ঢাকা: দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতি হলেও এখনও হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণার অবস্থা তৈরি হয়নি বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, যে গ্রুপটা বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বয়স সীমা হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ বছর। আর এদের বেশিরভাগই কর্মজীবী মানুষ।
শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবরও নেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তারা কর্মস্থল থেকে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীরা বলছেন বিভিন্ন পাড়ার অলিগলিতে সিটি করপোরেশন মশার স্প্রে কম করছে, সেটা বাড়ানোর প্রয়োজন। বিভিন্ন অফিস এবং মিল,কারখানাগুলোতে মশার স্প্রে তেমনভাবে হচ্ছে না, যে কারণে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তাদের বলব আপনারা এ বিষয়ে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেবেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না বাসা বা অফিসে গিয়ে স্প্রে করা। তাই এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সব ক’য়টি হাসপাতালে প্রায় ছয় হাজারের একটু বেশি ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকায় আছে তিন হাজার রোগী এবং এর বাইরে আছে আড়াই হাজার। ঢাকা শহরে এখন ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি হাসপাতাল এবং মুগদা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। এখানে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেশি। আমাদের দেশে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়তির দিকে। বর্তমানে ১৪০টি দেশে ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে। আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি ডেঙ্গুরোগী সংখ্যা বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় আমাদের দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে এখনও ডেঙ্গুরোগীর পরিমাণ সেভাবে বাড়েনি। ডেঙ্গুরোগী বাড়ুক সেটা আমরা চায় না।
তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরসহ সারা দেশে সাড়ে ২৮ হাজার ডেঙ্গুরোগী আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগের সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার। আর ঢাকার বাইরে অন্য জেলাগুলোতে সাড়ে ১০ হাজারের একটু বেশি। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৫৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় মারা গেছে ১২২ জন। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জন। ঢাকায় ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা যেমন বেশি সে তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। আমাদের দেশে এখন ৬০ জেলায় ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে।
মুগদা হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় মুগদা হাসপাতাল যথেষ্ট কাজ করছে। এখানে রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে মুগ্ধ হাসপাতালে প্রায় ৫শ ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন। মুগদা হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১শ জনের বেশি ডেঙ্গুরোগী ভর্তি থাকে। মুগদা হাসপাতাল এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ডেঙ্গুরোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মুগদা হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৪৩ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমি এখানে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, মুগদা হাসপাতালে ওষুধ থেকে শুরু করে কোনো কিছুর কমতি নেই। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার সেলাই প্রয়োজন হয় এ হাসপাতালে। এখানে এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সংখ্যা ৫২টি।
তিনি বলেন, মুগদা হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় হাজারের বেশি ডেঙ্গু টেস্ট করা হয়। আগে ডেঙ্গুর টেস্টের মূল্য ছিল ১শ টাকা। সেই জায়গায় এ বছর আমরা ৫০ টাকা করেছি। এছাড় প্রাইভেট হাসপাতালেও টেস্টের একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রাইভেটে ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য প্রায় ৩শ টাকা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান প্রমুখ
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
ইএসএস/এএটি