ঢাকা: চিকিৎসকদের সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি চেম্বার (ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস) করাকে অনগ্রসর ধারণা বলে উল্লেখ করে বিকল্প ভাবার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
চিকিৎসকদের সরকারি হাসপাতালে চেম্বারে ব্যক্তিগতভাবে রোগী দেখার সুবিধা ও অসুবিধা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ইনস্টিটিউশনাল প্রাইভেট প্র্যাকটিস বলতে বোঝায় সাধারণত হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার পর ব্যক্তিগত বা সম্মিলিতভাবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগী দেখা। বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসক সরকার নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার পর ব্যক্তিগত চেম্বার, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী দেখেন। ধারণা করা হচ্ছে, নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার পর সরকারি হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বিধান চালু করা হলে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি চালু করলে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর দৌরাত্ম্য কমবে। বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কনসালটেশন ফি ও টেস্টসহ অন্যান্য ব্যয় অত্যধিক। অধিকন্তু সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মূল্য হ্রাস এবং গুণগত মান উন্নত হতে পারে। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালসমূহ পূর্ণকালীন চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ পাবে।
এসব উদ্দেশ্য যথাযথভাবে অর্জনের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউশনাল প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালুর বিধান প্রণয়ন করা উচিত বলে একটি মত প্রচলিত আছে। এ ব্যবস্থা চালু হলে কর্মক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টায় চিকিৎসকদের উপস্থিতি কমতে পারে। ফলে নির্ধারিত কর্মঘণ্টায় সেবা নিতে আসা রোগীরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই সরকার একটি বিকল্প উপায় ভাবতে হবে।
সরকারি হাসপাতালে বেসরকারিভাবে রোগী দেখার বিকল্প কেমন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার একটা নির্দিষ্ট বেতন ভাতা পায়। তাদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী দেখার বিষয়টি নির্ধারিত করে দিতে হবে। সে যদি সার্জন হয় তাহলে কমপক্ষে প্রতিদিন দুই বা তিনটা অপারেশন করবে। নার্সদেরকেও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হবে। চিকিৎসকদের সরকারি ডিউটি টাইম হবে সকাল ৯টা থেকে ৫টা।
অফিস টাইমে তার যদি ২০ জন রোগী দেখার কথা থাকে, সে তিনি যদি এর বেশি রোগী দেখেন তাহলে তাকে রোগী প্রতি বাড়তি টাকা দিতে হবে। এই অর্থের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক পাবে। অবশিষ্ট অর্থের একটি অংশ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেবাসহ চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। অন্য অংশ প্রশাসন, সহায়ক স্টাফসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তির মধ্যে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বণ্টন করে দিতে হবে। এতে করে বিকেলে বেসরকারিভাবে রোগী দেখার তাড়া থাকবে না এবং সরকারি হাসপাতালে বসেই সে অফিস টাইমেই বাড়তি টাকা আয় করতে পারবে। এটা বর্তমানে যে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু রয়েছে সেরকম নয়। বর্তমানে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস একটি ব্যাকওয়ার্ড (অনগ্রসর) ধারণা।
এ স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ বলেন, বর্তমানে কেউ হয়তো দিনে ১০০ রোগী দেখছেন; আবার কেউ হয়তো দু-চার জন রোগী দেখছেন। যিনি ১০০ রোগী দেখছেন, তিনি কোয়ালিটি রক্ষা করতে পারছেন না। আবার যিনি দুজন রোগী দেখছেন, তিনি ফাঁকি দিচ্ছেন। যদি নিয়ম করা হয় প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন রোগী দেখতে হবে, সবাইকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় দিতে হবে। সে সময়টি আবার রেকর্ড করা হবে। এখানেই ডিজিটালাইজড করতে হবে। রোগী যখন চেম্বারে ঢুকবেন, তখন ওই রোগীর আইডি অনুযায়ী লগইন করলেই সময় কাউন্ট হবে। তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে লগইন করলেই সময় শেষ বলে গণ্য করা হবে। এতে ডাক্তার রোগীকে কত সময় দিল সেটাও রেকর্ড হয়ে যাবে। তার চিকিৎসাপত্রও রেকর্ড থাকবে। এই রেকর্ড থেকেই অনেক কিছুই মনিটর করা সম্ভব।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ আরও বলেন, এমন নিয়ম করা উচিত, চিকিৎসক প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী দেখবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত দেখলে তাকে রোগী প্রতি টাকা দেওয়া হবে। এটা হাসপাতালের অফিস সময়ের ভেতরই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্মঘণ্টায় সেবা নিতে আসা রোগী ও নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার পর সেবা নিতে আসা রোগীদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফির মাধ্যমে একই মানের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে, চিকিৎসকেরাও অধিক আগ্রহী হবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবাইকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত চিকিৎসা প্রদানে এ বিকল্প উপায়ই বেশি কার্যকর হতে পারে। তাই সরকারকে এ বিকল্প ব্যবস্থা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
আরকেআর/এমজে