ঢাকা: বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গরিব ও দুস্থ ৩৮ জন রোগীর বিনামূল্যে চোখের অপারেশন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাবরিনা সোবহান রোডে অবস্থিত বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে দিনব্যাপী এ ফ্রি অপারেশন করা হয়।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক পরিচালক ও ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. সালেহ আহমদের তত্ত্বাবধানে এ সার্জারিতে অংশ নেন ডা. রুবিনা আক্তার এবং ডা. তাসরুবা শাহনাজ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২১ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারীসহ মোট ৩৮ জন রোগীর চোখ অপারেশন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৫ জনের চোখের ছানি ও তিনজনের চোখের মাংসের বৃদ্ধি অপারেশন করা হয়েছে।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক পরিচালক ও ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর সালেহ আহমদ বলেন, ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে রোগীদের বিনামূল্যে চোখ পরীক্ষা ও অপারেশনের সেবা কেউই দিচ্ছে না। দেশে একমাত্র বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালই এ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে রোগীদের চোখ পরীক্ষা করি। সেখানে যাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। আর যাদের অপারেশন প্রয়োজন তাদের আমরা আমাদের এখানে নিয়ে আসি। আমরা একেক ধাপে ৪০ থেকে ৫০ জনের চোখের অপারেশন করি। এসব রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে থাকতে ও খেতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকে আমাদের চক্ষু ক্যাম্পিংয়ের জন্য অনুরোধ করেন। আমরা তাতে সাড়া দেই। সর্বশেষ গীতাঞ্জলি জুয়েলার্সের মালিক পবন বাবু আমাদের অনুরোধ করেছিলেন কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিণারায়নপুরে আই ক্যাম্পিং করার জন্য। আমরা সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাকে সাহায্য করি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা সেখানে ক্যাম্প করে দুই হাজার ১০০ জন রোগী দেখেছি। সেখানে আমরা ২৭০ জন রোগীকে অপারেশনের জন্য ঠিক করে এসেছি। তাদের মধ্যে প্রথম ধাপে এবার ৪০ জন রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের অপারেশন করেছি।
প্রফেসর সালেহ আহমদ বলেন, রোগীরা বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা ও থাকা-খাওয়ার সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দিত। কারণ বাইরে এ অপারেশন করলে আট থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে এ ক্যাম্পের মাধ্যমে একেবারেই বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তাই তারা খুবই আনন্দিত।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিণারায়নপুর ইউনিয়ন থেকে ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চোখের ছানি অপারেশন করতে আসা আমির হামজা বলেন, চোখের ছানি পড়ার কারণে আমি ঠিকমতো দেখতে পারতাম না। এখন চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে। কোনো ধরনের অসুবিধা হয়নি। অপারেশনের আগে ভয় লাগছিল। কিন্তু অপারেশনের সময় কিছুই টেরই পাইনি। এখানের ডাক্তার থেকে শুরু করে সবাই খুবই আন্তরিক।
একই এলাকা থেকে চোখের ছানি অপারেশন করতে আসা দিন মজুর নাদের আলী বিশ্বাস বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি আর আমার স্ত্রী এ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করেছি। ভালো চিকিৎসা পাওয়ায় এখন আবার এলাম। এ হাসপাতালের সবার ব্যবহার খুবই ভালো।
আরেক রোগী মায়া রানী সাহা বলেন, বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতাল আমাদের বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করে যে উপকার করেছে, সেটা কখনো ভুলবো না। এর প্রতিদানও কোনোদিন আমরা দিতে পারবো না। চার-পাঁচ বছর আগে এভাবে ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন আমার ডান চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। এর আগে আমি ডান চোখে দেখতে পারতাম না। এখন আবার বাঁ চোখের ছানি অপারেশন করবো। বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালের এ উদ্যোগে সাধারণ মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছে। তাদের এ উপকার আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ম্যানেজার (এইচ আর অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, গরিব, দুস্থ ও অন্ধ রোগীদের চক্ষু চিকিৎসার সাহায্যার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুস্থদের সেবায় আগে থেকেই এ ধরনের প্রক্রিয়া চলে আসছে। সারা দেশে বিনামূল্যে এ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত আমরা ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার ৩৪০ জনের বেশি রোগীর অপারেশন করেছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিণারায়নপুরের দোয়ারকা দাস আগারওয়ালা মহিলা কলেজে এ ক্যাম্পিং হয়। সেখানে যাদের অপারেশন প্রয়োজন তাদেরই প্রথম ধাপের আজকে অপারেশন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
এসসি/আরআইএস