ঢাকা: খেলা যখন আর্জেন্টিনা আর হল্যান্ডের মধ্যে, তখন মেসি-হিগুয়েন-রোবেন-পার্সিরাই প্রচারের সবটুকু আলো জুড়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাতের সব তারাই দিনের আলোর (পড়ুন মেসি-হিগুয়েন-রোবেন-পার্সি) গভীরে লুকিয়ে থাকার মত কিছু খেলোয়াড় সব সময় থাকে।
আগামী ৯ জুলাই সেমিফাইনালে হল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। বলাই বাহুল্য, জয়ের জন্য দুই দলই মরিয়া! স্বাভাবিকভাবে উভয় দলেই আছে সৌরালোকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু তারা। এদের নিয়ে মাতামাতি তেমন নেই কিন্তু সেমিফাইনালের মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে হয়ে উঠতে পারেন জয়ের অন্যতম প্রধান কুশীলব।
ইজেকুয়েল গ্যারে (আর্জেন্টিনা)
বেলজিয়ামের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচেই ব্যাক লাইনে দেখা গিয়েছিল গ্যারের নৈপূণ্য। প্রতিপক্ষের প্রায় অধিকংশ পাস এই সেন্টার ব্যাক আটকিয়ে একেবারে ফাইনাল থার্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। বিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে তার ট্যাকলগুলোও ছিল বেশ নিঁখুত।
ইএসপিএন এফসি’র ডারমট কোরিগান তার খেলা এভাবে আলোচনা করছিলেন, গ্যারে যেন ম্যাট হামেলসকে (জার্মানী ডিফেন্ডার) চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল!
সামনের ম্যাচটা সেক্ষেত্রে গ্যারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কারণ এদিন গোল বক্স থেকে রোবেন-পার্সিদের যত দূরে রাখতে পারবেন, তত তার দলের জন্য ভাল।
পাবলো জাবালেতা (আর্জেন্টিনা)
যদিও বেলজিয়াম (ও চেলসি) ভক্তরা আশা করেছিল ইডেন হ্যাজার্ড জাবালেতার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতবেন। কিন্তু তাদের হতাশ করে হ্যাজার্ড তথা বেলজিয়ামকে গোলশূন্য রাখেন আর্জেন্টাইন এ রক্ষণ সেনানী। ম্যাচে বেলজিয়ামকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা।
নিঃসন্দেহে হল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত আক্রমণ বনাম জাবালেতার রক্ষণ, লড়াইটা হবে দেখার মত। এদিকে ডি মারিয়ার ইনজুরিতে শুধুমাত্র রক্ষণ সামলেই দায়িত্ব কমছে না জাবালেতার। প্রয়োজনে তাকেও আক্রমণ শানাতে মাঝে মাঝে ওপরে উঠতে হতে পারে।
ড্যালে ব্লাইন্ড (হল্যান্ড)
যখন তিনি মাঠে থাকবেন, তখন কোন সমস্যাই নেই- চলতি বিশ্বকাপে হল্যান্ডকে যেন এভাবে নিশ্চিত সমস্যামুক্ত করে চলেছেন ড্যালে। চলতি বিশ্বকাপে হল্যান্ডের সাফল্যে তারও বড় অবদান রয়েছে। গোটা মাসজুড়ে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সব পাস পাড়িয়েছেন এ লেফট ব্যাক।
মজার ব্যাপার হলো, মিডফিল্ডেও তার উপর দারুণ ভরসা করা যায়। সাবেক ইংলিশ ফুটবলার স্ট্যান কলিমোর ঠিক এমনটাই বলছিলেন, হল্যান্ড যেন ড্যালেকে লাম-এস্কদের মত রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে দেখতে চায়।
তার শক্তিশালী পাস এবং চতুর সিদ্ধান্তগুলো কোয়ার্টার ফাইনালে কোস্টারিকার বিপক্ষে অনেকাংশে এগিয়ে রেখেছিল ডাচদের। সেমিফাইনালে মেসি-হিগুয়েনদের গোলপোস্ট খুঁজে নেওয়ার আগে পেরতে হবে ড্যালের বাধা।
জ্যাসপার সিল্লেসেন (হল্যান্ড)
কোস্টারিকার বিপক্ষে পেনাল্টির আগে নিয়মিত গোলক্ষক জ্যাসপারকে তুলে নেন কোচ ভন গাল। সেদিন টিম ক্রুলের নৈপূণ্য ও ভন গালের মগজাস্ত্রে হল্যান্ড জয় পায়। এতে মোটেও প্রমাণ হয় না, দলে জ্যাসপারের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।
এতদিন হল্যান্ডকে বিপক্ষ দলের আক্রমণ থেকে বাচিঁয়ে এতদূর এনেছেনে। জ্যাসপার এখনও ভন গ্যালের বাজির ঘোড়া। কোচ তার নাম্বার ওয়ার গোলরক্ষী সম্পর্কে আভাস দিয়েছেন, জ্যাসপার নামতে পারে যেকোন বড় মূহুর্তে।
দ্য অবজারভারকে তিনি বলেছেন, এটা ছিল উত্তেজনা আর রোমঞ্চকর। কোস্টারিকার ১১৭ মিনিট সুযোগ ছিল। যদি এতক্ষণ জ্যাসপার না আটকাতো তাহলে আমরা বাদ পড়ে যেতাম।
এখন অপেক্ষা বল মাঠে গড়ানোর। সেইসাথে চোখ থাকবে এই চার অঘোষিত নায়কের উপর। বড় ম্যাচ, বড় মূহুর্ত- নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলেই বড় তারকা!
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৪