ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

অভিমানী ওজিল বললেন, ‘জার্মানির হয়ে আর খেলতে চাই না’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
অভিমানী ওজিল বললেন, ‘জার্মানির হয়ে আর খেলতে চাই না’ মেসুত ওজিল

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে জার্মানির লজ্জাজনক পারফরম্যান্সের পর তাকেই সবচেয়ে বেশি দোষারোপ করা হচ্ছিল। এমনকি এই দল যে আগের আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো, সেখানে তার দুর্দান্ত অবদান বেমালুম ভুলে এবার কেন তিনি ‘এবার খোলস ছেড়ে বেরোতে পারছেন না’, সেজন্য চড়ানো হচ্ছিল সমালোচনার শূলে। এমনকি বর্ণবাদী আক্রমণেরও শিকার হতে হচ্ছিল তাকে।

এতো দোষারোপ আর বর্ণবাদী সমালোচনার কারণে ভীষণ অভিমানে আন্তর্জাতিক পরিসরে খেলায় অনাগ্রহই জানিয়ে দিলেন জার্মানির তারকা মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জার্সিকে বিদায় বলে আর্সেনালের এই প্রাণভোমরা বলেন, ‘জার্মানির হয়ে খেলার আর কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

তার্কিশ বংশোদ্ভূত ওজিল বিশ্বকাপ শুরুর আগে মে মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর তাদের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে। সেটাকে ‘রাজনৈতিক সাক্ষাৎ’ আখ্যা দিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয় ওজিলের বিরুদ্ধে। তার মতে, ওই ঘটনার পর তাকে ‘বর্ণবাদ’ আর ‘অসম্মানজনক’ আচরণের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

এসব সমালোচনার জন্য জার্মান ফুটবল ফেডারেশনকে (ডিএফবি) তুলোধুনো করে টুইটারে লেখা এক খোলা চিঠিতে ওজিল বলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে ছবি তোলা আমার জন্য রাজনৈতিক ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল না, এটা আমার পরিবারের দেশের সর্বোচ্চ অফিসকে সম্মান করার মতো বিষয় ছিল’।

‘আমার কাজ ফুটবল খেলা এবং আমি কোনো রাজনীতিবিদ নই। আমাদের সাক্ষাৎ মোটেই রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ ছিল না। জার্মান ফুটবল ফেডারেশন ও আরও অনেকে আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছে তাতে আমার আর জার্মানির জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার আগ্রহ শেষ করে দিয়েছে। আমি অবাঞ্চিত বোধ করছি এবং আমি মনে করি ২০০৯ সালে অভিষিক্ত হওয়ার পর যা অর্জন করেছি তা বিস্মৃত হয়ে গেছে’।

জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট রেইনহার্ড গ্রিন্দেলকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে ওজিল লিখেছেন, ‘যাদের জাতিগত বৈষম্যমূলক অতীত রয়েছে তাদের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল ফেডারেশন, তাদের কাছে দ্বৈত-পরিচয়ের ফুটবলারদের দেখভালের এতো বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করা ঠিক নয়। তাদের আচরণ তারা যাদের প্রতিনিধিত্ব করে তাদের প্রতিফলন করে না। গ্রিন্দেল আর তার সমর্থকদের চোখে, আমি যখন জয়ী হই তখন জার্মান আর যখন হেরে যাই তখন আমি শরণার্থী’।

এরপরই ওজিল লিখেছেন, ‘যখন আমি বৈষম্যবাদ আর অসম্মানিত বোধ করি তখনই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী মাথায় রেখে জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমি আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি জার্মানির জার্সি অনেক গর্ব আর উত্তেজনা নিয়ে গায়ে চড়িয়েছি। কিন্তু এখন আর চাই না’।

রোববার (২২ জুলাই) তিন ভাগে বিভক্ত ওই বিবৃতিতে গ্রিন্দেলের আচরণ নিয়ে ওজিল লিখেছেন, ‘আমি হতাশ, কিন্তু তার আচরণে আমি মোটেও অবাক হইনি। কিন্তু যখন জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার তুর্কি শিকড়কে অসম্মান করে এবং স্বার্থপরের মতো আমাকে রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ সাব্যস্ত করে, তাহলে সেটা যথেষ্ট সাব্যস্ত হয়’।

২৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার অনলাইনে হেনস্তার শিকার হয়েছেন এবং সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচের পর সমর্থকদের হাতে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন।

‘ম্যাচের পর একজন জার্মান সমর্থক আমাকে এই বলে গালি দেয়- ওজিল, তুর্কি বিষ্ঠা, গোল্লায় যাও তুমি, তুর্কি শুকর কেটে পড়ো’। আর ঘৃণায় ভরা ই-মেইল, হুমকি দিয়ে ফোন আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের মন্তব্য, যা আমি ও আমার পরিবার পেয়েছে তা নিয়ে আলোচনাও করতে চাই না’।

‘তারা অতীতের জার্মানিকে প্রতিনিধিত্ব করে, সেই জার্মানি যা নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি না। আমি নিশ্চিত যে, যারা মুক্ত জার্মান সমাজের অংশ তারা আমার সঙ্গে একমত হবেন’।

নিজেকে অর্ধেক জার্মান, অর্ধেক তুর্কি বলে অভিহিত করে ওজিল লেখেন, ‘আমার দু’টি হৃদয়, একটি জার্মান আর একটি তুর্কি। তারা (সমালোচক) আমার পারফরম্যান্সের সমালোচনা করে না, তারা দলের পারফরম্যান্স নিয়েও সমালোচনা করে না, তারা শুধু আমার তুর্কি পরিচয় নিয়ে সমালোচনা করে’।

জার্মানির তরফ থেকে এমন বাজে আচরণের শিকার হলেও ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ওজিলের পাশেই আছে। ক্লাবটির সঙ্গে তার চুক্তি নবায়ন হয়েছে। রোববার (২২ জুলাই) সিঙ্গাপুরে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির জন্য পৌঁছেছে আর্সেনাল।

ওজিল এবার এমন আক্রমণের শিকার হলেও ২০১৪ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়ে জার্মানির হয়ে মাঝমাঠের প্রাণভোমরার ভূমিকা পালন করেন। ব্রাজিল বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর ম্যাচে আলজেরিয়ার বিপক্ষে ১১৯ মিনিটে করা তার গোলেই শেষ রক্ষা হয় জার্মানির। এরপর ব্রাজিলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বড় জয়ে এবং ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে শিরোপা জয়ে তার অনস্বীকার্য ভূমিকাই দেখেন সমর্থকরা।
 
মাঝমাঠে আক্রমণ সাজালেও ওজিল গোলও কম করেননি। জার্মানির হয়ে ৯২ ম্যাচে তার গোল উদযাপন ২৩টি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এইচএ/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।