ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে: ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে: ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ

ঢাকা: দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারকে (প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা) ঢেলে সাজাতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের (আইএইচই) অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা এবং করণীয় বিষয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

 

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা যে খারাপ এটা প্রথমে আমাদের পলিসি মেকারদের স্বীকার করতে হবে। এরপর স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। বর্তমান স্বাস্থ্য খাতের যে অবস্থা, তাতে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে কাজ হবে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে প্রয়োজন একটি মাস্টার প্ল্যান এবং এ প্ল্যান হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। ২০৪১ সালের আমাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটার সঙ্গে মিলিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা করে সেটা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান পরিকল্পনার সঙ্গে ভবিষ্যতের পরিকল্পনার সামঞ্জস্য থাকতে হবে।  

তিনি বলেন, আমাদের পলিসি মেকারদের মধ্যে স্বাস্থ্যখাত বোঝার বিষয়ে নানা রকমের দুর্ভেদ্যতা রয়েছে। পলিসি মেকাররা স্বাস্থ্য খাতকে কানার হাতি দেখার মতন দেখেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব কিংবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমন হতে হবে যিনি স্বাস্থ্যখাতের সব কিছু পুরোপুরি বোঝেন। কিন্তু সেই মন্ত্রী, সচিব, কিংবা পরিচালক নেই। এখন তিনজন তিন রকম বুঝলে হবে না, তিনজনের ভাবনা একই রকম হতে হবে। ‌ এ তিনজন যদি স্বাস্থ্যখাতের প্রকৃত চিত্রটা বোঝেন, তাহলে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন হবে।  

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, প্রাইমারি হেলথ কেয়ারকে আমাদের ঢেলে সাজাতে হবে। আমি আগেও বলেছি স্বাস্থ্যখাত নিয়ে আমাদের নানারকম তথ্য বিভ্রাট রয়েছে। কেউ ভাবছে কমিউনিটি ক্লিনিক করেই আমরা অনেক কিছু করে ফেলেছি। অনেক কিছু করে ফেলছি ভাবলে তো আর করার কিছুই থাকে না। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমনতো না যে, একটা ইনজেকশন দিয়ে দিলাম, আর সেটা স্মার্ট হয়ে গেল। কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট বানাতে হলে, তার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক যে চলছে না, সেটা আগে আমাদের স্বীকার করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিককে স্মার্ট প্রতিষ্ঠান করতে হলে, সেখানে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারের পাশাপাশি একজন প্যারামেডিক, একজন নার্স এবং প্রতিটা ইউনিয়নে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি দুই দিন অন্তর অন্তর সেই চিকিৎসক একদিন একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিকে বসবেন। কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বা অন্যান্য স্থানে প্রিভেন্টিভ কেয়ারে কাজে লাগাতে হবে। সরকারিভাবে ডাক্তার নিয়োগ দিলে সে হয়তো সেখানে থাকবে না। ডাক্তারদের নিয়োগ পাবলিক এবং প্রাইভেট পার্টনারশিপে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসকদের নিয়োগ নবায়নযোগ্য বাৎসরিক চুক্তিতে হবে। তার কর্মদক্ষতা এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের পারফরমেন্সের ওপর তাকে প্রণোদনা দিতে হবে। দেশে এখন অনেক চিকিৎসক কর্মহীন রয়েছেন। তাদের ভালো বেতন দিলে তারা গ্রামে গিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করবেন।

শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ড. আব্দুল হামিদ আরও বলেন, শহরে আমরা যেভাবে পাইলট আকারে আলো ক্লিনিক করেছি। শহরে আলো ক্লিনিকের বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। আলো ক্লিনিকে দুই শিফটে ডাক্তার নার্স, প্যারামেডিক এবং টেকনিশিয়ান কাজ করে পাশাপাশি ওষুধ এবং ডায়াগনস্টিক সেবা রয়েছে। শহরে দুই শিফট লাগবে তবে গ্রামে এক শিফট যথেষ্ট। তবে এই শিফট দুপুর দুইটা পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হবে। আলো ক্লিনিকে ডিজিটাল ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। প্রেসক্রিপশন কম্পিউটারাইজড করে দেওয়া হয়। শহরে আলো ক্লিনিককে যদি সরকার মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে শহরের স্বাস্থ্যসেবার সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচিকে সার্বজনীন করতে হবে। সরকারের পাবলিক ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট রুলের কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। হাসপাতালগুলোকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসিত করতে হবে। যেন তারা সরকারের বরাদ্দের বাইরে থেকেও কিছু টাকা এ ধরনের কর্মসূচি থেকে গ্রহণ করতে পারে। এ টাকা দিয়ে তারা ফ্যাসিলিটি ডেভেলপমেন্ট, স্যানিটেশন, ডায়াগনস্টিকের প্রি এজেন্ট ক্রয়সহ অন্যান্য কাজ করতে পারে। এটা করলে অটোমেটিক রেফারেল সিস্টেম চালু হয়ে যাবে।

বর্তমান স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা উল্লেখ করে ড. আব্দুল হামিদ আরও বলেন, সচিবের কাছে গেলে তার কাছে ক্ষমতা নেই, মন্ত্রীর কাছে গেলেও দেখা যায় তার ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা তাহলে কোথায়। সব ক্ষমতা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যদি প্রধানমন্ত্রীকে বলা যায়, আমাদের এটা করতে হবে, কিন্তু তার আগে মন্ত্রণালয়ের যে তিন চারজন শীর্ষ পদে আছেন, তারাই একমত হতে পারে না। সামনে যেহেতু নির্বাচন তাই এখনই ভালো সময় রয়েছে, নির্বাচনের সময় নানা ধরনের কমিটমেন্ট করা হয়। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যদি শুদ্ধভাবে কমিটমেন্ট করা যায় তাহলেই আমাদের জন্য আশার জায়গা আছে। তা না হলে স্বাস্থ্য খাতের জন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।