ঢাকা: ইউনিসেফের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) থেকে প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী বাতাসের মানের উদ্বেগজনক অবস্থা তুলে ধরেছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ)-২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্ব-পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলোতে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ইউনিসেফ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বায়ুদূষণজনিত রোগের শিকার হয়ে থাকে বেশি। এর প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার দেখা দেয়।
বাংলাদেশ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে, লোয়ার-রেসপাইরেটরি-ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণে পাঁচ বছরের কমবয়সী যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী বায়ুদূষণ। ২০২১ সালে, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে ১৯ হাজারেরও বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২১ সালে বায়ুদূষণ সম্পর্কিত কারণে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী সাত লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। সারা বিশ্বে এ বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ‘অপুষ্টির’ পরই ‘বায়ু দূষণ’ দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আফ্রিকা ও এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে; দূষিত জ্বালানি ব্যবহার করে ঘরের ভেতরে রান্না করাই ছিল এ বায়ুদূষণের কারণ।
জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, লাখ লাখ মানুষেরা, বিশেষ করে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নিম্নমানের বাতাসের ক্ষতিকর প্রভাব শিশুদের ওপরই বেশি দেখা যায়; এর প্রভাবে তারা হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়। শুধু আজ আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও বাতাসের গুণগত মান উন্নত করতে টেকসই সমাধান বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ওজন গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে, যা বায়ু দূষণজনিত রোগের অন্যতম কারণ। ২০২১ সালে, বিশ্বব্যাপী ওজন-সম্পর্কিত ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিসঅর্ডার (সিওপিডি) জনিত মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক (৫০ শতাংশ) ঘটেছে ভারতে (২৩৭,০০০ মৃত্যু), চীনে (১২৫,৬০০ মৃত্যু) এবং বাংলাদেশে (১৫,০০০ মৃত্যু)।
শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের ভয়াবহ প্রভাব বেশ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। বায়ুদূষণের ফলে শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায়; বায়ু দূষণের ক্ষতিকর এ প্রভাব, শিশু মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেই শুরু হয়ে সারাজীবনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা শ্বাস নেবার সময় তাদের শরীরের ওজনের অনুপাতে বেশি বাতাস গ্রহণ করে; দূষিত বায়ুর সঙ্গে তারা দূষিত সব উপাদানও গ্রহণ করে থাকে; যার মারাত্মক প্রভাব পরে তাদের বিকাশমান ফুসফুস, শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর।
বায়ুদূষণজনিত এসব রোগের প্রভাব ও প্রাদুর্ভাব কিন্তু বিশ্বব্যাপী সমান নয়। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বজুড়ে মানুষের ইসকেমিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বায়ুদূষণের অবদান গড়ে ২৮ শতাংশ হলেও ফিনল্যান্ড, নরেওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে এর হার ১০ শতাংশের; অন্যদিকে পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর হার (যেমন নাইজেরিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও বাংলাদেশ) ৪০ শতাংশের বেশি।
এ বছরের এসওজিএ প্রতিবেদনটিতে বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব এবং এ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো যখন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিমালাকে আরও উন্নত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ তার জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বায়ুদূষণ মোকাবিলায় একটি বড় চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৪
টি আর/এসআই