ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি’তে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন নেইমার জুনিয়র। ট্রান্সফার ফি’র পরিমাণ ছিল ২২২ মিলিয়ন ইউরো।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’র এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে যাওয়ার পর প্রথম মৌসুমেই নেইমারের পকেটে ঢুকেছে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো। মূলত তার তুমুল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্রান্ড পিএসজির সঙ্গে চুক্তি করেছে। সেখান থেকেই এসেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। যার একটা বড় অংশ গেছে নেইমারের অ্যাকাউন্টে।
এদিকে আরেক স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সাল্র আগস্টে নেইমারকে পেতে পিএসজির মোট খরচ হয়েছিল ৪৮৯ মিলিয়ন ইউরো। তার রিলিজ ক্লজ হিসেবে বার্সাকে ২২২ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছিল পিএসজি। তার বার্ষিক বেতন ধরা হয়েছিল ৪৩ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। আরও এক মৌসুম বেশি থাকলে ষষ্ঠ মৌসুমের জন্য তার বেতন দাঁড়াবে সাড়ে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। এছাড়া ক্লাবের বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তির আয় থেকেও একটা ভাগ পাবেন তিনি।
চুক্তির আর্থিক দিকটি প্রকাশ্যে আসার পর এর স্বপক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়েছিল পিএসজি। তাদের দাবি, নেইমারের সঙ্গে চুক্তি ছিল তাদের জন্য বড় বিনিয়োগের মতো। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি চুক্তি স্বাক্ষরের পর বলেছিলেন, ‘যা খরচ করেছি নেইমারের কাছ থেকে আমরা তার চেয়ে বেশি আয় করব। ’
পিএসজির অফিসিয়াল শপগুলো নেইমারের জার্সি তোলার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ইউরো আয় করেছিল। ক্লাবের পক্ষ থেকে পরে স্বীকার করা হয়েছিল, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে না পেলে ইতালিয়ান ব্র্যান্ড রিপ্লে কিংবা নাইকির সঙ্গে বিশাল অঙ্কের চুক্তি সম্ভব হতো না। তাছাড়া নেইমার না থাকলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পিএসজির ফলোয়ার সংখ্যাও আকাশ ছুঁতে পারতো না।
নেইমার পিএসজিতে যাওয়ার পর প্রথম মৌসুমে ফরাসি লিগ ওয়ানের দর্শক সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্রাজিলে লিগ ওয়ানের খেলা সম্প্রচারের ঘোষণা দেয় ডিজনি চ্যানেল। যা আগে ইএসপিএন ও ফক্স স্পোর্টস সম্প্রচার করতো। লিগ ওয়ানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক ইয়োয়ান গোডিন বলেন, ‘নেইমারের আগমন নিঃসন্দেহে পিএসজি এবং ফরাসি লিগকে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। (পিএসজির জার্সিতে) তার প্রথম ম্যাচ ছিল ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা ম্যাচগুলোর একটি। ’
প্যারিসের সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, নেইমারের আগমনের কারণে পিএসজি বিশ্বের দ্বিতীয় লাভজনক ক্লাবে পরিণত হয়েছে। এমনকি নেইমারের কারণেই পিএসজি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্লাবের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এসব কারণেই ব্রাজিলিয়ান তারকাকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায় না প্যারিসিয়ানরা। এরইমধ্যে নতুন চুক্তিও স্বাক্ষর হয়ে গেছে।
নেইমার যে পিএসজির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ তার আরও একটি উদাহরণ একই ক্লাবে মেসির আগমন। প্রিয় বন্ধু ও সাবেক বার্সা সতীর্থকে প্যারিসে নেওয়ার পেছনে নেইমারের বড় ভূমিকা ছিল। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড নিজেও পিএসজিতে যাওয়ার পর একথা স্বীকার করেছেন।
ফুটবলের দুই মহাতারকাকে নিজেদের করে নেওয়ায় পিএসজিও আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভের মুখ দেখবে সন্দেহ নেই। এরইমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের লাভের খাতায় যুক্তও হয়ে গেছে। এখন বাকি শুধু ইউরোপ সেরার মুকুট। আর মেসি ও নেইমার দুইজনেরই আছে সেই মুকুট পরার অভিজ্ঞতা। কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটি তাই বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
এমএইচএম