখাতে ব্যর্থ হন মেসি।

২৮ বছরের খরা কাটিয়ে বিশ্বকাপ জেতা থেকে আর্জেন্টিনা মাত্র দুই ধাপ দূরে রয়েছে। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে ফ্যাব ফোর এসেছিলেন ব্রাজিলে। মাঝপথে তাদের দুই সেনানী হারিয়ে সে পথ বন্ধুর হয়ে উঠেছে।

আগুয়েরো ও ‍মারিয়ার বদলি পেরেজ ও লাজেজ্জিরা কি পারবেন মেসিকে যোগ্য সঙ্গ দিতে? এদিকে হিগুয়েন ফর্মে ফিরলেও তার সমর্থন নিয়েও রয়েছে সংশয়। কেননা তিনি বল বানিয়ে দেওয়ার চেয়েও বানানো বল নিয়ে খেলতে দক্ষ।

একার কাঁধে দলকে বয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে আসা মেসি ছাড়া তাই আর গতন্ত্যর নেই আর্জেন্টিনার। যত দিন যাচ্ছে ততই জোরোলো হচ্ছে মেসির ওপর নির্ভরতা। যদিও শুরু থেকেই ম্যারাডোনা পর্যন্ত বলে আসছেন দলকে সফল হতে হলে মেসি নির্ভরতা কমাতে।

কিন্তু মেসি নির্ভরতা না কমে বরং দিনদিন বাড়ছেই। পূর্বসুরী ম্যারাডোনার মতো একাই দলের ভার বয়ে বেড়াতে হচ্ছে মেসিকেই। তার ওপর ‍‌আগুয়েরো ও মারিয়ার অনুপস্থিতির বোঝাও কাঁধে নিতে হচ্ছে তাকে।

না চাইলেও বারবার তাই ৮৬ ম্যারাডোনার ভূমিকাতেই নামতে হচ্ছে মেসিকে। একার পায়ে দলকে বিশ্বকাপ এনে দিতে ইতোমধ্যে জাদুর ঝাঁপি খুলেছেন তিনি।

সেই ঝাঁপির বাকি জাদুগুলো দিয়ে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে নিজের সেরা ঝলক আবারো দেখাবেন মেসি। মীমাংসা করবেন নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অবশিষ্ট বিতর্ককে সেই অপেক্ষায় কোটি আকাশী-সাদা অন্তপ্রাণরা।

সমর্থকদের মতো কোচ সাবেলারও শেষ ভরসা মেসি। বেলজিয়াম ম্যাচের পর আগুয়েরো ও মারিয়ার অনিশ্চিত ভবিষ্যতে তার একমাত্র কামান মেসি বলেই তিনিও বলতে বাধ্য হয়েছেন, আর্জেন্টিনা দলের মেসি মরূভূমিতে পানির মতোই।

দলে থাকুক হিগুয়েন। ফিরে আসুক আগুয়েরো। হঠাৎ জায়গা পেয়ে নজর যতই কাড়ুক লাভেজ্জি ও পেরেজরা। তারপরও ২৮ বছরের বুভুক্ষ‍ু আর্জেন্টাইনদের বিশ্বাস একমাত্র মেসির পায়ে ভর করেই আসবে বিশ্বকাপ। কেবল মাত্র মেসিই পারেন তার জাদুতে ফুটবল বিধাতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে সোনালি ট্রফির লাগাম পেতে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।