এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাত্র দুই ম্যাচে মাঠে নেমেছেন নেইমার। দুই ম্যাচেই জয়সূচক গোল এনে দিয়েছেন তিনি।
মৌসুমের শুরুটা অবশ্য নেইমারের অনুকূলে ছিল না। দলদবলের ঝামেলার কারণে তাকে স্কোয়াডেই রাখেননি কোচ টমাস টুখেল। কিন্তু যখন ফিরলেন, রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই হলো। প্রায় একাই পিএসজিকে জেতার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচ শেষে পিএসজি তারকা মার্কো ভেরাত্তি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি ক্লাব (পিএসজি) ভালো কাজ করেছে। আমার মনে হয়, আমরা যাদের রিক্রুট করেছি তার মধ্যে নেইমারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ’
স্ত্রাসবুর্গ ও লিঁও’র বিপক্ষে লিগ ওয়ানের ম্যাচে প্রায় হারতে হারতে বেঁচে গেছে পিএসজি। দু’বারই 0-0 গোলে আটকে থাকা ম্যাচে তাদের রক্ষা করেছেন নেইমার। অথচ দুই ম্যাচেই তাকে দর্শকদের দুয়ো শুনতে হয়েছে। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নীরব প্রতিশোধ নিয়েছেন এবং বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন তার সামর্থ্যে এতটুকু মরচে ধরেনি। দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে নেইমার শুধু তার সমালোচকদের ঠাণ্ডা করে দিয়েছেন তা নয়, বার্সাকেও দেখিয়ে দিয়েছেন, তারা কী মিস করেছে।
তবে নেইমারকে কিনতে বার্সার চেষ্টার কমতি যেমন ছিল না, বার্সায় ফিরতে নেইমারেরও কম চেষ্টা করেননি। তার সাবেক ক্যাম্প ন্যু সতীর্থ লুইস সুয়ারেস যেমন জানিয়েছেন, ‘সে (নেইমার) ফেরার জন্য সবরকম চেষ্টা করেছে। ’
বার্সার প্রতি একটা ক্ষোভ অবশ্য নেইমারের থাকতেই পারে। কারণ, তার জন্য যে দাম হাঁকিয়েছিল পিএসজি তা কাতালানদের কাছে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়নি। পিএসজি চেয়েছিল ২০১৭ সালে নেইমারকে কিনতে যে পরিমাণ অর্থ (২২২ মিলিয়ন ইউরো) খরচ হয়েছিল অন্তত সেই পরিমাণ অর্থ ক্যাশ করতে।
পিএজজির চাহিদা মেটাতে একের পর এক অফার দিয়েছিল বার্সা। কিন্তু কোনোটাই পিএসজির পছন্দ হয়নি। কারণ, বার্সা শুধু অর্থ নয়, সঙ্গে দিতে চেয়েছিল কয়েকজন খেলোয়াড়কেও, যাতে দামটা হাতের নাগালে রাখা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
নেইমার নাটক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বার্সা প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তমেউ বলেছিলেন, ‘দরকষাকষির এক পর্যায়ে, যখন পিএসজির কাছ থেকে নতুন চাহিদার প্রস্তাব এলো, সেটা আমাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা আলোচনা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ সে (নেইমার) আমাদের স্কোয়াডে বাড়তি হয়ে যেত। ’
কিন্তু বার্সা প্রেসিডেন্ট এখন নিশ্চয়ই মাথা চুলকানো শুরু করেছেন। কারণ, নেইমার তার আসল ফর্ম দেখাতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে বার্সেলোনার অবস্থা মোটেও সুবিধাজনক নয়। মেসি আর সুয়ারেস এখনও ফর্মে ফিরতে পারেননি। তাছাড়া দুজনেরই আছে ইনজুরি সমস্যা। বার্সার অবস্থাও ভালো নয়। ৬ ম্যাচে মাত্র ৩ জয়, ঠিক বার্সাসুলভ নয়।
বার্সার চিন্তার বড় কারণ এই মৌসুমে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে কিনে আনা আঁতোয়া গ্রিজম্যান। মেসি-সুয়ারেসদের সঙ্গে এখনও খাপ খাওয়াতে পারেননি এই ফরাসি তারকা। উসমানে দেম্বেলেও ফিট নন। তাহলে নেইমার ‘বাড়তি’ হতেন কীভাবে? বরং এই দলটির জন্য নেইমারই ছিলেন সবচেয়ে যোগ্য ফরোয়ার্ড। মেসি-সুয়ারেসদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও বোঝাপড়া বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি হতো।
ওদিকে নেইমার ক্রমেই পিএসজিতে তার হারানো অবস্থান ফিরে পাচ্ছেন। প্রথম ম্যাচে তাকে উদ্দেশ করে গালি আর দুয়োর বন্যা বইয়ে দিয়েছিল সমর্থকরা। ম্যাচ শেষে সেসব মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে নেইমার বলেন, ‘আমরা সমর্থকদের অবস্থা বুঝি এবং জানি এটা তাদের জন্য কঠিন। দর্শকদের দুয়ো আমি পুরো ক্যারিয়ারেই শুনেছি। আমি এতে অভ্যস্ত। এবার থেকে প্রতিটি ম্যাচই আমাকে অ্যাওয়ে ম্যাচ হিসেবে খেলতে হবে। ’
ঘরের মাঠে নিজ ক্লাবের সমর্থকদের বাজে আচরণের মুখোমুখি হওয়ার ৭ দিন পর লিঁও’র মাঠে নামেন নেইমার। এবার তার প্রতি সমর্থকদের বাজে আচরণের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। তিনি যখনই কর্নার কিক নিতে গেছেন ঠিক তখনই তার দিকে কাগজের বল, প্লাস্টিক বোতল ছুড়ে মারেন ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। নেইমার মাথা ঠাণ্ডা রেখে নিজেকে সরিয়ে নেন। তাকে এসব থেকে রক্ষা করতে এমনকি মানব দেয়াল তৈরি করতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের।
দর্শক-সমর্থকদের অতি উগ্র আচরণের জবাব অবশ্য কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন নেইমার। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার ঠিক ৬০ সেকেন্ড আগে লিঁও’র ডিফেন্স ভেদ করে অবিশ্বাস্য ফিনিশিং টানেন তিনি। এই ম্যাচের ঠিক ১ ঘণ্টা আগে গ্রানাদার কাছে হেরে বসে বার্সা। সবমিলিয়ে নেইমারের মতো ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স তাদের কতটা প্রয়োজন ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস