ঢাকা: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর বিএমএ ভবনে ‘সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালার শেষদিনে বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয় তুলে ধরেন।
তারা বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়ের প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে দুজন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। সংকট মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। তবে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ এক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৭ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালা থেকে জানানো হয়, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাতরণ দণ্ডনীয় অপরাধ এবং একইসাথে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেটে বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ২০১৭ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়, যার ৫৯ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেডেড উপকরণে তৈরি কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মোবিল বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত ড্রাম ভোজ্যতেল পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। তাই ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্যতেল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। এছাড়া এসব পুরাতন ড্রামে কোনো প্রকার লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। যা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও বাধা সৃষ্টি করে। অস্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
ড্রামে বাজারজাতকৃত ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এই নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে। ভোজ্যতেল খাদ্যপণ্য বিধায় এটি নিরাপদভাবে (প্যাকেজিং, মোড়কাবদ্ধভাবে) ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট নিরাপদ খাদ্য আইন, বিএসটিআই আইন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা প্রভৃতির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে একযোগে কাজ করতে হবে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর খোলা ভোজ্যতেল পরিহার করতে ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একইসাথে, দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রাম ও ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড আশেক মাহফুজ, দৈনিক যুগান্তরের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি অ্যাডভোকেসি বাংলাদেশ-এর কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৩
আরকেআর/এমজেএফ