বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছেন লিওনেল মেসি। সেখানে তিনি ফের একবার জুটি বাঁধবেন প্রিয় বন্ধু ও সাবেক বার্সা সতীর্থ নেইমার জুনিয়রের সঙ্গে।
এর আগে বার্সেলোনায় মেসি, নেইমার ও লুইস সুয়ারেস মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘এমএসএন’ ত্রয়ী। কিন্তু পিএসজিতে তৃতীয় সদস্য হিসেবে আপাতত এই মৌসুমে থাকছেন এমবাপ্পে। অর্থাৎ এবার আর ‘এমএসএন’ নয়, ত্রয়ীর নতুন নাম ‘এমএমএন’। এই তিনজন এক দলে থাকা মানে পিএসজির প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ। কিন্তু ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর অর্জনকে ছাপিয়ে যাওয়া যেকোনো বিচারেই প্রায় অসম্ভব কাজ।
মেসি, সুয়ারেস ও নেইমার একসঙ্গে ৩ মৌসুম খেলেছেন। ২০১৪ সালে লিভারপুল ছেড়ে ক্যাম্প ন্যুয়ে আসেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। এরপর ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যান নেইমার। মাঝের ৩ বছরে তারা ৩ জন মিলে করেন ৩৬৪ গোল, অ্যাসিস্ট ১৭৩টি! এই ত্রয়ী বার্সাকে ২টি লা লিগা, ৩টি কোপা দেল রে এবং ১টি করে সুপার কোপা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন।
এমবাপ্পে বনাম সুয়ারেস
৩ মৌসুমে ৯টি শিরোপা, ৫০০ -এর বেশি গোল ও অ্যাসিস্ট- মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে অনেকে বলছেন এমএমএন- মেসি, এমবাপ্পে এবং নেইমার হয়তো আরও বেশি কিছু অর্জন করতে পারেন এবং ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর চেয়েও বেশি প্রতিভাধর। তবে এমন তুলনা সুয়ারেসকে খাটো করে দেখার নামান্তর। তাকে হয়তো মেসি ও নেইমারের সমকক্ষ ভাবা হয় না, কিন্তু বার্সার সাফল্যে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি গত মৌসুমের আগে তাকে যখন একপ্রকার বের করে দিল বার্সা, তিনি কিন্তু ঠিকই অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে লা লিগার শিরোপা জয় করেছেন।
অন্যদিকে এমবাপ্পের বয়স এখন মাত্র ২২ বছর। তাকে হয়তো ভবিষ্যতের মহাতারকা হিসেবে ভাবা হয়, কিন্তু বাকি দুই সুপারস্টারের সঙ্গে মিলে তার সাফল্য হয়তো তাকে একই পর্যায়ে তুলে আনবে। তাছাড়া ফরাসি ফরোয়ার্ড এখনও উঠতি তারকা হিসেবেই বিবেচিত। ত্রয়ীর বাকি দুজন অনেক আগেই আসন গেঁড়ে ফেলেছেন। ৩৪ বছর বয়সেও মেসি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন ক্লাবে সাবেক বার্সা ফরোয়ার্ড কি তার আগের ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন? নাকি এখান থেকেই তার শেষের শুরু হয়ে গেল?
‘এমএসএন’ ত্রয়ীর ৩ বছর সময়কালে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৫১ গোল করেছিলেন মেসি। সর্বশেষ ৩ মৌসুমে তার গোলের গড় ৪০। এই সংখ্যা এখনও অবিশ্বাস্য, কিন্তু তার নিজের মানদণ্ডে নয়। এরপর নেইমারের প্রসঙ্গ এলে অবধারিতভাবে আসবে ইনজুরির কথা। এই কারণে ফরাসি জায়ান্টদের জার্সিতে তার চার বছরের ক্যারিয়ারের অনেক বড় একটা সময় কেটেছে সাইড বেঞ্চ কিংবা হাসপাতালে।
২০২০/২১ মৌসুমে, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড করেন মাত্র ১৭ গোল। ২০১৩/১৪ মৌসুমে বার্সার জার্সিতে নিজের প্রথম মৌসুমের পর এটাই তার সর্বনিম্ন গোলসংখ্যা। তবে ফের একবার মেসির সঙ্গে খেলতে শুরু করতে এই সংখ্যা বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এজন্যই হয়তো নেইমার নিজেও বারংবার মেসির সঙ্গে পুনরায় খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করে আসছিলেন।
নেইমারের হয়তো তুমুল জনপ্রিয়তা আছে, কিন্তু পিএসজির মূল তারকা এমবাপ্পে। এখন দেখার বিষয় বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি ফরোয়ার্ডের সঙ্গে মেসির জুটি কেমন জমবে। তিনজনকে একসঙ্গে জ্বলে উঠতে দেখা কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনোর জন্য হবে সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত। হয়তো তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে, তবে এই ত্রয়ী যে আগামীতে ইউরোপীয় ফুটবলে রাজত্ব করবেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত বলা যায়।
অনেক পিএসজি সমর্থক হয়তো আফসোস করতে পারেন- মেসি যদি আরও কম বয়সী হতেন, নেইমার যদি বার্সার সময়কার সেই চরম পেশাদার হতেন, কিংবা এমবাপ্পে যদি ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকতেন তাহলে হয়তো এখনই বলে দেওয়া যেত শিরোপাটা তাদের ঘরেই যাচ্ছে। কিন্তু কিছু সত্য মেনে নিতেই হবে। কারণ মেসির জন্য এটা একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে।
লিগ ওয়ানের কোয়ালিটিও কিছুটা নিচের দিকে। ফলে লিগে মেসির গোলসংখ্যা হয়তো বাড়তে পারে। কিন্তু আসল লড়াই হবে চ্যাম্পিয়নস লিগে। এজন্যই মেসিকে দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি। এর আগে সার্জিও রামোস এবং জিয়ানলুইজি দোনারুমাকে ফ্রি ট্রান্সফারে কিনেছে তারা। ফলে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলবদল করেছে পিএসজি। আগামী মৌসুমে এই দলটির কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকবে অনেক উঁচুতে।
এবার বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন লিলের কাছে শিরোপা ছিনিয়ে আনা কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার চেয়ে কম কিছু মানে পিএসজির জন্য ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হবে। তবে এসব অর্জন করলেও ‘এমএমএন’ এর সঙ্গে ‘এমএসএন’ এর তুলনা সত্যিকারের অর্থে সম্ভব নয়। কারণ এক মৌসুম নয়, তুলনাটা হবে তিন বছরের সম্মিলিত সাফল্যের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
এমএইচএম/এমএমএস