বসুন্ধরা কিংস ও মোহনবাগানের ম্যাচের গায়ে লেগে গেল নতুন ট্যাগ। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া হলো ‘বাংলা ক্লাসিক’ ট্যাগ।
একসময় ফুটবল ছিল দুই বঙ্গের গৌরবের পতাকা। পশ্চিমবঙ্গে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল আর পূর্ববঙ্গ মানে বাংলাদেশে মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, আবাহনীর দাপট। পশ্চিমবঙ্গ থেকে খেলাটি আস্তে আস্তে অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পেয়েছে সর্বভারতীয় রূপ।
অন্যদিকে বাংলাদেশে সেটি আটকে ঢাকাতেই এবং গৌরবের অনেকখানিই ক্ষয়ে গেছে। এই ক্ষয়িষ্ণু ফুটবলে নবজাগরণের ডাক দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। একদম আধুনিক কায়দায়, পেশাদার ভঙ্গিতে তিন মৌসুমের পথচলায় তাদের মুকুটে যোগ হয়েছে অনেক শিরোপা। ঘরোয়া ফুটবলে সর্বজয়ী দলটি এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গন রাঙাতে গিয়ে এক অলিখিত ‘ফাইনালে’ মুখোমুখি হচ্ছে মোহনবাগানের।
দুই বঙ্গের ফুটবল আবেগ, গৌরব-সৌরভ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে মালদ্বীপে প্রাক-ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে। তবে বাঙালি ডিফেন্ডার শুভাশীষ বোস সেই আবেগকে এতটুকু প্রশ্রয় দেননি, ‘হ্যাঁ, এটাকে দুই বঙ্গের লড়াই বলতে পারেন। দুই বঙ্গে অনেক মিল থাকলেও ম্যাচটি জেতার জন্যই মাঠে নামব। ’
সত্যি বললে, সময়ের সঙ্গে মোহনবাগানও বদলে গেছে। আগের মতো বাঙালি ফুটবলারের দাপট নেই, ঐতিহ্যের গর্ব থাকলেও ইতিহাস তাদের অজানা, তাই যেন ঘাটতি পড়েছে আবেগেও। এখন করপোরেট হাওয়ায় ভেসে মোহনবাগানও হয়ে উঠতে চাইছে সর্বভারতীয় দল। তাদের চেয়ে বরং বসুন্ধরা কিংসের তপু বর্মণের কাছে এই ম্যাচের মাধুর্য অন্য রকম, ‘মোহনবাগান অনেক পুরনো দল, তাদের ফুটবল ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশে নতুন পথচলা শুরু হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের, এই জার্সিতে আমরাও গৌরবের সন্ধানে নেমেছি। দেশে সব ট্রফি জিতে এখন এএফসি কাপে ক্লাবের পতাকা উঁচিয়ে ধরতে চাই। ’
দেশের নতুন এই পরাশক্তির বড় স্বপ্নের জায়গা এএফসি কাপ। গ্রুপ পর্ব পেরোলেই তাদের সেই স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করবে। কিন্তু স্বপ্নঘুড়ির নাটাই যে আজকের ম্যাচের হাতে, যেখানে বসুন্ধরা কিংসের তরফে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। ‘দক্ষিণ এশিয়ার দুটি সেরা দল এই ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে। পয়েন্টে এগিয়ে থাকার সুবাদে মোহনবাগান এই ম্যাচে খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তবে আমাদেরও ম্যাচ জেতার সামর্থ্য আছে। আগের দুটি ম্যাচের তুলনায় এই ম্যাচটি হবে অন্য রকম এবং আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’—নতুন কৌশলে ম্যাচ জয়ের পরিকল্পনা করছেন অস্কার ব্রুজোন। কিংসের এই স্প্যানিশ কোচ মাজিয়া স্পোর্টসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ২-০ গোলে জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলিয়েছেন একই একাদশ। বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে সেটি গোলশূন্য ড্র হলে ৪ পয়েন্ট নিয়ে কিংস আছে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে। টানা দুই ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এটিকে মোহনবাগান।
এই ম্যাচ ড্র করলেই তারা পৌঁছে যায় এএফসি কাপের পরের রাউন্ডে। কিন্তু মোহনবাগানের কোচ অ্যান্থনিও হাবাস ড্রয়ের পথে হাঁটতে নারাজ, ‘ড্র হলেই হয় তবে আমরা এই পথে হাঁটব না। ছেলেরা পরের ম্যাচে অপরিচিত প্রতিপক্ষের সঙ্গে আরেকটি জয়ের জন্য খেলবে। ’ আপাতভাবে অপরিচিত হলেও এই স্প্যানিশ কোচ নিশ্চয়ই শুনেছেন ঘরোয়া ফুটবলে কিংসের সাফল্যগাথা। তাই পরক্ষণেই যোগ করেছেন, ‘জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। কারণ বসুন্ধরা কিংস ভালো দল, তাই ম্যাচটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ’
ড্রয়ে সুযোগ থাকলেও এই ম্যাচকে হালকাভাবে নিতে চান না অ্যান্থনিও হাবাস। ব্রুজোনের তো সেই বিলাসিতা দেখানোরও সুযোগ নেই, ‘এই টুর্নামেন্টে প্রতিটি ম্যাচই একেকটি ফাইনাল। আমি জানি, এই ম্যাচ হারলে আমাদের বিদায় নিতে হবে। মোহনবাগানকে নিয়ে আমার বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়ে গেছে। ৯০ মিনিটে আমরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলব এবং ক্লাব জার্সির গৌরব অটুট রাখব। ’
কিংস কোচের সমস্যা হলো কৌশলে। তার কাছে আক্রমণের রসদ আছে, কিন্তু সেগুলোর ভালো ব্যবহার না করে তিনি খানিকটা রক্ষণাত্মক ছিলেন গত ম্যাচে। এই ম্যাচে আর সেই কৌশল খাটে না। সহজাত আক্রমণাত্মক ফুটবলকে শিরোধার্য করে গোলের খেলা খেলতে হবে এবং লাতিন ফরোয়ার্ড ত্রয়ীকে জাগিয়ে তুলতে হবে। দুই ম্যাচেই রবসন রোবিনহো ছিলেন দুর্দান্ত। তাঁর সঙ্গে আর্জেন্টাইন রাউল বেসেরা ও ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্দেজের চমৎকার সম্মিলনই দিতে পারে গোলের অঙ্কের সমাধান।
জয়ের কঠিন অঙ্ক মিলে গেলে মোহনবাগানের দর্প চূর্ণ করে বসুন্ধরা কিংস রওনা হবে নতুন ফুটবল গৌরবের পথে। সঙ্গে থাকবে লাল-সবুজের বঙ্গীয় ফুটবল পতাকাও।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২১
এমএমএস