গাইবান্ধা: ২০১৮ সালে শুরুটা ছিল ৪-০ গোলে হেরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। লজ্জার এ পরাজয় থেকেই সৃষ্টি হয় জয়ের নেশা।
বদলে যাওয়ার এ গল্পটা গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর নারী (অনূর্ধ্ব-১৭) ফুটবল দলের। অক্লান্ত পরিশ্রম, দৃঢ় মনোবল আর সঠিক দিক-নির্দেশনায় অর্জিত হয়েছে এ সাফল্য।
বদলে যাওয়া এ নারী ফুটবল দলের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়াবিদ সুরুজ হক লিটন।
গত শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলের কোচ সুরুজ হল লিটনেরর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, উপজেলার স্বনামধন্য নারী বিদ্যাপীঠ পলাশবাড়ী পিয়ারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ১১শ। ২০১৮ সালে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হই। সে সময় স্কুল পর্যায়ে গাইবান্ধায় অনুষ্ঠিত এক ফুটবল ম্যাচে অংশ নেয় পিয়ারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। খেলায় গাইবান্ধা আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে আমরা ৪-০ গোলে পরাজিত হই। এ পরাজয়ে দলের প্রতিটি সদস্যসহ আমি অত্যন্ত ব্যথিত হই এবং মনে ভবিষ্যতের জন্য একটা সংকল্প করি। বাড়ি ফিরে ছাত্রীদের নিয়ে শুরু হয় আমার মিশন। এক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফলও মেলে। ঠিক পরের বছর অনুষ্ঠিত এক ফুটবল ম্যাচে সেই আসাদুজ্জামান বালিকা বিদ্যালয় দলকে আমরা ৫-০ গোলে পরাজিত করি। এ ফলাফল আমাদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলকে নিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চালিয়ে যাই প্রশিক্ষণ। মেয়েদের চেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তায় মিলতে থাকে একের পর এক সাফল্য। '
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (জেএফএ) পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জেএফএ কাপ (অনূর্ধ্ব-১৭) বালিকা ফুটবল টুর্নামেন্টে রংপুর আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়া। একই বছর এসকেএস বালিকা ফুটবল টুর্নামেন্টে (অনূর্ধ্ব-১৭) গাইবান্ধা জেলা চ্যাম্পিয়ন হই আমরা। এছাড়া ২০২০ ও ২০২১ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোন্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ( অনুর্ধ-১৭) টানা দুইবার গাইবান্ধা জেলা চ্যাম্পিয়ন হয় পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দল। বর্তমানে দলের ৪ জন সদস্য ঢাকায় বসুন্ধরা কিংসে সুযোগ পেয়ে প্রশিক্ষরত। তারা ভবিষ্যতের অনেক ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস। '
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুরুর দিকে মাত্র ৩ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রশিক্ষণ করতে হয়েছে। নারীদের ফুটবল খেলা- প্রশিক্ষণে উৎসাহী ছিলেন না অভিভাবকরা। শিক্ষকদের নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে মেয়েদের মাঠে নামাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া বাড়ি থেকে প্রশিক্ষণ মাঠে মেয়েদের যাতায়াতের খরচ দিতে হয়েছে নিজ পকেট থেকে। শতচেষ্টা করেও অনেকের বাল্যবিয়ে ঠেকানো যায়নি। এরকম হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্যদিয়ে এতটা পথচলা। '
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে তিনি জানান, 'পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলকে নিয়ে আরো এগিয়ে যেকে চাই আরো অনেকটা পথ। সে লক্ষ্যে শুধু মেয়েদের নয়, নিজেরও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আওতায় কোচিং এ উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি। '
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বাংলানিউজকে বলেন, 'সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের প্রতিটি স্তরে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলের ধারাবাহিক সাফল্যে আমরা গর্বিত। তাদের সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এমএইচএম