ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মজুত সংকটে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৪
মজুত সংকটে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী প্রতীকী ছবি

ঢাকা: পরিবার পরিকল্পনা সেবার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করে থাকে। তবে গত আট মাস ধরে ওষুধসামগ্রীর মজুত সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ ১১ দাতা সংস্থার বিনিয়োগ করা সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ এ কর্মসূচি।

 

মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি জায়গায় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মজুত সংকট বিরাজ করছে। ফলে সরকারের এ সেবাখাতের অগ্রগতি হুমকির মুখে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিগগিরই মজুত সংকটের সমাধান হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি উপজেলায় কনডম, খাবার বড়ি, ইনজেকশনের মতো পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য ওষুধের মজুত শূন্যের ঘরে রয়েছে। এতে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর জরুরি এ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। গত আট মাস ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ওষুধসামগ্রীর মজুত শূন্যতা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ওষুধসামগ্রী যথাযথভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরবরাহ করতে না পারায় অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে মানিকগঞ্জ জেলার এক কর্মকর্তা জানান, গত চার মাস ধরে কর্মীদের কাছে কোনো ইনজেকশন ও কনডম নেই। এ ছাড়া খাবার বড়িও প্রায় মজুতশূন্য। জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ করা না গেলে, এর প্রভাব হয়তো তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটবে।
জনসংখ্যাও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। অর্থাৎ টিএফআর বাড়বে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিসমূহের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম)। সারাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহীতার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ সক্ষম দম্পতি এ পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। অধিদপ্তরের সরবরাহ শৃঙ্খলের তথ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে খাবার বড়ির চাহিদা ৬ মিলিয়ন সাইকেলের বেশি।  

খাবার বড়ির (তৃতীয় প্রজন্ম) বর্তমান মজুত মাত্র ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন সাইকেল। বর্তমান যে মজুত আছে, তা দিয়ে ১ দশমিক ৩ মাস চলবে। এরইমধ্যে ২৮৭টি উপজেলায় মজুত শেষ। এ ছাড়া ১২৭ উপজেলায় যেকোনো সময় খাবার বড়ির (তৃতীয় প্রজন্ম) মজুত শেষ হবে।  

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মজুত ৬ মাসের নিচে নামলেই বিক্ষিপ্তভাবে মজুতশূন্যতা দেখা দেয়। ২৩টি উপজেলা স্টোরে কনডমের মজুদ শেষ, ৮৭টি উপজেলা স্টোরে মজুত শেষ পর্যায়ে।

দেশের প্রায় কোনো পরিবার পরিকল্পনা স্টোরেই (৪৯৫ উপজেলা) জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন নেই। প্রতিমাসে প্রায় ৯ লাখ ভায়ালের বেশি ইনজেকশনের চাহিদা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের অত্যন্ত সফল এ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করে দেশে ও বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না, তা চিহ্নিত করে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি রাখে।

মজুত সংকটের কথা স্বীকার করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আবদুস সালাম খান বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় স্টক (মজুত) আউট এবং বেশ কিছু জায়গায় স্টক শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে বেশ কিছু পণ্য আমাদের হাতে এসেছে। সরবরাহ শুরু হলে সংকট কমতে শুরু করবে।  

তিনি বলেন, কয়েকটি সামগ্রীর ক্ষেত্রে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। এ ছাড়া রেভিনিউ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সবমিলিয়ে আশাকরি দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) মতিউর রহমান বলেন, অধিদপ্তরের মজুত সংকটের সমাধান শিগগিরই হবে। এরইমধ্যে মাঠপর্যায়ে মালামাল পৌঁছে গেছে। আশা করি জুন মাসের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।

তিনি জানান, ৪৫ মিলিয়ন সাইকেল খাবার বড়ি কেনার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আশা করি জুন মাসের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।

সংকটের বিষয়টি নজরে আনলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর সংকটের বিষয়টি আমার নজরে রয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কোথাও যেন সংকট না হয়, সেজন্য দ্রুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৪
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।