ময়মনসিংহ: চিকিৎসাসেবায় দেশসেরা খ্যাতি পাওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থী রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সূত্র থেকে জানা যায়, এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে হৃদরোগীদের শয্যা রয়েছে মাত্র ৭১টি। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকে ২৮০ জন। ফলে নির্ধারিত শয্যা ছাড়িয়ে সেবাপ্রার্থী রোগীরা ছড়িয়ে পড়েছেন হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির সামনের অংশসহ প্রবেশ পথগুলোতেও। কিন্তু রোগীদের এই বাড়তি চাপ সামলাতে ১৯৭২ সালের পর বাড়ানো হয়নি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিতে নেই কোনো প্রফেসর পদ। ফলে প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্র ও চিকিৎসক সঙ্কটে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। এতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন হৃদ্রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এই অবস্থায় হাসপাতালের প্যাথলজিতে ইকো পরীক্ষা করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা। এ সুযোগে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি প্যাথলজিগুলো।
ভুক্তভোগীরা জানায়, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো জটিল রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাকে ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি (হৃৎপিণ্ড পরীক্ষার রোগনির্ণয় পদ্ধতি) করার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে পরীক্ষাটির মান বিবেচনায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে করারও পরামর্শ দেন তারা।
কিন্তু হাসপাতালের নতুন ভবনের চার তলা কার্ডিওলজি বিভাগের ইকো কক্ষে গেলে কর্তব্যরত কর্মচারীরা পরীক্ষার সিরিয়াল দেন দুই থেকে তিন মাস পর। এই অবস্থায় রোগী এবং স্বজনদের প্রশ্ন, ইকো পরীক্ষা করতে যদি এতো দিন সময় লাগে। তবে চিকিৎসা হবে কখন?
নগরীর মাসকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোছা. লিপি (৪৫) নামের এক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, কিছুদিন ধরে তিনি হৃদ্রোগ এবং হাড় ব্যথায় ভুগছি। এ কারণে সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাও নিচ্ছি। চিকিৎসকেরা আমাকে কালার ডপলার ইকো করে দেখা করতে বলেছেন। এরপর পহেলা এপ্রিল মমেক হাসপাতালে ইকো করতে এলে তারা আমাকে আগামী পহেলা জুন সকাল ৮টায় যেতে বলেছেন। এই অবস্থায় আমার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
একই ধরনের ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে এই হাসপাতালের ভর্তি ও চিকিৎসা নেওয়া আরও কয়েক শত রোগী।
ভোগান্তির কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালের সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দিনের সময়ে অর্থাৎ গত তিন বছর আগে কার্ডিওলজি বিভাগে ইকো পরীক্ষার মেশিন ছিল তিনটি। কিন্তু বর্তমানে মাত্র একটি মেশিনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ইকো পরীক্ষার কাজ। ফলে রোগীদের ভিড়ে এই দীর্ঘ সিরিয়ালের সৃষ্টি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা।
কার্ডিওলজি বিভাগের কর্মচারী মো. কামাল জানান, ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছরে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সাত দফা হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার কথা জানানো হয়। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধান ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, বর্তমানে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রফেসর পদ নেই। তবে সম্প্রতি চারটি নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই পদগুলো পূরণ হবে। তাছাড়া বর্তমানে রোগীর চাপ বেশি। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ইকো পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বিভাগে আগে তিনটি ইকো মেশিন ছিল, বর্তমানে মাত্র একটি মেশিন সচল রয়েছে। এটা দিয়েই কাজ চলছে। ফলে রোগীদের চাপে সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লেগে যায়।
এ বিষয়ে হাসপাতালে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে ইকো মেশিনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৪
এসএম